শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী শিপন
জাতীয় কবি কাজী নজরূল ইসলামের ভাষায়
‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা
ক্ষুধায় আসেনা নীদ,
মূমূর্ষ সেই কৃষকের ঘরে আজ এসছে ঈদ’
পৃথিবীর তাবৎ ধর্ম ও সমাজে নিজ নিজ সংস্কৃতি ও অবকাঠামো অবয়বের উদযাপিত উৎসবাদিতে আর্থিক কার্যকলাপে বৃদ্ধির সাথে সাথে মানবিক মূল্য বোধের সৃজনশীল প্রেরণার সখ্য সোহাদ্য রূপ ধাবিত হয়ে থাকে। নানা উপায় উপলক্ষে সম্প্রীতিবোধের বিকাশ,অবনিবনার পরিবর্তন,মত পার্থক্যর অবসান,সমঝোতার পরিবেশ তৈরী করতে আমাদের মাঝে হাজির হয় জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।
মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টি কুলের শ্রেষ্ঠ হিসাবে সৃস্টি করেছেন ,তাইতো মানুসের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন অবকাশ নেই,সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু মানুষের কৃতকর্মের উপরই শ্রেষ্ঠত্ব টিকে থাকবে।মানব জীবনের অনেক নৈতিকতা বোধই ধর্ম থেকে উৎসারিত এবং ধর্ম শা¯্রসে সংজ্ঞায়িত। এই নৈতিকতার মূল লক্ষ্যে হলো সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখা।ধর্মীয় বিধি নিষেধের কারনে অবাধ যৌনচার থেকে মুক্ত হতেই পরিবার প্রথার উদ্ভব।অনৈতিক বিবাহ বর্হিভ’ত যৌনচার,দুর্নীতি,চুরি,ডাকাতি,মিথ্যাবলা, লোক ঠকানো,ঘুষ,মানুষ হত্যা ইত্যাদি পৃথিবীর সকল ধর্শগ্রন্থ আত্বস্থ করে পাপ পূণ্যের আলোতে ধর্মীয় অনুশাসনে রুপান্তরিত করেছে পৃথিবীতে একটি আদর্শ নৈতিক সমাজ বির্নিমানের চেষ্টা।কি›তু ধর্ম দৃশ্যমান ভাবে এখনো সমাজ নিয়ন্ত্রিত,সেখানে মানুষের মাঝে সার্বজনীন নৈতিকতা বোধ অত্যান্ত প্রবল।মুসলিম প্রধান দেশগুলোর দিকে তাকালে অনুধাবন করা যায় ধর্মীয় আচার অনুষ্টান ,নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাত সহ সর্বোপরি ইসলামের নির্দেশিত অবশ্য পালন করার বিষয় গুলোর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে শুক্রবার জুম্মার দিনে,রমজানের তাবারি নামাজ,শবে কদর,শবে বরাত,ঈদ এ মিলাদুন্নবী এবং দুটি বড় উৎসব ঈদল ফিতর ও ঈদুল আযহা উৎসবে যে উৎসাহ উদ্দিপনা সহিত অংশ গ্রহন যেন শুদ্ধ সমাজের রূপময় স্বচ্ছ বাংলার মাটি মনে হয়। এসব আয়োজন যেন নৈতিকতার করিডোরে আবদ্ধ।কিন্তু গভীর ভাবে উপলব্দি করলে আমাদের দেশের ডিজিটাল যুগের কাছে চাওয়া পাওয়ার মাঝে নৈতিক বিরোধী ,হাদিস কোরআনে নিষিদ্ধ যা কিনা কোন মুসলমান করতে পারার কথা নয় তাই প্রস্ফুটিত হয়ে ধরা দিচ্ছে। শতশত অনিয়ম,অপরাধ,আইন বিরোধী,রাষ্ট্রিয় স্বার্থ রক্ষা বিলুপ্ত করার অপপ্রয়াস সহ নানা পদের নানা রঙের,নানা কৌশলে,নানাহ অপরাধ সমুহ সমাজটাকে গ্রাস করে ফেলছে তা থেকে আমাদের মুক্তির একমাত্র পথ স্বচ্ছ রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থা।
