নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: সোনারগাঁ উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় অমান্তিকা নামের প্রসুতির মৃত্যুর ২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা নেননি সোনারগাঁ থানা পুলিশ। তবে, বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষ মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছে বলে জানান থানার ওসি। তবে, অমান্তিকার স্বামী পিন্টু মিয়া জানান আমি মামলার জন্য থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সমঝোতার চেষ্টা কে বা কারা করছে তিনি কিছুই জানে না বলে জানান।
জানাগেছে, গত শুক্রবার বিকালে তার স্ত্রী অমান্তিকার প্রসব ব্যাথা উঠলে মোগরাপাড়া চৌরাস্তার সোনারগাঁ শপিং কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত গাইনি ডাক্তার নুরজাহান তাকে সিজার করতে হবে জানান। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৩ হাজার টাকায় অমান্তিকাকে সিজার করার চুক্তি করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অমান্তিকাকে সিজার করেন এবং একটি কন্যা সন্তানের জম্ম দেন। এরপর ডাক্তার নুরজাহার তাড়াহুড়ো করে আরেকটি অপারেশন আছে বলে সাথে থাকা নার্সকে সেলাই করার জন্য নির্দেশ দিয়ে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
এদিকে, সেলাইয়ের পর রাত যত বাড়তে থাকে অমান্তিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তার পেট ব্যাথাসহ কয়েকবার বমি করেন। পরে হাসপাতালের নার্সরা অমান্তিকা শারীরিক অবস্থার কথা ডাঃ নুরজাহানকে জানালে তিনি শনিবার সকালে অমান্তিকাকে নারায়ণগঞ্জ কেয়ার হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে অমান্তিকাকে ২ দফা অপারেশন করেন নুরজাহান। অপারেশন শেষে অমান্তিকার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে রোগীর স্বজদের জানানো হয় রোগীর কিডনিতে সমস্যা আছে তাকে দ্রুত ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। শনিবার রাতেই স্বজনরা রোগীকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, ভুল চিকিৎসায় মৃত অমান্তিকাকে গতকাল সোমবার বিকালে বড় সাদিপুর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রাতে অমান্তিকার স্বামী পিন্টু মিয়া সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে, অমান্তিকার মৃত্যুর ২দিন পেরিয়ে গেলেও সোনারগাঁ থানা পুলিশ এখনো মামলাটি গ্রহন করেননি বলেন জানান পিন্টু মিয়া। কি কারনে মামলা নিচ্ছেন না তা তিনি জানে না। তিনি আরো জানান, মামলাটি থানায় করার দায়িত্ব দিয়েছেন আরিফ নামের বিশেষ পেশার তার খালু আরিফকে ও তার মামা ফারুককে।
তবে বিশ্বত্বসূত্রে জানা গেছে, গতকাল অমান্তিকা মারা যাওয়ার পর থেকে একটি চক্র বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। মামলাটি যাতে না হয় সেজন্য অমান্তিকার স্বামী ও পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ করেছে অমান্তিকার স্বজনরা। তারা জানান, গতকাল বিকাল থেকে বিশেষ পেশার কিছু লোক আমাদের লোকজনদের বলছে তুরা হাসপাতালে ভাংচুর করেছিস সেজন্য থানায় মামলা হয়েছে পুলিশ রাতে তোদের ধরতে অভিযান চালাবে তোরা বাড়িতে থাকিস না। আর তোদের রোগী যে মারা গেছে তোরা কিছুই করতে পারবিনা। হাসপাতাল কর্তপক্ষ টাকা দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। বাঁচতে চাইলে তোরা আপোষ হয়ে যা। নয়তো কপালে খারাবি আছে। এর আগেও তোদের মতো কত লোক এরকম করে বিপদে পড়েছে। তোরা নতুন করে বিপদে পরিশনা।
পিন্টুর মামা ফারুক জানান, সকালে তারা অমান্তিকা মৃত্যুর ঘটনায় ডাঃ নুরজাহানসহ কয়েকজনকে আসামী করে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় হাসপাতালের মালিক জয় মিয়া আগে থেকেই ওসির রুমে বসে আছেন। এরপর ঢুকের আওয়ামীলীগ নেতা নিলু কামাল। তারা অমান্তিকার মামা ফারুককে কেন থানায় এসেছে জিঞ্জেস করে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আপোষ মিমাংশার কথা বলে। তখন সোনারগাঁ থানার ওসিও তাদের সাথে সুর মিলিয়ে আপোষ-মিমাংশার কথা বললে ফারুক থানা থেকে বের হয়ে বাড়িতে চলে যান।
অমান্তিকার স্বামী পিন্টু মিয়া জানান, আমার স্ত্রী ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে আমি এ ডাক্তারের শাস্তি চাই। আমি টাকা পয়সা চাইনা, যারা আমার সন্তানটাকে এতিম করে দিয়ে আমি শুধু তাদের শাস্তি চাই। পুলিশ যদি মামলা না নেয়ে আমি আদালতে গিয়ে মামলা করবো।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় দু’পক্ষই হাসপাতালে এসেছে। তারা একটা সমঝোতার চেষ্টা চলেছে। মৃত্যুর ঘটনা সমঝোতায় মাধ্যমে মিমাংশা হয় কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান হয় না আবার হয়ও।