ফজলে রাব্বি সোহেল: জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্ম বার্ষিকী ও ঈদ উপলক্ষে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বিশিষ্ট্য সঙ্গীতশিল্পী উত্তমের ৩টি নতুন গান। নজরুলের একটি গান শিল্পী নিজে গেয়েছেন। গানটি শিল্পী তাঁর নিজস্ব স্টুডিও আনন্দিনী মিউজিক সেন্টারে নিজেই সঙ্গীতায়োজন করেছেন। শিগগিরই জি সিরিজের ব্যানারে শ্রোতারা শুনতে পাবেন গানটি। গানটি নিয়ে উত্তম বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ অধ্যাপনার পাশাপাশি আমি মঞ্চেই বেশি গান করি। মঞ্চ, টিভি ও বেতারে নিয়মিত গাওয়া হয়। সময় নিয়ে মৌলিক গানও তৈরি করি। গাই অন্যদের গানও।‘ উত্তম নিয়মিতই শ্রোতাদের এই সময়ে সিঙ্গেল গান উপহার দেন। ভবিষ্যতেও গান প্রকাশ অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।।’ বর্তমান সময়ের নিরিখে একটু আধুনিক ফরমেটে করা হয়েছে নজরুলের এই গানটি। এমন ঘরানার গান এখানে খুব কম প্রকাশ হয় । গানটির কথা রিলিজের আগে বলতে চান নি তিনি। শিল্পী বলেন, গানের কথাগুলো খুব সুন্দর। সুরটাও মিষ্টি। গাইতে খুব ভালো লেগেছে। এখন শ্রোতাদের ভাল লাগার বিষয়, এটুকু বলা যায় ভাল শ্রোতারা নিরাস হবেন না।’ এছাড়া ঈদ উপলক্ষে তাঁর কথা-সুর ও সঙ্গীতে দু‘টি মৌলিক গান তিনি করিয়েছেন তাঁর এক গানের ছাত্র ইব্রাহীমকে দিয়ে। ঈদে কলের গান থেকে এই দু“টি গান রিলিজ হবে।
ঈদে দেশের শোবিজ অঙ্গন জমজমাট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে সঙ্গীত নিয়ে শুরু হয় তোড়জোড়। তবে বাংলা মুল ধারার শুদ্ধ সঙ্গীতের দেখা মেলে খুব কম। এই ক্ষেত্রে উত্তমের গানটি ব্যাতক্রম বলতেই হবে। উল্লেখ্য, উত্তম ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গীত সাধনায় রত আছেন। তথাকথিত তারকাখ্যাতি পেতে নয় ভালবেসে জীবন যাপনের একটি পদ্ধতি হিসেবেই তিনি গানের চর্চায় আছেন নিবিষ্টভাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ব্যান্ড মিউজিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিবোর্ডিস্ট হিসেবে। মঞ্চে ও টিভিতে নিজে গিটার বাজিয়ে গান করেন। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নজরুলসঙ্গীত ও আধুনিক গানের এ গ্রেডের তালিকাভূক্ত শিল্পী উত্তম।
মঞ্চ, টিভি ও সেই ক্যাসেট আমল থেকে পরে সিডি, ও ইউটিউবে মৌলিক ও কাভার সং করে মিডিয়ায় পরিচিতি পান উত্তমকুমার রায়। এর পর থেকে একের পর এক মৌলিক ও নজরুলের গানে কণ্ঠ দিচ্ছেন। বর্তমান সময়েও স্টেজ শো, টিভি অনুষ্ঠান এফএম রেডিওর লাইভ নিয়ে ব্যাস্ত সময পার করছেন তিনি। শিল্পী বলেন, আমার দু’টো প্রফেশন। আমি কাজী ফজলুল হক ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক আর গান গাই। দু’টো কাজই ভালবেসে করি। লাভ —ক্ষতির কথা খুব একটা ভাবি না। ভালবাসাটাই আমার কাছে মূখ্য। গান ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না। গানের আমি একজন ভালো শ্রোতাও। দেশ ও বিশ্বের সবার গান শুনি। পাশাপাশি লেখালিখি করতাম, করি সংবাদকর্মী হিসেবে।
