শাশ্বতী চৌধুরী
সুবলা কাঁপছে | আজ একটা দক্ষ যজ্ঞ হবেই | ম্যাডাম আর খুব রেগে আছেন সকাল থেকে | ম্যাডামের মেজাজকে সবাই ভয় পায় | এক এক সময়ে যা হাঁক ডাক দেন, সন্দেহ হয় এ কোনো মহিলার গলা তো ! আজ তো মাথায় আগুন ম্যাডামের | সবদিক রক্ষা হলে হয় | দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো সুবলা | সাড়ে দশটা বেজে গেছে | এখনও ঝন্টুরামের দেখা নেই |
রান্নাঘর থেকে উঁকি মারলো একবার সুবলা ডাইনিংয়ের দিকে | উরিব্বাবা, ম্যাডাম তো এদিকেই তাকিয়ে আছেন | চোখে চোখ পরে গেলো | সুবলা ক্ষিপ্রগতিতে নিজের মাথাটা রান্নাঘরের ভিতরে চালান করে দিলো | আর তখনই সেই বিখ্যাত হাঁক…. “সুবলা আ আ আ”……….
সুবলার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো | গলা শুকিয়ে কাঠ | আজই চাকরি গেলো বোধ করি | ইষ্ট নাম জপতে জপতে ডাইনিংয়ের দিকে পা বাড়ালো সুবলা |
-“ ডাকছো দিদি?”
-“ তোর নামই সুবলা তো? নাকি অন্য নাম রেখেছিস নিজের?”
সুবলা ঢোঁক গিললো | আজ যা বলবে সে, তাতেই গোলমাল আঠারোআনা | তার থেকে চুপ করে থাকাই ভালো |
-“ কি হলো ? কান খারাপ হয়েছে নাকি? শুনতে পাসনি কি বললাম?”
এতো মহা বিপদ ! কথা বললেও দোষ, না বললেও দোষ ! সুবলা পড়েছে মহা ফাঁপরে !
-“ শুনেছি দিদি | কি বলবো বলো? তুমি আজ রেগে যাচ্ছো খালি |”
-“ রাগবো না? আমি রাগবো না? কটা বাজে দেখেছিস একবার?”
সুবলার মনে হলো, কানের পর্দাটার আর কিছু অবশিষ্ট নেই বোধহয় | ফেটেই গেলো |
-“ সাড়ে দশটা বেজে গেছে |”
-“ যাক, ঘড়ি দেখতে জানিস তাহলে | কাল রাতে ঝন্টুরাম তোকে বলেছে কিছু?”
-“ আমাকে? ঝন্টু? না তো দিদি ! কি বলবে?”
ম্যাডামের রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়েই প্রমাদ গুনলো সুবলা | আবার কি ভুল বললো কে জানে !
-“ প্রেম-পিরিতি তো কম নয় তোর ঝন্টুরামের সাথে | চান্স পেলেই গুজগুজ ফিসফিস ইশারা | তার উপর নাম শর্ট করে ঝন্টু ! আদরের ডাক ? কি ভাবিস, আমার চোখে কিছু পরে না ? ঝন্টুর ঘরে ওর বউ বাচ্চা আছে, সেটা কিন্তু খুব ভালো করেই জানিস তুই |”
মাথা নিচু করে সুবলা | মাথার ভিতরে কারা যেন সব বাজনা বাজাতে শুরু করেছে | প্যাঁ পোঁ ঠুং ঠাং কত কি আওয়াজ হচ্ছে ওর মাথায় | কে যেন তবলার হাতুড়ি পিটছে | ম্যাডামের চোখ তো নয়, একেবারে…. উফ, দরকারে সুবলার মাথায় কিছুতেই ঠিকঠাক শব্দ আসে না | সে যাই হোক, নাহয় দুঁদে উকিল ম্যাডাম.. তাই বলে একজনের মেয়েমানুষের চোখকে কি শকুনের চোখ বলা যায়? যাহ! সে উচিত হবে না মোটেও |
-“ এই যে ! আজ কিসের পরব আছে ঝন্টুরাম?”
বাঁজখাই হাঁকে চমকে উঠে ম্যাডামের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে ফিরে তাকিয়ে ঝন্টুরামকে আবিস্কার করে সুবলা | যাক, এবারের মতো তার উপর থেকে ফাঁড়াটা নামলো | ম্যাডাম এবারে ঝন্টুরামের আচ্ছেসে ধুলাই করবে | মানে মানে পায়ে পায়ে কেটে পড়ল সুবলা | রান্নাঘরই এখন একমাত্র নিরাপদ জায়গা | সেখান থেকেই কান খাড়া রাখবে সে | হাজার হোক, ঝন্টুরামের জন্য একটু একটু ব্যথা আছে সুবলার মনে |
-“ পরব নেহি ম্যাডামজি | হামি জানে আপ গুস্সা হো , লেকিন মজবুরী থা |”
ঝন্টুরাম ম্যাডামের মুখের দিকে সরাসরি তাকালো | ম্যাডামজি চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছেন |
-“ কিসের মজবুরী? তুমি জানো, আজ আমার পাক্কা দশটায় বেরোনোর টাইম | তোমার সাড়ে নটায় রিপোর্টিং টাইম | সময়ের নড়চড় হয় না আমার | তুমি লেট করবে তো সেটা ফোন করে ইনফর্ম কেন করোনি? আমাকে জানানো তোমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?”
