উ: একদম ছোটবেলাটা কেটেছে অসমে, ডেওমালিতে। ক্লাস থ্রি থেকে স্কুলজীবনের বাকি সময়টা কেটেছে নর্থ বেঙ্গলে। থ্রি থেকে টেন হোলি চাইল্ড স্কুলে আর ইলেভেন-টুয়েলভ বিন্নাগুড়ি কনভেন্টে। আর পাঁচটা মানুষের ছোটবেলার মতোই কেটেছে কিন্তু সময়টা। আত্মীয়স্বজন সকলেই কাছাকাছি থাকত। মামাবাড়ি তো একদম কাছেই ছিল। ফলে ভাইবোনদের সঙ্গে বেশ হইচই করেই কেটেছে সময়টা।

প্র: উত্তরবঙ্গের কনভেন্ট স্কুলে তো বেশ কড়া অনুশাসন। তার মধ্যে দুষ্টুমি করার সুযোগ পেতেন, নাকি একদমই শান্তশিষ্ট ছিলেন আপনি?

উ: আমি প্রচণ্ড দুষ্টু ছিলাম। অন্য ক্লাসে গিয়ে কারও টিফিন খেয়ে নিতাম বা এক জনের বই নিয়ে অন্য জনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিতাম! তবে টিচারদের কাছে কোনও দিন ধরা পড়িনি। কারণ পড়াশোনার বাইরে আর যা কিছু স্কুলে হত (কো-কারিকুলার), সব কিছুতে আমি থাকতাম। গেমস লি়ডার ছিলাম, কারণ খেলাধুলো ভালবাসতাম। হাইজাম্প, লংজাম্প, ১০০ মিটার দৌড়, সবেতে নাম দিতাম। একটা সময় তো ক্লাস লিডারও ছিলাম। তবে দুষ্টুমিগুলো মাঝখানে গিয়ে করে আসতাম!

প্র: এত সুন্দর সব জায়গা ওখানে। একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে?

উ: আমার মোশন সিকনেস ছিল। তাই গাড়িতে চেপে পাহাড়ে বেড়ানোর তেমন কোনও অভিজ্ঞতা আমার হয়নি ছোটবেলায়। আমরা বরং ডুয়ার্স ঘুরতে যেতাম। বাড়ি থেকে এক ঘণ্টা দূরে গেলেই বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর পিকনিক স্পট ছিল। লালিগোরাস, খুনিয়া, জলঢাকা… ও সব জায়গায় প্রায়ই যেতাম আমরা। আর পিকনিকে গেলেই খুব মজা হত। বাসে উঠলে বাচ্চাদের হাতে স্যান্ডউইচ, কমলালেবু ধরিয়ে দেওয়া হত। সেই কমলালেবুর স্বাদ অসামান্য! একদম ছোটবেলায় আমি মাংস খেতাম না। আমার জন্য আলাদা করে ডিমের ঝোল, ফুলকপির ঝোল রান্না করা হত। মজা করে কাটত সময়গুলো।

প্র: জলপাইগুড়িতে আপনাদের পাড়াটা কেমন ছিল?

উ: পান্দাপাড়া কালীবাড়িতে  ছিল আমাদের বাড়ি। আমাদের পাড়াটাকে ছোটবেলায় যেমন দেখেছিলাম, এখনও তেমনই আছে। তিন-চারটে বাড়ি নতুন হয়েছে। দোকানপাট হয়েছে। কিন্তু মূল ব্যাপারটা একই রয়ে গিয়েছে। বড় বড় গাছে ঢাকা। সকলেই একে-অপরের পরিচিত। সকলেই সুখে-দুঃখে একে-অপরের পাশে থাকে।

প্র: পাড়ার উৎসবগুলোয় অংশ নিতেন?

উ: দুর্গাপুজোয় বড়রা সিঁদুরখেলায় অংশ নিতেন। আমরা ছোটরা মাকে মিষ্টি খাওয়াতে, পায়ে বই ঠেকাতে যেতাম। তবে পাড়ায় সাংঘাতিক হুল্লোড় হত দোলের সময়। তিন-চারদিন ধরে খেলা চলত। ‌এবং নির্দোষ নিরামিশ আবির নয়, বাঁদুরে রং, বার্নিশ রঙের মতো ভয়াবহ সব রং নিয়ে মহা হুল্লোড়ে দোল খেলা হত। কেউ কেউ ছিল ভারী দুষ্টু। রং দিয়ে দাঁত মাজিয়ে দিত অন্যদের। তারা হাসলে তখন দেখা যেত মুখ ভর্তি লাল বা নীল রং! খেলা শেষ হলে সব ছোটদের হাতে একটা করে সাবান ধরিয়ে দেওয়া হত আর ওই সব রং তুলতে তুলতে গোটা সাবান শেষ। তার পর আমরা সকলে মিলে মামার বাড়ি যেতাম খাওয়া-দাওয়া করতে। সেখানে পোলাও, মটন, মাছের কালিয়া খাওয়া হত। সঙ্গে মিষ্টির ছড়াছড়ি…

প্র: পাহাড়ি এলাকার মেয়েদের ত্বক এবং চুলের জেল্লাই আলাদা। আপনিও কি ওখানকার আবহাওয়াকে ধন্যবাদ দেন এর জন্য?

উ: আবহাওয়ার থেকেও বেশি ধন্যবাদ দিই ওখানকার জলকে। জলপাইগুড়িতে কুয়োর জল তুলে ব্যবহার করা হয়। দ্যাট ইজ দ্য মেন সোর্স অব ওয়াটার। মিউনিসিপ্যালিটির জল কিন্তু ওখানে কেউ খান না। কুয়োর জল তুলে পিউরিফাই করে খাওয়া হয় বা রান্নার কাজ হয়। তা ছাড়া যে জলটা আমরা স্নানের জন্য ব্যবহার করতাম, সেই জলে দু’বার স্নান করলেই কারও আর কন্ডিশনার লাগাতে হত না চুলে! আঠারো বছর বয়সে যখন কলকাতায় চলে এলাম, সকলে আমাকে বলত, ‘তোর কী স্ট্রেটেন করা চুল?’ আমি মনে মনে হাসতাম আর ধন্যবাদ দিতাম জলপাইগুড়ির জলকে।