নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: গিয়াসউদ্দিন (৬৫) সোনারগাঁও পৌরসভার বালুয়াদিঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা। পেশায় একজন ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা। ১ মেয়ে ৩ ছেলে স্ত্রী নিয়ে তার বসবাস। ছেলে মেয়ে সবাইকে বিয়ে দিয়ে তিনি স্ত্রী নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে বসবাস করেন। চার ছেলের যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হলেও গিয়াসউদ্দিন নিজেই নিজের ব্যবসা পরিচালনা করে সংসার চালান। সংসার চালিয়ে বছরে যা সঞ্চয় করে তা দিয়ে প্রতি ঈদুল ফিতরে এলাকার গরীব দু:খীদের মাঝে ঈদ সামগ্রী তুলে দেন। এতেই তার সুখ।
গিয়াসউদ্দিন জানান, তিনি পৌরসভার আদমপুর বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে তার ব্যবসা। সেখানে তিনি সকালে বেলা শাক সবজি বিক্রি করেন। এরপর সারাদিন মৌসুমী ফল বিক্রি করেন। সারাদিনে যা আয় হয় তা দিয়ে তার স্বামী স্ত্রী’র সংসার ভালো ভাবে চলে যায়। তিনি জানান, তার চারটি ছেলে এক মেয়েসহ স্ত্রী নিয়ে সংসার ছেলেরা সবাই বিবাহ করে যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মেয়েটাকেও বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা সবাই স্বল্প আয়ের কাজ করেন। সে জন্য গিয়াসউদ্দিন নিজে ব্যবসা করেই সংসার চালান। সাথে ছেলেদের দেখাশোনা করেন। তবে ছেলেরা তাকে কাজ করতে নিষেধ করলেও তিনি শুনেন না। তিনি বলেন আমি এখনও কর্ম করে খেতে পারি সে জন ব্যবসা করি। যখন পারবোনা তখন ছেলেদের সংসারে যাবো। ব্যবসা করে তিনি যা রোজগার করেন তার একটি অংশ রেখে দেন এলাকার গরীব অসহায়দের জন্য। প্রতি বছর ঈদ উল ফিতর আসলে সংসার চালিয়ে যে টাকা সঞ্চয় করেন সে টাকা দিয়ে তিনি এলাকার অসহায় পরিবারের লোকজনকে ঈদ সামগ্রী প্রদান করেন। এবারও তিনি এলাকার অসহায় ৫০জন অসহায় পরিবারের মাঝে চাল, চিনি সেমাই, তেল ও লবন বিতরন করে আসছেন। গিয়াসউদ্দিন জানান, গত বছর তিনেক আগে তার মা মারা যান। তার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি তার ব্যবসা থেকে যে টাকা সঞ্চয় করেন সে টাকা দিয়ে এলাকার লোকদের সেবা করে আসছেন।
সরেজরিমনে বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায় গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির অঙ্গিনায় একটি টেবিলে সাজানো রয়েছে ঈদ সামগ্রী। একটি দুচালা ঘরে বসবাস করেন গিয়াসউদ্দিন। সাথে থাকেন তার বৃদ্ধ স্ত্রী। তার অঙ্গিনায় কয়েকটি চেয়ারে বসে আছেন স্থানিয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মসজিদের ইমামরা। গিয়াসউদ্দিন তাদেরকে ডেকেছেন দোয়া মাহফিলের। দোয়া মাহফিল শেষে এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরন করেন গিয়াস উদ্দিন।
গিয়াসউদ্দিনে ছেলে সিরাজ জানান, তারা ৫ ভাই বোন। তার বাবা এখনও নিজে ব্যবসা করেন। তার বাবাকে তারা ব্যবসা ছেড়ে নামায রোজা আর এবাদত করে দিন পার করতে বলেছেন কিন্তু তারর বাবা বলেন যতদিন পারেন কাজ করে যাবেন সে জন্য পানাম বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। ব্যবসা করে বছরে যে টাকা সঞ্চয় করেন সে টাকা দিয়ে গরীব দু:খি মানুষের পিছনে ব্যয় করেন। সেজন্য তিনি তার বাবার জন্য গর্ববোধ করেন।