-“ মাফি ম্যাডামজি | হাম মাফি মাঙ্গতে হ্যায় | লেকিন অত টাইম ছিলো না আপনাকে ফোন লাগাই | কাল রাত ভর হাঙ্গামা হুয়া | সুভা ভি হালত গরম হ্যায় | আজ লেগেছিলো কি আমি আসতে পারবে না কামে | মাথা পুরা কা পুরা পাগলা গ্যায়া হামারা ম্যাডামজি | কিন্তু খুশ কিসমত দেখো হামারা, আপ খুদ হি এক নামজাদা ওকিল আছেন, আপনার কিতনা জান পহেচান | দুলারী আমাকে ইয়াদ দিলালো কি, ম্যাডামজিকে পাস যাও | উয়ো হি ইস মসলে কা হাল বলবে | আপনি একবার হামার বস্তিমে চলেন ম্যাডামজি | উধার বহত লাফড়া হো গয়া |”
ঝন্টুরামের ম্যাডামজি নড়েচড়ে বসলেন | সুবলাও রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে | কৌতুহল আর রান্নাঘরের গন্ডির বাঁধ মানছে না | গুরুতর কিছু ঘটেছে নিশ্চয় |
-“ শান্ত হয়ে বসো ঝন্টুরাম | বলো কি হয়েছে |”
-“ আপনি হামার সাথে চলুন ম্যাডামজি | হামি রাস্তেমে আপকো সব বতাতা হ্যায় |”
-“ ঠিক আছে | গাড়ি বার করো জলদি | কিন্তু অন্তত কি ঘটেছে, সেটুকু বলো | বাকি যেতে যেতে শুনে নেবো ডিটেলে |”
হাউমাউ করে ঝন্টুরাম যা বললো, তাতে শিউরে উঠলো সুবলা | ঝন্টুরামের বস্তিতে তার পাশের কোনো এক ঘরেই ফুলিয়াকে ধর্ষণ করা হয়েছে | ফুটফুটে বছর নয়েকের মেয়ে ফুলিয়া, ঝন্টুরামের ঘরের পরে দু ঘর ছেড়েই থাকে | বস্তিতে প্রতিটা ঘর এতই লাগোয়া যে সব এক পরিবার বলেই মনে হয় | ঝন্টুরাম প্রায়ই এসে ফুলিয়ার গল্প করতো | ঝন্টুর দুই ছেলে ঘরে, মেয়ে নেই | সে তার এক দু:খ | ভগবান তার ঘরে কেন যে এক পরী দিলেন না ! এই ফুলিয়াকে ঝন্টু নিজের মেয়ের মতই মনে করে | তার ঘরে ভগবান নন্হা পরী না দিক, ঘরের পাশেই তো দিয়েছে , সেই বা কম কি ! বড় আদর কাড়া মেয়ে ওই একরত্তি ফুলিয়া | ঘরে নিজের ছেলেদের জন্য কিছু নিয়ে গেলে ফুলিয়ার জন্যও কিছুমিছু থাকবেই, তাকে আলাদা ভাবার ভুল কখনই করে না ঝন্টুরাম | শুধু ঝন্টুরাম নয়, বস্তির আশেপাশের সব ঘরেই ফুলিয়া বড় আদরের | মেয়ে তো নয়, যেন বেহেস্তের পরী | গরীবের ঘরে ভগবানের দেওয়া এমন ফুটফুটে টুকটুকে মেয়ে বড়ই বেমানান | আর সেই ফুলিয়ার উপরে এমন নৃসংশ অত্যাচার !