উত্তমের গান গাওয়ার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। সবখানেই সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জুটেছে সম্মান আর পুরষ্কার। নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত ও সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির নজরুলের প্রশিক্ষক হিসেবে সার্টিফিকেটধারী। দীর্ঘদিন শিখেছেন ওখানে। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী থেকে বিমিউজ সম্পন্ন করেছেন। তালিম নিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান সব সঙ্গীতদের কাছে। এখন নিজেও গান শেখান। উত্তম দীর্ঘদিন নজরুল চর্চা করেছেন সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সোহরাব হোসেনের কাছে। উত্তমের সঙ্গীতের প্রথম শিক্ষক স্থানীয় শিশু একাডেমিতে প্রয়াত দেলোয়ার হক। বিশুদ্ধ মার্গসঙ্গীত শিখেছেন উস্তাদ মিহির লালা, অনিলকুমার সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য, উস্তাদ মাশকুর আলী খান, শুভ্রা গুহ, বিদুষী শান্তি শর্মা প্রমুখের কাছে। বছর পাঁচেক ধরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে উচ্চতর তালিম নিচ্ছেন পণ্ডিত তুষার দত্তের কাছে।
২০০৪ সালে তাঁর ডেব্যু অ্যালবাম হাওয়া ছিল আধুনিক গানের। গেলো ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে অগ্নিবীণার ব্যানারে প্রকাশিত উত্তমকুমারের ভক্তিমূলক নজরুল সঙ্গীতের একক অ্যালবাম, এলো রে শ্রীদুর্গা বেশ সাড়া জাগায়। কাজী নজরুলের বাছাই করা অবিস্মরণীয় কীর্তন, ভজন, বাউল, শ্যামা বিষয়ক ৮টি ভক্তিগীতি ছিল অ্যালবামটিতে। আধুনিক যন্ত্রানুষঙ্গে কিন্তু শুদ্ধ বাণী ও সুরের গানগুলো শ্রোতাদের মন কাড়ে।
এরপর একসঙ্গে আরো ছয়টি প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন উত্তম। যার মধ্যে রয়েছে ফোক ফিউশন, আধুনিক, রবীন্দ্র ও সুফি ফিউশন। নিজের স্টুডিওতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন উত্তম। নিজে ছাড়াও তাঁর পরিচালনায় আরো বেশ ক‘জন শিল্পী এতে কাজ করছেন। এই প্রসঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী উত্তম এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি চান একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্নধরণের মিউজিক শোনা ও চর্চার অভ্যেস। চান তাই সব ধরণের গান গাইতে। গিটার ও কি-বোর্ড বাজিয়ে হিসেবে নজর কাড়লেও অন্য বেশ কটি বাদ্যযন্ত্রও বাজাতে পারেন উত্তম। মঞ্চ ছাড়া স্টুডিওতেও এ কাজগুলো করতে বেশ আনন্দ পান তিনি। তিনি চান, প্রত্যেক স্কুল-কলেজে মিউজিক ক্লাস হোক। ছেলে-মেয়েরা গুরুর কাছে গিয়ে গান শিখুক। ৪-৫ বছর শেখার আগে কেউ পারফর্ম না করুক। গভীর আবেগী গায়নভঙ্গীর অনন্যতার জন্য এরইমধ্যে উত্তম সঙ্গীতজনদের ভালবাসা পেয়েছেন। বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি লাইভ অনুষ্ঠান করছেন। প্রচারিত হচ্ছে মিউজিক ভিডিও। সমানতালে স্টেজ শোও করে যাচ্ছেন নিয়মিত। । বর্তমানে নজরুলসঙ্গীত শিল্পী পরিষদের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। নজরুল ও তাঁর সঙ্গীতের প্রতি রয়েছে উত্তমের বিশেষ ভালবাসা। তবে সব ধরণের সঙ্গীতেই উত্তমের আগ্রহ। শুনেনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য রক-ফিউশন নির্বিচারে। গানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকারও করেছেন তিনি। আজ আর গান গাওয়ার কোনো বিকল্পই খুঁজে পান না।