• রাত ৮:২৮ মিনিট বুধবার
  • ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ঋতু : গ্রীষ্মকাল
  • ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
এই মাত্র পাওয়া খবর :
সোনারগাঁয়ে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ, ৪ জন বাতিল সোনারগাঁয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যুবককে অপহরন করে নির্যাতনের অভিযোগ সানাউল্লাহকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যা চেষ্টা ও ১৫ মামলার আসামী গ্রেপ্তার বন্দরে ইউএনও অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের আত্মহত্যা সোনারগাঁয়ে ২দিন ধরে মাদ্রাসা ছাত্র নিখোঁজ সোনারগাঁয়ে দুই ব্যাক্তি আটক, ৪৯ লাখ জাল টাকা উদ্ধার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আজিজুল ইসলাম মুকুল সোনারগাঁয়ে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৪ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল তাপদাহের প্রভাব পড়েছে সোনারগাঁয়ের বাজার ও মার্কেটগুলোতে মাহফুজুর রহমান কালামের নির্বাচনী প্রচারনায় নেতাকর্মীর ঢল সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুল চিকিৎসায় নারীর মৃত্যুর অভিযোগ সোনারগাঁ থেকে বাড়ি ফেরার পথে লাশ হলেন পিতা-পুত্র তীব্র গরমের কারনে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা খুলবে ২৮ এপ্রিল! অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মাহফুজুর রহমান কালাম সোনারগাঁয়ে প্রাথমিকে অনলাইন বদলী আবেদনে অনিয়মের অভিযোগ জামপুরে ৪টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মী নিয়ে বাবুল ওমরের নির্বাচনী প্রচারনা সভা সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মী বেচা-কেনার হিড়িক সোনারগাঁয়ে নেতাকর্মী বেচা-কেনার হিড়িক সোনারগাঁয়ে করোনা যোদ্ধাকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা সোনারগাঁয়ে যাত্রীবাহি বাসের ধাক্কায় অটোচালক নিহত
যুদ্ধের হাতি যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য পাথরের তৈরি আগ্রার কেল্লাকে ৬০ ডিগ্রি ঝোঁকানো হয়েছিল

যুদ্ধের হাতি যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য পাথরের তৈরি আগ্রার কেল্লাকে ৬০ ডিগ্রি ঝোঁকানো হয়েছিল

Logo


মুঘল সম্রাটদের তৈরি সেরা স্থাপত্যের মধ্যে তাজমহলের পরেই হয়তো নাম উঠে আসবে

আমাদের এই বিচিত্র দেশ ভারতবর্ষের কাহিনিগুলিও বিচিত্র। কোথাও ভালোবাসার জন্য স্মৃতি সৌধ তৈরি করে তা জগৎবিখ্যাত হয়। কোথাও আবার পাহাড়িয়া মনোরম স্থানের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে শয়ে শয়ে মানব কঙ্কাল। কোনও মন্দিরে কিলবিল করে বেড়ায় জ্যান্ত ইঁদুর। কোনও মসজিদে চমৎকারী পাথর শূন্যে ভাসাতে পারেন ভক্তরা। এই বৈচিত্র নিয়েই স্বমহিমায় বিরাজ করছে আমাদের দেশ। একেক স্তানের ইতিহাস একেক রকম। এবং বলা বাহুল্য সেগুলি প্রায় সবই অদ্ভূত, আশ্চর্যময় এবং চিত্তাকর্ষক।

এরকমই এক অদ্ভূত স্থাপত্য আগ্রার কেল্লা। এর আরেক নাম আগ্রার লাল কেল্লা। তাজমহল থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আগ্রার এই লাল কেল্লা মুঘল সাম্রাজ্যের অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই কেল্লাটি UNESCO-র বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় জায়গা পেয়েছে সেই ১৯৮৩ সালে।
আগ্রা দুর্গের স্থাপত্য অপূর্ব সুন্দর। কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে। শেষ হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ঔরঙ্গজেবের সময়।

জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানের রাজত্বকালে দুৰ্গের বহু নতুন স্থান নিৰ্মিত হয়। শাহজাহান পুত্র দারা এই আগ্রা দুর্গের অনেক অংশ নতুন করে নির্মাণ করেন। সাদা রং প্রিয় ছিল তাঁর, সেকারণেই দুর্গের বহু স্থান ভেঙে নতুন করে শ্বেত পাথরের নকশা করেন তিনি। আগ্ৰা দুর্গ রাঙা বেলেপাথরের তৈরি। দুৰ্গের প্রাঙ্গণের আয়তন আড়াই কিলোমিটার। দুৰ্গটির অভ্যন্তরে অনেক প্ৰাসাদ, মিনার এবং মসজিদ আছে। দুৰ্গের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য দৰ্শনীয় স্থানসমূহ হল – খাস মহল, শীশ মহল, অষ্টভূজাকৃতির মুহম্মন বুৰ্জ, দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম, মোতি মসজিদ, নাগিনা মসজিদ ইত্যাদি। কেল্লার স্থাপত্যের কাজে ‘তিমুরিদ পারসিক’ শিল্পকলা এবং ‘ভারতীয় শিল্পকলা’র অনবদ্য মিশ্ৰণ দেখা যায়।