ম্যাডাম উদ্যত হলেন যাওয়ার জন্য ঝন্টুরামের সাথে | সিলিংয়ের দিকে মুখ তুলে কপালে হাত ঠেকায় সুবলা | ম্যাডাম যখন যাচ্ছেন, একটা না একটা হিল্লে হবেই | রক্ষা করো ঠাকুর | ফুলের মতো মেয়েটাকে রক্ষা করো | ওদের পিছু পিছু বাইরে সদর অবধি পৌঁছে যায় সুবলা |
ফুলিয়াকে মিউনিসিপালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা গেছে কাল রাতেই | এই কুকীর্তি যে করেছে, তাকেও হাতে নাতে ধরেছে বস্তির লোকজন | ফুলিয়ার সগা চাচা সহদেও | ‘শালা হারামখোর’ বলে গাল দিয়েই থেমে যায় ঝন্টুরাম | ম্যাডামের সামনে মুখ খারাপ করা অন্যায় হবে | যদিও ম্যাডামের সেদিকে মন নেই | ঝন্টুরাম বলে চলে, সহদেও পালিয়ে বসেছিলো পাশের পাড়ার দূর্গা মন্ডপের পিছনে | ঠিক গন্ধে গন্ধে খুঁজে বার করে ধরে এনেছে বস্তিবাসী প্রতিবেশীরা | গনধোলাইয়ে তার অবস্থাও খুব সুবিধার না | কিন্তু মুশকিল হলো, পুলিশ কেস নিতে চাইছে না | সহদেও-র পার্টিতে নাড়া বাঁধা আছে | এই অবস্থায় ম্যাডামজিই একমাত্র ভরসা |
-“ বাচ্চাটার বাবা মা কোথায়?”
-“ ফুলিয়ার মা তো কেঁদে কেটে পাগলা বনে গেছে ম্যাডামজি | দুলারী আর বস্তির কজন মেয়েমানুষ আছে ওর সাথে হাসপাতালে | আর ফুলিয়ার বাপ তো ইখানে থাকে না | সে বোম্বেতে সোনার কাজ করে | ওকে খপর দিওয়া হয়েছে | ইখন আসতে তো টাইম লেগে যাবে বহুত | দুদিন তো বটেই |”
ম্যাডাম কিছু বললেন বোধ করি | সুবলার কান অবধি পৌঁছালো না | গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আওয়াজে সব চাপা পরে গেলো | জানলার কাচ গুলোও তুলে দিয়েছে ঝন্টুরাম | সুবলা জানে গাড়ির ভিতরে যতটা হিম ঠান্ডা এখন, ঠিক ততটাই উত্তাল গরম গাড়ির ভিতরের মানুষগুলোর অন্তরস্থল |
গাড়িতে বসেই সম্পুর্ন ঘটনা শুনলেন দুঁদে উকিল সুপর্ণা সামন্ত | ঝন্টুরাম দীর্ঘদিন তার ড্রাইভারী করছে | শুধু গাড়ি চালানো নয়, ব্যক্তিগত এবং সাংসারিক অনেক কাজেই ঝন্টুরাম অপরিহার্য | যেমন অপরিহার্য সুবলা | তার বাড়ি ঘর সামলে রাখার জন্য সুবলার মতো কর্মঠ এবং বিশ্বাসী কাজের লোক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার | মনে মনে ছক কষতে থাকেন সুপর্ণা | থানায় ডায়েরি না নিলে এই মুহুর্তে কার সাথে তিনি যোগাযোগ করতে পারেন | কেসটা হাই প্রোফাইল নয়, অতএব, সেভাবেই সঠিক লোক নির্বাচন করতে হবে | সহদেও নামক জানোয়ারটাকে গরাদে ঢোকাতে পারলে শান্তি | ও দিকের কাজটা সেরে ফেরার পথে একবার ফুলিয়াকেও দেখে আসতে হবে | আজকের মতো চেম্বার গেলো | পুজোর ছুটিতে এতদিন সব বন্ধ ছিলো | গতকাল থেকে আবার সব কাজ শুরু হয়েছে | যদিও, এই সময়ে খুব একটা প্রেসার নেই কেসের | তবে প্ল্যান ছিলো, চেম্বারে বসে কয়েকটা পুরনো কেস স্টাডি করে ফেলবেন সুপর্ণা | কিছু রেফারেন্স এই ফাঁকা টাইমে পড়ে মাথায় রাখতে পারলে পরে সময়-অসময়ে খুব কাজে আসে | কব্জিতে শোভিত সরাস্কি ক্রিস্টাল খচিত ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে মনে মনে হিসাব করতে শুরু করেন সুপর্ণা | কয়েকটি জরুরী ফোন সেরে নেওয়া দরকার ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই | মুঠোফোনের ডায়াল প্যাডে হাত রাখেন তিনি |
…………………………………………………………….
