কেমন হবে সে মুহুর্তটি যখন বিপরীতমুখী অবস্থান থেকে এই আলাপচারিতা সংঘটিত হবে!
আল্লাহ তায়ালা উভয়ের মাঝে খানিক সময়ের জন্য এই বিশেষ ব্যাবস্থাটি করে থাকবেন।
তাদের মাঝে কী কথা হবে?
জান্নাতিরা জাহান্নামিদেরকে ডেকে বলবে,
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে যা ওয়াদা করেছিলেন আমরাতো তা সত্যিই পেয়েছি।
তোমাদের সাথে যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তোমরা কি তা পেয়েছো?
জাহান্নামিরা উত্তর করবে ‘হ্যাঁ।’ আমরাও তা সঠিকভাবেই পেয়েছি।
জাহান্নামিরা এই কথা বলার সাথে সাথেই একজন ঘোষণাকারী ফেরেশতা বলবে, “জালেমদের উপর আল্লাহর লানত।”
এই জালেম লোকগুলো মানুষকে আল্লাহর পথে চলতে নানানভাবে বাধা দিত এবং কথায় কথায় ভুল খুজতে মরিয়া হয়ে থাকতো, তাদের যন্ত্রণায় কথা বলাই মুশকিল হয়ে যেত। আর, পরকাল বলতে কিছু নেই, এসব বলে বেড়াত।
আসলে এই লোকগুলিই দুনিয়াতে একজন আরেকজনের বন্ধু ছিলো, কাছের পরিচিত ছিলো। একজন আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসুল ও আখেরাত ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশ্বাসী হলেও অন্যজন ছিল অবিশ্বাসী। অবিশ্বাসী বন্ধুটি বরাবরই বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করতো নবী-রাসুলদের কথা, এবং পরকাল সম্পর্কে যে ওয়াদা, এসবের ভিত্তি নেই। পরকাল বলতে কিছু নেই, এসব শুধুই অলিক গল্প কথা। এবং এ বেপারে অনেক গোছানো, অকাট্য, রেশোনাল যুক্তিও তুলে ধরতো। এসব কথা শুনে অনেকসময়ই বিশ্বাসী ব্যাক্তির মন দোটানায় পড়ে যেত, মনে প্রশ্ন জাগতো আসলেই কি ‘আল্লাহ’ বলতে কিছু নাই?
কিন্তু বিশ্বাসী ব্যক্তি কিছুতেই মনের সাথে হিসেব মেলাতে পারতো না। আবার মনে মনে ভাবতো যে আল্লাহ ছাড়া এত কিছু এভাবে চলতে পারেনা। ”আল্লাহ,পরকাল ইত্যাদি বলতে কিছু নাই” এমনটা হতে পারেনা।
একটু পর আবার মনে অটুট বিশ্বাস ফিরে আসতো যে আল্লাহ সঠিক। এবং আল্লাহ তায়ালার এসব ওয়াদা মিথ্যা নয়। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার দয়ায় সে আবার সঠিক বিশ্বাসে ফিরে আসতো।
সে কথা মনে করে বিশ্বাসীরা সেদিন জাহান্নামীদের দেখে বলবে,
ইশ! আরেকটু হলেই তো তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিতে! আমিতো তোমার কথায় নড়েই গিয়েছিলাম। আল্লাহ দয়া করে বাচাইছে!
কথাবার্তার এক পর্যায়ে জাহান্নামিরা জান্নাতিদের কাছে সামান্য খাবার ও পানি চাইবে তৃষ্ণা নিবারণ করার জন্য কিন্তু জান্নাতিরা জাহান্নামিদের বলবে, এসব খাবার তোমাদের জন্য নয়! “আল্লাহ তোমাদের জন্য এই খাবার ও পানিকে হারাম করে দিয়েছেন।”
কারণ, তোমরা ধর্মকে নিয়ে অনেক হাসি- ঠাট্টা করেছো। নিজেরা ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলে রেখেছিল।
এবং, আজকের এই কঠিন দিবসে আল্লাহ তোমাদেরকে ভুলে গিয়েছে; যেমন তোমরা এ দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিলে দুনিয়াতে থাকতে এবং তোমরা তাঁর নিদর্শনসমূহকে অবিশ্বাস করতে।
রাব্বে কারিম যেন আমাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে এবং জান্নাতুল ফেরদৌস কবুল করে।
তথ্যসূত্রঃ আল-কোরআন, সুরা আ’রাফ, আয়াত ৪৪-৪৫ ও ৫০-৫১।
জান্নাত ও জাহান্নাম ভাবনা।। তুহিন মাহমুদ