​দুর্গ রহস্য

আগ্রা ফোর্টের একটি বড় অংশ নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান। যদিও কিছু প্রাথমিক কাঠামো নির্মিত হয়েছিল সম্রাট আকবরের আমলে। দুর্গটি অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতির। পূর্ব দিকে একটি সোজা এবং দীর্ঘ প্রাচীর দিয়ে চ্যাপ্টাকৃতি। এর সামনেই রয়েছে নদী। দুর্গের চারপাশ লাল বেলেপাথরের প্রাচীর পর্যায়ক্রমে বুরুজ দিয়ে ঘেরা। আগ্রা দুর্গের বাইরের প্রাচীরের চারপাশে একটি ১০ মিটার গভীর এবং ৯ মিটার চওড়া পরিখা রয়েছে এবং ভিতরে রয়েছে একটি বিশাল ২২ মিটার প্রাচীর।

দর্শনার্থীরা কেল্লায় প্রবেশ করতে পারেন কেবল অমর সিং দরজা দিয়ে। প্রথম ভবনটি হল জাহাঙ্গীর মহল। পাথরের তৈরি এই মহলের নির্মাণ শৈলী অনবদ্য। গোলাপ জল রাখার একটি পাত্রে ফার্সি শ্লোক সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা রয়েছে। জাহাঙ্গীর মহলের ঠিক পাশেই আছে আকবরের রানি জোধা বাইয়ের প্রাসাদ।

বিভিন্ন সময়ে এই দুর্গ এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল যা হার মানায় কাল্পনিক কাহিনিকেও। সেই গল্পগুলি জানলে আগ্রা কেল্লা ঘোরার আকর্ষণ আরও বেড়ে যাবে।

​কেল্লার হিন্দু মন্দির

মুসলমান শাসকের তৈরি প্রাসাদের ভিতরে রয়েছে একটি হিন্দু মন্দির। এটি অবশ্য মুঘল আমলের একধরনের পরম্পরাই ছিল। সম্রাটের হিন্দু পত্নি বা আত্মীয়রা এই মন্দিরে পুজো দিতেন। প্রধানত আকবর মহীষী জোধা বাইয়ের কারণেই হিন্দু ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রবেশ ঘটে ইসলাম রাজ পরিবারে। এছাড়াও শাসক হিসেবে হিন্দুদের আস্থা ভাজনের উদ্দেশ্যেও নিজের প্রাসাদে হিন্দু ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে সম্মান দেখাতেন সম্রাট আকবর।

​প্রবেশদ্বারে গরম তেল, ঝোঁকানো মহল

আগ্রা কেল্লার দক্ষিণ মুখ্য প্রবেশদ্বারটি ৬০ ডিগ্রি ঝোঁকানো। এর পিছনেও রয়েছে এক চিত্তাকর্ষক কারণ। এই পথ দিয়ে প্রাসাদের ভিতর শত্রু অতর্কিতে হামলা করতে পারে। সেই আশঙ্কায় এখানে এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। শত্রু যাতে হাতি চড়ে দুর্গে প্রবেশ করতে না পারে সে কারণে এই প্রবেশদ্বার ৬০ ডিগ্রি ঝোঁকানো হয়েছিল। এছাড়াও এই দ্বারের উপরে সবসময় গরম তেল রাখা থাকত। যাতে সেই দরকার কখনও জং না ধরে। তখনকার বিজ্ঞান এবং বাস্তুকলা অনুযায়ী এই ধরনের কৌশল ছিল অত্যন্ত প্রশংসামূলক।

৪০০০ বেলে পাথরে তৈরি দুর্গ

আগ্রা কেল্লা তৈরি হয়েছে মূলত লাল রঙের বেলে পাথর দিয়ে। বলা হয় প্রায় চার হাজার বেলে পাথর লেগেছে এই কেল্লা নির্মাণ করতে। অনুমান করা হয় যে এই ধরনে বেলে পাথর সম্রাট আকবরের পছন্দের ছিল। রাজস্থানের আরাউলি থেকে সংগ্রহীত বেলেপাথর দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গটির সংস্কার সাধন করেন। দুর্গের ভিতরের অংশে ইটের গাঁথুনি আর বাইরের অংশে আছে বেলেপাথরের আস্তরণ। প্রায় ৪ হাজার কর্মী দীর্ঘ ৮ বছর পরিশ্রম করে ১৫৭৩ সালে আগ্রা দুর্গের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন।

​সিংহাসন চুরি

মুঘল শাসনকাল যখন ক্রমশ পতনের দিকে তখন থেকেই আগ্রা দুর্গ দখলের চেষ্টা শুরু করেছিলেন অনেকে। রাজকুমারের প্রিয় ময়ূর সিংহাসনে লাগানো ছিল বিশ্ব বিখ্যাত কোহিনূর হীরে। সেই সিংহাসন লুট করে নেন পারস্যিক শাসক নাদির শাহ। সেটি পার্স্যে চলে যায়। পরে হাত ঘুরে ঘুরে সেটি চলে আসে ইংরেজদের কাছে। বলাবাহুল্য ইংরেজরা সেটি লুট করে নেয় এবং এখনও সেই হীরে ইংল্যান্ডের রাজপ্রাসাদে বর্তমান।

​দুর্গের হাত বদল

বর্তমান দুর্গের অধিকাংশ মুঘল আমলে নির্মিত হলেও একাদশ শতকে সেখানে একটি প্রাচীন দুর্গ আগে থেকেই ছিল। ১৪৭৫ সালে আগ্রা ফোর্ট ছিল রাজা বাদল সিং-এর অধীনে। তখন এটি ছিল একটি সামরিক দুর্গ। নাম ছিল বাদলগড়।

  • ১০৮০ সালে গজনভীর সামরিক বাহিনী এই দুর্গ দখল করে।
  • সুলতান সিকান্দার লোদি ১৪৮৮-১৫১৭ সাল পর্যন্ত তাঁর দিল্লি থেকে আগ্রায় স্থানান্তরিত করেন। এরপর থেকে আগ্রা দ্বিতীয় রাজধানীর পেয়েছিল এবং সুলতানি আমলে আগ্রা থেকেই রাজকীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত। তার পুত্র ইব্রাহিম লোদি ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট বাবরের নিকট পরাজিত ও নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এখানে অবস্থান করেন।
  • ১৫২৬ সালে দিল্লি জয়ের পর সম্রাট বাবর আগ্রা দুর্গে প্রবেশ করেন। তিনি এখানে একটি বাউলি বা সিঁড়ি যুক্ত ইঁদারা নির্মাণ করেন। ১৫৩০ সালে এই দুর্গে সম্রাট হুমায়ুনের রাজ্যাভিষেক হয়। ১৫৪০ সালে হুমায়ুন বিলগ্রামে শের শাহের কাছে পরাজিত হন। ১৫৫৫ সাল পর্যন্ত এই দুর্গ শের শাহের দখলে থাকে। এরপর হুমায়ন আগ্রা দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।
  • ১৫৫৩ সালে আগ্রা জয় করেন আদিল শাহ শূরীর সেনাপতি হিমু এবং ১৫৫৬ সালে তিনি আকবরের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন।
  • ১৫৫৬ সালে আদিল শাহ শূরীর সেনাপতি হিমু আগ্রা ফোর্ট পুনরায় দখল করে এবং আগ্রার পলায়নরত গভর্নরের পশ্চাতধাবন করেন। এসময়ে তুঘলকাবাদের সমরাঙ্গণে মোগল বাহিনীর সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়। যা তুঘলাকাবাদের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
  • ১৫৫৮ সালে সম্রাট আকবর আগ্রায় রাজধানী স্থানান্তর করেন।
  • সম্রাট শাহজাহানের আমলে আগ্রা দুর্গ তার বর্তমান রূপ লাভ করে। শাহাজাহান লাল বেলেপাথরের নির্মিত ইামারতের চেয়ে শ্বেত পাথর দ্বারা নির্মিত ভবন অধিকতর পছন্দ করতেন। একই পছন্দ ছিল তাঁর ছেলে দারার।
  • এরপর বিভিন্ন সময়ে মারাঠা এবং তাদের শত্রুরা আগ্রা দুর্গ দখল করে।
  • ১৭৬১ সালে আহমেদ শাহ আবদালি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজিত করলেন। পরবর্তী এক দশক মারাঠাদের দুর্গ দখলের চেষ্টা বিফল হয়। পরে এই দুর্গ ব্রিটিশরা দখল করে নেয়।
  • ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে এই দুর্গে দেশীয় সেনা এবং ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
  • ​সিনেমায় দুর্গ

    বিখ্যাত বলিউড ছবি ‘মুঘল-এ-আজম’-এর সুপারহিট গান ‘জব পেয়ায় কিয়া তো ডরনা কেয়া’-র শ্যুটিং হয়েছিল এই আগ্রা ফোর্টে।


Logo

Website Design & Developed By MD Fahim Haque - Web Solution