সারাদিন বিস্তর ঝামেলা গেছে | পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে ঝন্টুরামের কদর বেড়ে গেছে খুব | আজ ম্যাডামজি জান লড়িয়ে দিয়েছেন পুরো | ম্যাডামজি না থাকলে উও শালা সহদেওর হাতে হাতকড়া পরানো যেতো না | যাদব তো একটা পরনাম ঠুকে দিলো ম্যাডামজিকে | ম্যাডামজির ইতনা যান পাহেচন | ইকটা ফোন আসলো কি দারোগা সাবের চহেরা হি পুরা কা পুরা বদলে গেলো | ম্যাডামজি থানামে জানেসে প্যাহেলেই উও ফোন সোন আগায়া থা | অউর ম্যাডামজি আনেসে দারোগা সাব ক্যায়া স্যালুট মারা | ইকদম মিলিটারী মাফিক |
ইতনা গুস্সা করনেওয়ালী ম্যাডামজি থানেমে কিতনা আরামসে বাতচিত কর রহে থে, জ্যায়সে ঘুমনে আয়ে | লেকিন উসকি আওয়াজ মে হ্যায় এইসা কুছ, দম হ্যায় ওহি আওয়াজ মে ; দারোগা সাহাব জ্যায়সে জুজু বন গ্যায়া | ইয়ে ফুলিয়া হামেশা বোলতা হ্যায়, ‘ভুত আয়গা তো বহুত ডরায় গা অউর হ্যাম জুজু বোন জায়গি’… পাতা নেহি ইয়ে জুজু হোতা ক্যায়া হ্যায় |
অফিস ঘরের বাইরে বসে বসে সাতপাঁচ ভেবেই চলেছে ঝন্টুরাম | ফুলিয়া গোল গোল চোখ করে যখন তাকে জুজু হয়ে যাওয়ার গল্প বলতো, তখন হেসেই কুটিপাটি হতো দুলারী আর ফুলিয়ার মা ফুলমতি | ঝন্টুরামও তাদের সাথে হাসিতে যোগ দিতো | বাকিরা হাসলে দোষ হয় না, কিন্তু ঝন্টুরাম ফুলিয়ার কথায় হাসলে ফুলিয়া গাল ফুলিয়ে বড় অভিমান করতো | সগা না হয়েও বাপ-বেটির সম্পর্কটা বড় মজবুত, বড় মধুর যে | কে জানে ফুলিয়ার এখন কি হাল ! চোখে জল ভরে ওঠে ঝন্টুরামের | কপালে হাত ঠেকায় সে | ভাগ্যিস সে সগা নয় ফুলিয়ার | সগা মানুষদের নোংরা চেহারা দেখে তার ভিতরটা ঘেন্নায় রি রি করছে | ইয়ে হারামখোর লোগো কো ফাঁসি পে কিউ নেহি চড়া দেতা হ্যায় কানুন !! নিজের প্রশ্নেই বিচলিত হয়ে পড়ে ঝন্টুরাম | তার বিদ্যে বুদ্ধি কম | মনে মনে স্থির করে রাখে, এই প্রশ্নের উত্তরটা সে ম্যাডামজির কাছ থেকে জেনে নেবে এক সময়ে |
ম্যাডামজি বাতচিত করছেন দারোগার সাথে | সহদেও কাঁদা-কাটা কিয়া বহুত | লেকিন উসকা গলতি মাফ নেহি | কভভি নেহি | পার্টির লোক এসেছিলো দো-তিন | উও ভি ম্যাডামজির সাথে দো-চার বাত করকে নিকল গ্যায়া | সহদেওকে মুহ পর বোল গ্যায়া, ইস পাপ কাম কে লিয়ে কোই পার্টি সাথ নেহি হ্যায় | মরদ কা তো এইসা হি জবান হোনা চাহিয়ে | অভি ম্যাডামজি জানে সহদেও কো কিতনা জায়দা সাজা হোগা | ঝন্টুরাম নিশ্চিন্ত তার ম্যাডামজি জো ভি করেগী, ঠিকই করেগী | লেকিন একটা প্রশ্ন ঝন্টুরামকে পরেসান করছে, সহদেও এইসা কাহে কিয়া ? ফুলিয়া তো উসিকা হি খুন হ্যায় | সগা চাচা হ্যায় | বাপসে কম হ্যায় কা ? উও ইতনা গন্দা কাম ক্যায়সে কিয়া ?
সুপর্ণা উঠে এলেন | থানার কাজ আপাতত শেষ | অফিসার চার্জশিট রেডি করবে | কোর্টে উঠবে কেসটা | পার্টির ছেলেরা চেয়েছিলো বাইরেই মিমাংসা হয়ে যাক | কিন্তু এমন জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া একান্ত জরুরী | নজির গঠন না করতে পারলে সমাজ থেকে এই জঘন্য অপরাধের নিস্পত্তি হবে না | মানুষের মনে ভয়ানক ভয় ঢোকাতে হবে | তবেই না এই সব কুকর্ম করার আগে দশবার ভাববে মানুষ !! কেউ কেউ হয়তো পিছোলেও পিছোতে পারে, কোনো একটি মেয়ে হয়তো এভাবেই বেঁচে যেতে পারে | সহদেওর সাথেও কথা বলেছে সুপর্ণা | চেষ্টা কম করেনি সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার | কিন্তু সুপর্ণা সামন্তের চোখকে ফাঁকি দেওয়া কোনো অপরাধীর পক্ষে সম্ভব নয় | সুপর্ণা জানে, তার চোখে এমন কিছু আছে, যার দিকে তাকিয়ে আচ্ছা আচ্ছা মানুষ মিথ্যা বলতে পারে না | সেখানে সহদেও তো নস্যি | অপরাধ স্বীকার করতে বাধ্য সে |
একবার বাচ্চা মেয়েটাকে দেখা আসা দরকার | লেটেস্ট নিউজটাও ডিরেক্ট পাওয়া যাবে তাতে | নিউজে খবরটা আসছে কি? এরকম কত ঘটনাই যে অলিতে গলিতে ঘটছে ! কটা নিউজ চ্যানেল তার খবর রাখে ! ফোনের ডায়াল প্যাডে আঙুল ঘোরাফেরা করতে থাকে সুপর্ণার | “টাটকা খবর, বাজার গরম” নামের নতুন নিউজ চ্যানেলে রুমালী সিনহা আছে | সুপর্ণার বাল্যবন্ধু | ফোন কানে লাগিয়ে ঝন্টুরামকে ইশারা করে সুপর্ণা | ঝন্টুরাম এক দৌড়ে গাড়ির কাছে পৌঁছে দরজা খুলে দেয় | ম্যাডামজি তাদের ভগবান |
…………………………………………………………………..