ছোট বেলা হইতে আজ অব্দি একটি মৌখিক প্রবাদ ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে ‘জোড় যার মুল্লুক তার’বাস্তব পেক্ষাপটে তা আজ সত্যতে রুপান্তরিত হয়ে আছে। যে কিনা একটি পদবী লাগাতে পেরেছে কিংবা অপরাপর ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গ সেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অপ্রিয়তার জন্ম দিচ্ছে। যাতে করে সন্দেহতীত মনে ভাবতে হচ্ছে ধর্মীয় আচার পালনে যেমন সচেষ্টতা লক্ষ্য করা যায় সেভাবে নৈতিকতাবোধ স্থাপন করতে ব্যর্থই বলতে হচ্ছে।মানব মনে নৈতিকতা জাগ্রত হচ্ছেনা কেন নিজের প্রশ্নের কাছে নিজেই আটকে রইলাম।
সকল প্রকার দাবির প্রতি সজাগ থেকে অতি গুরুত্ব বহন করে আমাদের দেশ প্রেম।দেশ রক্ষা করা ঈমানের দাবি।দেশকে ভালোবাসলে ধনী গরীব উচু নিচু ভালো মন্দ সহ অনুকুল প্রতিকুল সর্বসময়ে সমুজ্জল রাখা নাগরিক দায়িত্ব।দেশপ্রেম শুধু সিমান্ত রক্ষা করা কিংবা দেশ বিরোধী কর্মকান্ডকে প্রতিহত করা নয়,নয় শুধু অন্যায় অবিচারকে রুখে দাড়ানো কিংবা অপরাধ দমন কর্মসূচির মধ্যে আবদ্ধ।দেশপ্রেম কিংবা দেশ প্রেমিক হতে হলে গরীব দূখিদের সাধ্যমতো সাহার্য্য সহযোগিতা করানো ,শিক্ষা,চিকিৎসা,বস্্র,বাসস্থান তৈরী করে দেওয়াটাকেই বোঝায়।
পৃথিবীর যতগুলো ধর্ম আছে তার প্রতিটিতে বিশ্বাস,ধারনা,দর্শন রয়েছে যা মৌলিক এবং অপরিবর্তনীয়,আপোষকামিতা নেই তাইতো মানবতার শান্তি ও কল্যাণের জন্যই ধর্ম।ধর্মই নির্ধারণ করে দেয় কিভাবে মানুষের জীবনে কল্যাণ ও শান্তি আসবে।আর সে লক্ষ্যে নিয়েই মহান সৃস্টিকর্তা আমাদের মানব জীবনে রমজান মাস দান করেছেন এবং জীবন যাত্রার সকল দৃষ্টি মানব দিশারি রূপে হিদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসাবে কোরআন নাজিল হয়েছে,সাথে নির্দেশিত হয়েছে তোমরা যারা এই রমজান মাস পাবে তারা যেন রোজা পালন করে আর তোমাদের মাঝে যারা পীড়িত থাকবে তাদের প্রতি যেন দয়াশীল হয়ে উঠো। প্রত্যেক সক্ষম নারী পুরুষের জন্য রমজানে পূর্ণমাস রোজা পালনের মধ্যে দিয়ে ফরজ আদায় করে।রমজানে রয়েছে দুটি ওয়াজিব:সদকাতুর ফিতর ও ঈদের সালাত আদায় করা। পাশাপাশি রয়েছে পাঁচটি সুন্নত যেমন:সেহরি খাওয়া,ইফতার করা,তারাবি নামাজ আদায় করা,কোরআন মজিদ তেলোয়াত করা ও ইতেকাফ করা।মহান রাব্বুল আলামিন এই পবিত্র মাসের প্রতিটি নেক আমলের মান দ্বিগুণ থেকে অনেক গুলে বৃদ্ধি করেছেন। দু:স্থ অসহায় মানুষের খোজ নিয়ে তাদের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার ফলে যে নেয়ামত লিপিবদ্ধ করা আছে তা অনুভব আমাদের মাঝে ঠাই করে নিতে পারেনি।