নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকমঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে বর্তমানে একটি পরিচিত শব্দবন্ধ হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রশাসন ও ব্যক্তি পর্যায়ে এ শব্দবন্ধ এখন সবার মুখে মুখে। বোধ করি এটি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ যাতে একজন থেকে আরেকজন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন। সংক্রমন রোধে দূরত্ব বজায় রাখা কি কখনো সামাজিক দূরত্ব হতে পারে ? বরং একে বলা যায় শারীরিক দূরত্ব। কারণ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে একজনের সংস্পর্শে যাতে আরেকজন না আসেন এবং অন্তত তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে সহজেই অনুমান করা যায় করোনা সংক্রমন রোধে শারীরিক দূরত্বই প্রধান প্রতিরোধ ব্যবস্থা। একটা বিষয় লক্ষ্য করলে সবাই বুঝতে পারবেন করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ দৃষ্টান্তমূলক মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। রাষ্ট্র, সমাজ, প্রশাসন ও ব্যক্তি সবাই অসহায় দরিদ্র মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সরকারি সাহায্য নিয়ে কর্মহীন অসহায় পরিবারের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। মোট কথা যে যার অবস্থানে থেকে সাধ্যানুযায়ী সাহায্য অব্যাহত রেখেছেন। যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হতো তাহলে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হতো না। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করাই এ সংকটময় মুহুর্তের প্রধান কাজ হওয়া উচিত। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এসব কার্যক্রমে কী প্রমান হয় না আমাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব কমেছে বরং বেড়েছে সামাজিক বন্ধন। যেখানে সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে আমরা শিক্ষিত সচেতন হয়েও প্রতিনিয়ত এ ভুল শব্দটি ব্যবহার করে যাচ্ছি অথচ কেউই এটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।
খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষন করেছেন, সম্প্রতি তারাও সামাজিক দূরত্ব কথাটি পরিহার করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা এখন বলছেন ‘সামাজিক দূরত্ব’ নয়, করোনা ঠেকাতে বজায় রাখতে হবে ‘শারীরিক দূরত্ব’।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিয়েল অলড্রিচ এর মতে, এই শব্দবন্ধটি মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে বরং সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করা প্রয়োজন, এবং তা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই সম্ভব।
সামাজিক মেলামেশা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তা সমাজব্যবস্থাকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে। এমন দূর্যোগময় সময়ে ফোন কিংবা অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ সামাজিক সম্পর্ক ধরে রেখেছেন।
চলমান দুর্যোগ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধনের বিকল্প নেই। এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললে তা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নিরুৎসাহিত করা হবে।
সুতরাং সামাজিক দূরত্ব শব্দটি মানুষের মনে ভুল ধারণার জন্ম দিচ্ছে, যা এত বড় একটি বিপর্যয় ঠেকানোর ক্ষেত্রে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তাই সামাজিক দূরত্ব না বলে আসুন এখন থেকে সবাই সঠিক শব্দটি ব্যবহার করি আর তা হচ্ছে শারীরিক দূরত্ব।
লেখকঃ সম্পাদক, চারদিক