-“ কি হলো ঝন্টুদা?”
-“ সহদেও জেলে গেছে | সারা বস্তি খুশ | ম্যাডামজি আমাদের ভগমান আছেন রে সুবলা |”
-“ সে তুমি একশো ভাগ খাঁটি কথা বলেছো | একটু রাগী মানুষ, তার মেজাজে বাঘে গরুতে এক ঘটে জল খায় | তবে মন খাঁটি |”
-“ সাচ্চা ঔরত আছেন ম্যাডামজি | ইতনা বড়া ওকিল, হামলোগ গরীব আদমী, উনার ফিজ দেওয়ার ক্ষমতা ভি নেহি আছে আমাদের | ফিরভি ম্যাডামজি কাঁহা উও হামারা ইয়ে কেস লড়েগা | বিলকুল মুফত | ইয়ে তো আশির্বাদ হ্যায় হামারে লিয়ে, হামারা ফুলিয়াকে লিয়ে |”
-“ ফুলিয়া কেমন আছে ঝন্টুদা? খবর পেলে কিছু?”
-“ হাসপাতাল সে ঘুম কর আয়ে ম্যাডামজি | খুদ যা কে দেখা হামরী ফুলিয়া কো | দুলারী তো বুরবক বোন গয়া ম্যাডামজি কো দেখকে | ফুলমতি কিতনা রো পড়ি ম্যাডামজিকে প্যার পর |”
-“ ফুলিয়া !!”
-“ মত পুছ সুবলা | গুড়িয়াকা চহেরা কালা পর গ্যায়া | রো রো কে হালত বুরা বাচ্চে কা | ডাগদর সব বোলা জখম গহেরা হ্যায় | ইতনা সা ছোটা বাচ্চা, তু খুদ এক ঔরত হ্যায় সুবলা; তু বোল… অত ছোটো বাচ্চা কি ঔরত য্যায়সা হো সকতা হ্যায়? উসকা শরীর দেখকে কই লন্ডা ক্যায়সে আপনা ইমান খো সকতা হ্যায়, ইয়ে মেরে সমঝ সে বাহার হ্যায় | উও ভি আপনা খুন .. জিল্লত হ্যায় এইসি জিন্দেগী পর |”
সুবলা মাথা নিচু করে বসে শাড়ির আঁচলে আঙুল জড়ায় | চোখের জলে গাল ভিজে আসে | ঝন্টুর থেকে শুনেই তার বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে | আর যারা চোখের সামনে দেখছে বাচ্চাটার কষ্ট, তাদের কি অবস্থাই না হচ্ছে ! ফুলিয়ার কি অপরাধই বা ছিলো !!
-“ রাত হয়েছে ঝন্টুদা | এখন অনেক দৌড় ঝাঁপ আছে | দুটো খাবার বেঁধে দিচ্ছি, ঘরে নিয়ে যাও | ছেলে দুটো তো আর না খেয়ে থাকবে না সারা রাত ! দুলারী ফিরেছে কিনা খবর নিয়েছো?”