আমাদের দেশে রমজান মাস এলে আমরা যে কর্মসূত্রে আবদ্ধ হই,তা যেন সারা বছর বলবৎ থাকে। মানব সেবা বিশাল পরিধি আমাদের জীবন সংসার অনেক আলোকিত করে তুলবে তিনিই যা আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। অথচ আমরা আমাদের কর্মকান্ডের মাঝে বিশাল বেদাভেদ তৈরী করেই চলছি,অথচ মহানবী (সা:) প্রবর্তিত সরকারের যে উদ্দেশ্য তা আজও আমাদের মাঝে জায়গা করে আসতে পারেনি। আল্লাহর অভিপ্রায় অনুসারে এ পৃথিবীতে মানব গুণাবলীর বিকাশ সাধনে সহায়তা করা আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখা। দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও বহি:আগ্রাসন প্রতিরোধ করা,সব নাগরিকের প্রতি সুবিচার,ন্যায়ের আদর্শ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ,রাষ্ট্রের সব কর্তৃত্ব উপায় ও উপকরণ প্রয়োগ করা। আধ্যাত্বিক ও সামাজিক কল্যাণের জন্য প্রতিষ্টান গড়ে তোলা,গোটা মানব গোষ্টির কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছানো।
একটি দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সংবিধানের সুস্পষ্টতা প্রনয়ণ এবং তার যথাযত অনুশীলন,গনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা,আইনের শাসন প্রতিষ্টা,পররাষ্ট্র নীতি,দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব,স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা,বিচার বিভাগের স্বাধীনতা,দূর্নীতি মুক্ত রাখা,অর্থনৈতিক উন্নয়ন ,সামাজিক কল্যাণ,সমাজের জন্য রাষ্ট্রের সম্পদ সুষম বন্টন ও উৎপাদন পক্রিয়া জোরদার করার মাধ্যমে জনগনের জীবনমান উন্নত করা ,হারাম উপার্জনে নিরুৎসাহিত করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্বক চেষ্টা সাধন করা ইসলামের একটি উত্তম সরকারের বৈশিষ্ট্য।
রাষ্ট্রের অতিব নজরদারিত্ব হওয়া দরকার একজন গরিব,অর্থাভাব,দুস্থ অসহায় মানুষ গুলোকে স্বাবলম্বি করে তোলা কিন্ত আমরা তা করে উঠতে পারছি কৈ?আল্লাহ প্রেমিক যেকোন ব্যক্তির প্রয়োজন সমাজ ব্যবস্থাপনার সমতা তৈরী করা। ঈদের আনন্দ কে সামনে রেখে আমাদের সমাজের সকল অপ্রিয়তার মৃত্যু হোক এটাই কামনা।ঈদের আনন্দের মাঝে সর্বোপরি মানুষের মাঝে কোলাকুলি করার মধ্যে দিয়ে একাকার হয়ে যাই। প্রকৃতগত ভাবে ঈদের তাৎপর্য আল্লাহ সন্তুষ্টি হাসিল করে তারই ইবাদতের শোকরানা আদায় এবং তার নির্দেশিত সকল প্রকার আচার অনুষ্টানের মধ্যে যেন থেকে হয়। আমাদের পাশের জন তথা নিজ বাড়ি,গ্রাম এবং দেশের প্রতিটি মানুষ যেন আজ ভাবতে না পারে ধনী গরিবের ভেদাভেদ।
আমাদের সমাজের নানাহ অপ্রিয়তার ভাবনায় আজ কাতর সকল শ্রেণীর মানুষ। অবসান হোক এই আনন্দময় ঈদ উৎসবের মধ্যে দিয়ে সকল হানাহানি ,দূর্নীতি,চুরি,ডাকাতি,ধর্ষণ,খুন ও মাদকের ভয়াল করাল গ্রাস। সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিয়ে আমাদের আগামীর পথ চলা হোক নৈতিকতার মধ্যে দিয়ে।
সকলকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা।