নতুন বছর মানে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই নতুন ক্লাস । বছরের শুরুতেই সরকার প্রথম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত বিনামুল্যে বই শিক্ষাথীদের মধ্যে বিতরন করে। নতুন বই পাওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা যে পরিমান খুশি হন তার চেয়ে বেশী খুশি হন সোনারগাঁয়ের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও ম্যানিজিং কমিটির সদস্যরা আর প্রকাশনার মালিকরা। কারণ নতুন বই মানেই নতুন গাইড বই নিত্য নতুন ব্যাকারন বই সহ না রঙ্গের বইয়ের সমাহার। বিশেষ করে কিন্ডার গার্টেনগুলোর বলতে গেলে ঈদের দিন। সরকার প্রত্যেক শ্রেনীর জন্য বাধ্যতামূলক বই বিতরন করলেও প্রত্যেক কিন্ডার গার্ডেনগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় এ গাধা অতিরিক্ত বই। যে বইগুলো বহন করতে পারে না সেই ক্লাসের শিক্ষার্থীরা। এভাবে বই দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলে প্রত্যেকটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। যে স্কুল যত বেশী বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারবে সে স্কুলই যেন ভালো। এ ভাবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বুঝানো হয় ব্যবসার আড়ালে কিন্ডার গার্টেন মালিকদের অভিনব ব্যবসা। কিন্ডার গার্ডেট স্কুলের সাথে পিছিয়ে নেই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। প্রকাশনার কাছ থেকে বিশেষ কমিশনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় অতিরিক্ত বই। যা কিনতে হিমশিম খেতে হয় অনেক অভিভাবকে। স্কুলগুলোতে সরকারের নজরদারী না থাকায় এভাবে শিক্ষার নামে অভিনব প্রতারনা করছে। আর বৎসর শেষে বিশেষ কমিশনের আশায় শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারনা লিপ্ত রয়েছেন মানুষ গড়ার কারিগর কিছু অসাধু শিক্ষক।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে সোনারগাঁয়ে ১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬টি এছাড়া কতোগুলো কিন্ডার গার্ডেন আছে সোনারগাঁয়ে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। এসব বিদ্যালয়গুলোতে সরকার বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন প্রথম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত বিনামুল্যে পাঠ্য বই। বই পাওয়ার সাথে সাথে বিদ্যালয়গুলো তাদের পছন্দ মতো বিভিন্ন প্রকাশনা সাথে লাখ টাকা কমিশনের চুক্তি করে শিক্ষার্থীদের কিনে আনতে বলেন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বই। শুধু বই কেনা নয় বিদ্যালয়গুলো নির্ধারন করে দেন কোন প্রকাশনী এবং কোন লাইব্রেরী থেকে বইগুলো কিনতে হবে। এ সুযোগে লাইব্রেরীগুলো চড়াদামে বই বিক্রি করেন শিক্ষার্থীদের কাছে। এসব বই কিনতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হিমশিম খেলেও মাঝ খান থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, লাইব্রেরী ও প্রকাশনীগুলো হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
জানাগেছে, বছর শুরুতে সোনারগাঁয়ে কিন্ডার গার্ডেন গুলো শিক্ষার নামে পন্য বেচাকেনাতে ব্যস্ত হয়ে যান। সরকার প্রথম শ্রেনীতে তিনটি বই বাধ্যতামুলক করে দিলেও ব্যবসার কথা চিন্তা করে কিন্ডারগার্টেনগুলো পাঠ্য বইয়ের সাথে ৬/৭টি বই তাদের নির্ধারিত ডায়েরী খাতা, জামা, টাইসহ অন্যান্য জিনিসপত্র, সেশন ফি ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ফি ধরিয়ে দেন কোমল মতি শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের হাতে। যার জন্য অভিভাবককে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা।
টাকার দিক থেকে পিছিয়ে নেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকার প্রত্যেক শ্রেনীর জন্য নিধারিত বই পাঠ্য বিতরন করলেও বিদ্যালয়গুলো সরকারের আইন অমান্য করে বিভিন্ন ধরনের অবাঞ্চিত বই কিনতে বাধ্য করে শিক্ষার্থীদের। এজন্য প্রত্যেক স্কুলগুলো প্রকাশনা ও লাইব্রেরী নাম নিধারণ করে দেন। আর এ বই গুলো ওই লাইব্রেরী না ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। যদি কোন শিক্ষার্থী এ আদেশ অমান্য করে তাহলে ওই শিক্ষাথীকে পেতে হয় শিক্ষকের লাঞ্চনা।
সূত্র জানায়, বছরের শুরুতে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরী লাখ লাখ টাকা চুক্তি করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ম্যানিজিং কমিটি ও অন্যন্যা শিক্ষকদের সাথে। যাতে ওই বিদ্যালয়গুলো তাদের প্রকাশনা ও লাইব্রেরী থেকে বাইগুলো কিনে। বছরের শুরুতে লাইব্রেরীগুলোতে হিড়িক পড়ে যায় নতুন বই কেনার। আর এ সুযোগগুলো কাছে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু প্রকাশনা প্রতষ্ঠিান ও লাইব্রেরী মালিক আর বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে মোগরাপাড়া এইচজিজিএস স্মৃতি বিদ্যায়তনে পড়েন। বছরের শুরুতে সরকারের দেওয়া বিনামুল্যে বই হাতে পেলেও ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে নতুন নতুন বই কেনার বায়না। এই বই সেই বই এ প্রকাশনী ওই প্রকাশনী বিভিন্ন লাইব্রেরী ইত্যাদি। আর বই গুলো স্কুলের দেওয়া নির্ধারিত লাইব্রেরী ছাড়া পাওয়া যায় না। সে লাইব্রেরী গিয়ে বই চাইলে বইয়ের ভেতরে লেখা উচ্চ মুল্যের চেয়ে নামে নাত্র কমিশন দিয়ে বাধ্য করে বই কিনতে। স্কুল থেকে যে লাইব্রেরী বলে দিয়েছে সে লাইব্রেরী ছাড়া অন্য কোন লাইব্রেরীতে এই বই নেই। কারণ জিঞ্জেস করতে এই লাইব্রেরীর মালিক জানান। ভাই লাখ টাকা চুক্তি করে বইগুলো বিক্রি করতে হয়। তাই উচ্চ মুল্য নেওয়া ছাড়া তাদের উপায় নেই।
এ ব্যাপারে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, ভাই বছরের প্রথম দিকে আমরা সুযোগ পাই কিছু টাকা কামানো। ব্যবসায়ীরা তো বছর ভরে ব্যবসা করে টাকা কামায়। আমরা বছর শেষে সে রকম ব্যবসার মতো টাকা কামানোর চেষ্টা করি। আমাদেরও তো সুখে থাকার সখ জাগে।