আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাগরিকত্বের কোনও কাগজপত্র নেই। জন্মসূত্রেই তিনি ভারতীয় নাগরিক। তথ্য অধিকার আইনে (আরটিআই) মোদির নাগরিকত্ব নিয়ে এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। তবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এই উত্তর অস্পষ্ট বলে দাবি করেছেন সচেতন মহল।
২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) পাশ হয়। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের পর তা বিলে পরিণত হয়। একইসঙ্গে সংসদে দাঁড়িয়ে দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর থেকেই বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। জানা যায়, নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হলে নির্দিষ্ট নথি দেখাতে হবে। নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে স্লোগান ওঠে, ‘কাগজ আমি দেখাব না’। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নথি না দেখানোর দাবিতে বিরোধীদলগুলি আন্দোলনে নামে। তারপরেও সাধারণ মানুষের ভয় কাটেনি। তারা কীভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণ করবেন, তা ভেবে হন্যে হচ্ছেন।
এর পরেই ১৭ জানুয়ারি শুভঙ্কর সরকার নামে এক ব্যক্তি আরটিআই-এর মাধ্যমে জানতে চান প্রধানমন্ত্রীর নাগরিকত্বের কাগজপত্র আছে কি না।
এর জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সচিব প্রবীণ কুমার জানান, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী জন্মসূত্রেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় নাগরিক। তাই নথিভুক্তকরণের মাধ্যমে ভারতীয় হলে যে সার্টিফিকেট মেলে, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকার প্রশ্নই উঠছে না।
তবে এমন জবাবে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে দাবি করেছেন ওয়াকিবহাল মহল। এছাড়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যেই এই তথ্য চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে দেশটিতে রাজনৈতিক মহলে।
সমালোচকদের ভাষ্য, খোদ প্রধানমন্ত্রীর নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট নেই। অথচ তিনি জন্মসূত্রে ভারতীয় বলে দাবি করেন। এতে করে আমজনতার কাছে ভারতীয় হওয়ার প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে। এ কেমন ধরণের আইন?
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যেই এই তথ্য চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। বিশেষত, আসামে কথিত নাগরিকপঞ্জিতে ঠাঁই না পাওয়ায় বহু মানুষকে বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এরপর নাগরিকত্বের নথি চাওয়া হলে আমজনতাও যদি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের দাবি তোলে, তা কি গ্রাহ্য হবে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে একাধিক বার জানিয়েছে, ২০১১ ও ২০১৫ সালের জাতীয় জনগণনা পঞ্জি প্রক্রিয়ার পর দেওয়া পরিচয়পত্র যাদের কাছে নেই তারা নাগরিক নন। ভারতীয়দের একটি বড় অংশের কাছেই সেই পরিচয়পত্র নেই। ফলে বিরোধীরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে, তাহলে বিজেপি কাদের ভোটে জিতলো? অনাগরিকদের ভোটে? বিজেপি-র পক্ষ থেকে অবশ্য এর কোনও উত্তর মেলেনি।
সূত্র: আনন্দবাজার।