করোনা ভাইরাস সংক্রমনের পাশাপাশি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা কেন্দ্রিক নানা গুজব। এসব গুজবে বিশ্বাস করে অনেকেই হচ্ছেন বিভ্রান্ত। কেউ কেউ পড়ছেন বিপদে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এ গুজবের আরেক কারখানা। করোনা কেন্দ্রিক কয়েকটি গুজবের চিত্র তুলে ধরলেই পাঠকরা বুঝতে পারবেন বাংলাদেশে করোনা নিয়ে গুজব কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। কিছুদিন আগে আমার এক পরিচিত ব্যক্তির আত্মীয় মারা যান। নামাজের জানাযা হওয়ার কথা বাদ জোহর কিন্তু হঠাৎ করেই জানাযার সময় পরিবর্তন করে তা করা হলো সকাল ১০টায়। ওই ব্যক্তি তার আত্মীয়ের জানাযায় অংশ নিতে পারলেন না। তিনি আমাকে জানালেন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় প্রশাসনের ভয়ে তড়িঘড়ি করে জানাযা দেয়া হয়েছে কারণ প্রশাসনের লোক জানতে পারলে নাকি লাশ নিয়ে যাবেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিন চার দিন পর লাশ ফেরত দেবেন। প্রশাসনের প্রতি কি ধরনের নেতিবাচক ভাবমুর্তি তৈরি করা হয়েছে ধারনা করা যায়! মানুষ এখনো কতটা গুজবে বিশ্বাস করে এটা তার অন্যতম উদাহরন।
বেশ কয়েকজনের কাছে শুনলাম করোনা উপসর্গ নিয়ে কেউ যদি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান তাহলে
নাকি তাদেরকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হয়। যাতে করোনা ছড়াতে না পারে। এ ধরনের গুজব শুনে আমি হতবাক।
কেউ কেউ করোনার নানামুখী চিকিৎসা শুরু করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বলছেন এখনো করোনার চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি সেখানে আমাদের দেশের কিছু মানুষ রীতিমতো ঘোষনা দিয়ে করোনার চিকিৎসায় লিপ্ত। স্বার্থান্বেষী এসব ব্যক্তিদের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে অনেকেই তাদের কাছে ছুটছেন করোনা চিকিৎসার জন্য। এটাও এক ধরনের গুজব।
গুজবের পাশাপাশি করোনা কেন্দ্রিক অমানবিক আচরনও চোখে পড়ার মতো। ছেলে মেয়েরা মাকে রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে করোনার ভয়ে। বোন তার ভাইকে ফেলে যাচ্ছে হাসপাতালের বাইরে। ছেলে মেয়েরা বাবাকে খাবার দাবার না দিয়ে ঘরে আটকে রাখছেন করোনার ভয়ে। আটক অবস্থায় না খেয়েই মৃত্যুবরণ করলেন সেই বাবা।
কয়েকদিন আগের একটি ঘটনা দিয়ে লেখাটি শেষ করছি। এক মহিলা সিএনজিতে চড়ে বসলেন তার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। সাথে আরো যাত্রী আছেন। অর্ধেক পথ যাওয়ার পর হঠাৎ মহিলাটি বমি করতে শুরু করলেন। সিএনজি থামিয়ে চালকসহ যাত্রীরা ওই মহিলাকে গালিগালাজ করে রাস্তায় নামিয়ে দিলেন। বললেন করোনা নিয়ে তিনি কেন সিএনজিতে চড়েছেন। মহিলা বললেন ভাই আমার তো করোনা হয়নি। কিন্তু যাত্রীরা নাছোড়বান্দা। তারা মহিলার কোন কথাই শুনতে চাইছেন না। শেষে মহিলা বললেন আমি সন্তান সম্ভবা তাই বমি করেছি। কিন্তু এতেও কারো মন গললো না শেষ পর্যন্ত মহিলাকে রাস্তায় রেখেই সিএনজি চলে গেল। এমন অসংখ্য ঘটনা এখন ঘটছে পথে ঘাটে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। নিজে বাচাঁর জন্য সবাই এখন স্বার্থপর। কিন্তু একটি বারও কি ভেবে দেখেছেন সবাই যদি না বাঁচে নিজে বাঁচার স্বার্থকতা কোথায়? সবাইকে নিয়ে বাঁচাইতো প্রকৃত বাঁচা।
লেখকঃ সম্পাদক ও প্রকাশক, চারদিক
সোনারগাঁ প্রতিনিধি, দৈনিক দেশ রূপান্তর