নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: গতকাল উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া এলাকায় প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। যার নাম আবুবকর। বয়স (১৪)। কারো সংস্পর্শে না গেলেও কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কেউ বলতে পারে না। সে পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর মাদ্রাসায় পড়তো। গত কয়েকদিন আগে তার বাবা তাকে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে তাদের পরিবারের তৈরী নতুন বিডিংয়ের ছাদ ঢালাই দেখার জন্য। সপ্তাহ খানিক আগে তার বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে যায় তাদের পুকুরে। এরপর থেকে জ্বর ঠান্ডা। ফার্মেসী থেকে জ্বরের কথা বলে ঔষধ কিনে খাওয়ালেও জ্বর সারেনি। বাধ্য হয়ে নিয়ে যায় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে ডাক্তার তাকে দেখে কয়েকটা পরিক্ষা দেন পরিক্ষা করানো হয় হাসপাতালের গেইটের সামনে নিরাময় ক্লিনিকে। রির্পোট নিয়ে ডাক্তারকে দেখানোর পর কোন উপসর্গ ধরা না পরায় তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার করোনা নমুনা পরিক্ষা করে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। পরে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আবু বক্করের পরিবারের সাথে কথা বলে তাকে এামুলেন্সে করে পাঠানো হয় কুয়েত মৈত্রী হাপাতালে। এ্যাম্বুলেন্স বাড়ির সামনে যেতেই শুরৃ হয় আবুবকরের মা বাবার আহাজারি। একমাত্র ছেলেকে অনিশ্চয়তার পথে পাঠাতে তাদের বুক ফেটে কান্না করছিল। ছেলেকে শেষ বিদায় জানাতে চাইনি আবুবকরের মা বাবা। শুরু প্রশ্ন করছিল সবাইকে আমার ছেলেকি ফিরে আসবে? বাবা মাকে সান্তনা দিতে উপস্থিত সবাই হ্যা সম্মোধন করলে এ যে এক অনিশ্চয়তার পথ তা সবাই জানতো। তারপর আবুবকরের বাবা মাকে সান্তনা দিতে অপ্রিয় কথাটিও উচ্চারন করতে হয়ে লুকানো কষ্টের মধ্যে। এামুলেন্সে করে যখন আবুবকরকে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল তখন তার মার কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছিল। আর তার বাবার বুকফাটা কাঁন্না সবাইকে কাঁদিয়ে ছিল চোখের আড়ালে। আবু বক্করের বিদায়ের শেষ বেলায় উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম। তিনি আবুবকরকে বিদায় দিয়ে এসে তার বুকের অব্যক্ত ব্যাথা আর চোখের আড়ালে লুকানো কান্না তুলে ধরেছেন তার ফেসবুকে। সেখানে তিনি যা লিখেন তা হুবহুু তুুুুলে ধরা হলো:
আজ আমাদের Day-1.
Novel Coronavirus এ আক্রান্ত বৈদ্যের বাজারের আবু বকর নামের ১৪ বছর বয়সের এক কিশোরকে দিয়ে আমাদের শুরু হলো। জানিনা এর শেষ কোথায়!
আবু বকর এর বাবার বুকের ভেতর থেকে ফুপিয়ে উঠা কাঁন্নার শব্দ এখনো কানে বাজছে। ছেলেকে বাঁচাবার জন্য তার মায়ের সকরুন আহাজারি, বুক ভাসানো অশ্রুজল কোন কিছুরই কোন উত্তর দিতে পারিনি আমরা।
“আমার ছেলেটাকে বাঁচান স্যার” -একজন মায়ের এমন কাকুতির কি উত্তর হয় সেটা সত্যি আমার জানা নেই। কি করে বুঝাই এ এক এমনি ভয়ংকর মহাব্যাধি,জল স্থল আর মহাকাশকে পদাবনত করা আমেরিকা ইউরোপও যে এর কাছে মাথা নত করে।
মাত্র ১৪ বছরের এই দূরন্ত ছেলেটি যে কিনা কখনো একা থাকেনি,আজ তাকে একা একটি এম্বুল্যান্স এ পাঠিয়ে দেয়া হলো কুয়েত মৌত্রি হাসপাতালে।
বুক ফেটে যাচ্ছিলো তার মায়ের, বাবার মাথায় যেনো পুরো আকাশ ভেংগে পড়ছিলো!!
আর কি কখনো এই লক্ষ্মী ছেলেটা ফিরবে ঘরে? মায়ের কাছে ধরবে বায়না? আর কি কোনদিন দেখা হবে আবু বকরের সাথে তার বাবার, তার মায়ের??
হয়ত….হয়তবা না…
হাত জোড় করে অনুরোধ করছি প্রিয় সোনারগাঁবাসী ঘরে থাকুন…সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন…আপনার প্রিয়জনের জন্য হলেও…