-“ হা, উও ওয়াপাস আ গয়ি | খানা ওয়ানা ছোড় সুবলা | দুলারী কুছ না কুছ বানা লেগী | তুই ম্যাডামজির খেয়াল রাখ | উও ঔরত নেহি, দেবী আছেন |”
কপালে হাত ঠেকিয়ে হাঁটা দেয় ঝন্টুরাম বাড়ির দিকে | অন্ধকারে রোগা লম্বা কালো শরীরটা মিশে যেতে দেখে সুবলা | চোখ জলে ভরে আসে আবার | ফুলিয়ার জন্য বুকের ভিতরে নাম না জানা এক ঝড় বইতে থাকে |
ডাক আসে…
-“ সুবলা এক কাপ কড়া করে কফি দিয়ে যা না রে , মাথাটা বড্ড ধরেছে |”
………………………………………………………………………………………………
ইজি চেয়ারে আধশোয়া সুপর্ণা সামন্ত | এক ফালি আলো ঘরের অন্ধকারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে | ঠিক যেভাবে সুপর্ণার মন এখন চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত তামাম সমাজকে | টেবিল ল্যাম্পের হলুদ আলো ছিটকে এসে ঘরের অপর প্রান্তের ইজি চেয়ারকে হালকা ছুঁয়ে গেছে | তার আভাতেই সুপর্ণার অবয়ব স্পষ্ট | সুবলা অভ্যস্ত এভাবে তার উকিল দিদিকে দেখতে | দিদি চিন্তাচ্ছন্ন, ধ্যানমগ্ন এক ঋষির মতো চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন |
-“ দিদি, কফি |”
নরম স্বরকে যথা সম্ভব আরো নরম করে ডাক দেয় সুবলা | কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে | দিদি যেন কোন অতলে হারিয়ে আছেন | সাড়া নেই কোনো | দোনামনা করে আবার ডাকতে যায় সুবলা, তখনই তার উকিল দিদি যেন ধ্যান ভেঙ্গে উঠে বসেন |
-“ দে ..”
-“ দিদি, খালি পেটে কড়া কফি খাবে? এসে থেকে তো মুখে কিছু দাওনি |”
-“ রাতে কিছু খাবো না সুবলা | তুই খেয়ে নে |”
-“ তা কি করে হয় দিদি | খালি পেটে থাকলে তোমার আবার পেট ব্যথা করে | কিছু অন্তত মুখে দাও |”
-“ তুই আমাকে বরং দুটো কড়া করে টোস্ট করে দে | এতেই হয়ে যাবে আজ |”
সুবলা মাথা নেড়ে ফিরে আসে | সে জানে, দিদি বেশি কথা বলার মানুষ নন | একবার যা বলেছেন, সেটাই শেষ কথা |
সুপর্ণা কফিতে চুমুক দেয় | মাথাটা অসম্ভব ভারী হয়ে আছে | মনের ভিতরে তীব্র উথাল পাতাল তরঙ্গ | চোখের সামনে একটা পুতুলের মতো মেয়ের জলে থৈ থৈ চোখদুটো ভেসে ভেসে উঠছে | যন্ত্রণায় বেঁকে চুরে যাচ্ছিল মেয়েটির মুখ | তার আদরের চাচার ভয়ানক ধর্ষকাম আদরের জের সামলানোর ক্ষমতা এই শিশুটির নেই | পৃথিবীর কোন শিশুরই বা আছে ! মিমিরও কি ছিলো, এই যন্ত্রণা ক্লিষ্ট আদরের ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা ! না, ছিলো না .. শুধু ছিলো মুখ বুঁজে যন্ত্রণার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অবিরাম চেষ্টা, ছিলো মুখ বন্ধ রেখে বড় বড় চোখ মেলে তার খুব প্রিয় আদরের দাদুভাইয়ের ভিতরের রাক্ষস রূপটাকে ভয় না পাওয়ার প্রাণপন চেষ্টা, ছিলো অন্ধকারের মধ্যে ক্রমে ক্রমে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা, ছিলো হীনমন্যতায় ভোগা রোগা কালো একটা মেয়ের বাঁচার চেষ্টা, ছিলো নিজেকে করা প্রশ্নের উত্তর নিজেই খোঁজার চেষ্টা.. কেন কেন, আমিই কেন !!!
-“ এরকম কেন করছো দাদুভাই?”
-“ এটা একটা মজার খেলা | কাউকে বলতে নেই কিন্তু | তাহলেই মজাটা নষ্ট হয়ে যাবে |”
-“ না না, এটা মজা না, এটা বাজে খেলা | আমার লাগে…”
-“ আহ.. বলছি না, মজার খেলা | মজাটা বুঝতে একটু সময় লাগবে | তুই কাউকে বলবি না এসব | কাল আমি তোকে সেই পুতুলটা কিনে দেবো |”
-“ কোন পুতুল !”
-“ সেদিন বায়না করেছিলি | তোর মা কিনে দিলো না একদম | কালকেই এনে দেবো তোকে | তুই যা চাইবি, এনে দেবো | কিন্তু খেলার কথা কাউকে বলা চলবে না | এ শুধু আমাদের খেলা, কেমন !”
সেদিনের মিমি যদি পারতো আজকের সুপর্ণা হয়ে উঠতে ! তাহলে হয়তো এতটা যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না | যে দাদুর কোল ছিলো নিরাপদ আশ্রয়, তাই ক্রমে ক্রমে কণ্টকাকীর্ণ হয়ে উঠলো | ছোট্ট মিমি বুঝতো না, দাদুর আদর শুধুই কেন ওর ফুল ফুল ছাপ প্যান্টের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকে | এ কেমন আদর, যা এতো ব্যথা দেয় ! এ কেমন আদর, যাতে বুক ফেটে কান্না আসে, এ কেমন আদর যাতে দাদু বাবা কাকা দাদা সবাইকে ভয় পেতে শিখতে হয় ! এ কেমন আদর !!!!
পুতুল, খেলনা বাটি, চকলেট, আইসক্রিম … এসবের লোভের গন্ডি ছেড়ে এরপর শাসানি, লাল চোখ; সেই সাথে আদরের তীব্রতা বৃদ্ধি | বছর দশেকের মিমি কুঁকড়ে ছোট হতে হতে মিশেই যাচ্ছিলো.. যদি না মায়ের চোখে পড়তো … ছোট্ট মিমির ফুল ফুল ছাপ প্যান্টের রং বদলে বদলে যাচ্ছে | এই রং তো প্রকৃতির কোনো ইংগিত নয় … এ তবে কেমন রং !
মিমির সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে এক বিশাল ঝড় উঠলো | মিমি জানে না, সে ঝড় কিভাবে সামাল দিতে হয় | মিমি বোঝে না, শত সহস্র প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিভাবে উত্তর দিতে হয়, মিমি শুধুই জানে ঝড়ের দাপটে সে একবার এই কুলে, একবার ওই কুলে আছাড় খাচ্ছে , মিমি চাইছে ভেসে উঠতে , একটু নিশ্বাস নিতে |
ওই যে স্কুলে পড়েছিলো মিমি, ঠাকুরের বাণী.. ‘যে সয়, সে রয়’ … এই কথাটা কেন জানিনা মিমির মনে বড্ড দাগ কেটে বসে গেছিলো | প্রাণপন বিশ্বাস করতো মিমি সেও রইবে | সইতে যদি পারে, রইবে না কেন? রইলো মিমি | তার বিশ্বাস শেষ মেশ জিতে গেলো | আদরের প্রকোপ থেকে রেহাই পেলো মিমি | দাদুভাই কোথায় হারিয়ে গেলো, সে খবর নিতে আর ইচ্ছা করতো না মিমির |
যন্ত্রনাটা এখনো ধাক্কা মারে বড্ড | সেদিনের ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে পালিয়ে বেড়ানো মিমি পেরেছে তো তার চারপাশের কালো অন্ধকারের পর্দাটাকে ছিঁড়ে ফেলে আজকের সুপর্ণা হয়ে উঠতে | ফুলিয়াও পারবে | সুপর্ণা জানে সে লড়বে, তামাম দুনিয়ার মিমিদের ফুলিয়াদের জন্য সে লড়বে | মিমিরাও অন্ধকারের নিকষ শক্ত আবরণ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে আলোয় | হারাবে শুধু বালিকাসুলভ সরলতাটুকু চিরকালের মতো | মেয়েমানুষ হয়ে জন্মানোর কিছু তো মাশুল দিতেই হয় |
চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে সুপর্ণার | অদম্য জেদ ফুটে ওঠে তার মুখের শিরায় শিরায় |
সুবলা এসে ঢোকে ঘরে |
-“ দিদি একটু স্যুপ করলাম | রাগ করো না যেন | খালি পেটে তোমার গ্যাসের কষ্ট হয় | তাই এই দুটো টোস্ট আর স্যুপটা খেয়ে নাও |”
নরম দৃষ্টিতে তাকায় সুপর্ণা সুবলার দিকে | মেয়েদের যে কেন এতো মায়া মমতা থাকে শরীরে ! উচিত নয় মোটেও | ভগবানের দরবারে এই আর্জিটুকু জানানো খুব দরকার.. মেয়েদের আর নরম সরম মায়া মমতা ভরে বানিয়ো না, তাদের যুঝবার শক্তিটুকুও দাও |
সুবলা দাঁড়িয়ে রইলো যতক্ষণ না তার দিদির খাওয়া শেষ হয় | খালি প্লেট হাতে নিয়ে তবে তার স্বস্তি | এইবার রাতটুকু দিদি শান্তিতে ঘুমাক | খালি পেটে কি ঘুম হয়?
সুপর্ণা মুখ হাত ধুয়ে দুধ সাদা বিছানায় শরীর ফেলেন | তাঁর চিরকালের পছন্দ দুধ সাদা চাদর | কোথাও যেন এতটুকু মলিনতা না থাকে | এসি চিল করে দেন | নরম ব্ল্যাংকেটের তলায় ঢিলেঢালা রাত পোশাকে নিজেকে পাওয়া বড় আরামের | চোখ বন্ধ করে সহদেওয়ের বক্তব্যকে কাটাছেঁড়া করতে থাকেন | কি যেন বলেছিলো সহদেও ? ফুলিয়ার মতো ফুলপরীকে দেখে তার শরীরের রক্তের গতি বেড়ে যায়, কি করবে সে ?
-“ হামার বহুত সন্দেহ আছে ওকিল সাহেবা | উও ফুলিয়ামে হামারা খুন হ্যায় হি নেহি | হোতা তো ইতনা অলগ কিউ হ্যায় উও হামলোগ সে? কিতনা সফেদ হ্যায়, গুড়িয়া কি মাফিক হ্যায় | নরম হ্যায় | গোদীমে বিঠাও তো স্বর্গ য্যায়সা লাগতা হ্যায় | উসকে বদন সে অলগ সা খুশবু আতা হ্যায় | হাম দেখনা চাহতে থে, উও হাম লোগোসে কিতনা অলগ হ্যায় | পুরা খোলকে দেখনা চাহতে থে | উও লেড়কি সমহাল নেহি পায়ি, তো ইসমে মেরা ক্যায়া কসুর !”
এক মুঠো ঘেন্না ছুঁড়ে দিয়ে এসেছিলো সুপর্ণা সহদেওয়ের মুখের উপর | গরাদে বসে দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ রেখে অভিব্যক্তিহীন স্বরে কথা গুলো বলছিলো সহদেও | মানুষরুপী এই ঘৃণ্য পশুকে কি বিশেষণে ভুষিত করবে ভেবে পায় নি সুপর্ণা | বেরিয়ে আসার আগে পিছন ফিরে একবার কি ভেবে তাকিয়ে ছিলো সুপর্ণা সহদেওয়ের দিকে | চোখ দুটোতে লোভী শ্বাপদের ছায়া | গা ঘিন ঘিন করে উঠেছিলো সুপর্ণার, ঠিক যেমন মিমির করতো |
কি করে একটি নরম শিশু শরীর পেয়ে কামনা জেগে ওঠে এই নরাধমদের ? ঠিক কি ভাবনা এসে গ্রাস করে ওদের ? সুপর্ণা ভাবতে চেষ্টা করে | কি ভাবে, কি কি চিন্তা আসে একজন ধর্ষকের ? এখানেও খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক | ফুলিয়া কি খাদ্য? কিংবা মিমি ? কচি মাংসের স্বাদ ঠিক কতটা সুস্বাদু? চোখ বন্ধ করে বস্তির ঘরে পৌঁছে যায় সুপর্ণা | সরোজমিনে তদন্ত করে এসেছে প্রতিটি জায়গা আজ | সঙ্গী ছিলো রুমালী | এতক্ষণে হয়তো টিভির পর্দায় সুপর্ণার ছবি, তার বক্তব্য পেশ করা হয়ে গেছে | সেই ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই এই মুহুর্তে সুপর্ণার | সে এখন সহদেওর ঘরে |
একটা চৌকি, তার উপরে সহদেও বসে আছে | কোলে ফুলিয়া | সহদেওয়ের হাত ঘুরছে | ফুলিয়া কোকাচ্ছে … লাগছে দাদুভাই… ছেড়ে দাও… সহদেও ধমকাচ্ছে… চুপ গুড়িয়া, ইসমে মজা বহুত হ্যায় ….. ফুলিয়া ছটপট করছে … না না মজা নেই, ব্যথা ব্যথা ..বড্ড ব্যথা… সহদেওর চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে .. লাল… আরো লাল… মিমি ভয়ে শিউরে উঠছে… হাতটা টেনে বার করে দিতে চাইছে … ভিজে উঠছে ফুল ফুল ছাপ প্যান্টটা… শিকারীর হাতের মুঠোয় শিকার …. সাপ ফনা তুলছে… ধীরে ধীরে গ্রাস করছে খাদ্যকে …. আর্তনাদ…… আকাশ বাতাস জুড়ে ফেটে পড়ছে রক্তাক্ত আর্তনাদ |
এক সর্বগ্রাসী কাঁপুনি ঘিরে ধরেছে সুপর্ণাকে | আহ… আহ….. আর একটু…… আর একটু আর্তনাদ……আর সামান্য একটু আর্তনাদ… তাতেই পরম মুক্তির স্বাদ…… আহ………….
কান্ত শরীর আছড়ে পড়ে বিছানায় | রাতপোশাকের আড়ালে সুপর্ণা আবিস্কার করে তার হাত ভিজে উঠেছে , সুপর্ণা এখন বহতা নদী… সারাদিন প্রবল উত্তেজনার প্রশমন ঘটলো |
মাথাটা ছেড়ে যাচ্ছে একটু একটু করে… এবার সুপর্ণা শান্তিতে ঘুমাবে |
…………………………………………………………………………………………………………
(সমাপ্ত)
©টুসির কলমে… শাশ্বতী চৌধুরী
(ছবি সংগৃহীত)
ধর্ষকাম