নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: অমান্তিকা নয় এর আগেও শাহানাজ নামের এক প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই করে হত্যা করে ডাঃ নুরজাহান। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে আরো বিস্তর অভিযোগ। এত অভিযোগের পরও সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালের মালিক জয় মিয়া ও বিশেষ পেশার লোক ও রাজনীতিবিদদের আশ্রায়-প্রশ্রয়ে সোনারগাঁ এলাকার দুটি ক্লিনিকে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। একের পর এক কয়েকটি ঘটনা জম্ম দেয়া এ নুরজাহান সোনারগাঁয়ের আর কোন ক্লিনিকে বসতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন সুশীল সমাজের লোকজন।
সূত্র জানায়, ডাঃ নুরজাহান গত ১০ বছর ধরে সোনারগাঁয়ের জালাল টাওয়ারে অবস্থিত মা জেনারেল হাসপাতাল ও সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রসূতিদের চিকিৎসা করে আসছেন। এ ক্লিনিকগুলো বড় বড় ব্যানার ফেষ্টুন ও মাইকে পাবলিসিটি করে জনগনকে বোকা বানিয়ে নুরজাহানের কাছে চিকিৎসা নিতে আকৃষ্ট করে তোলে। এ সুযোগে নুরজাহান এসব প্রসূতি নারীদের বিভিন্ন টেষ্ট ও অতিরিক্ত নামী বে-নামী কোম্পানীর ভিটামিন ঔষধ লিখে কমিশন বানিজ্য শুরু করেন। অপরদিকে, রোগীদের সেবার নামে দুর্ব্যবহারসহ নানা প্রকার হয়রানি ও ভয় দেখিয়ে দেখিয়ে তার কাছে সিজার করতে বাধ্য করেন এবং অন্য রোগীর তুলনায় তার কাছে আসা সিজারের রোগীদের কাছ থেকে বেশী টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি গড়ে সোনারগাঁ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন ১০-১২ সিজার করেন বলে জানান হাসপাতালের লোকজনরা। সিজারের পর রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না দিয়ে তারাহুড়ো করে অন্য হাসপাতালে চলে যান সিজারের জন্য। আর সিজার শেষে রোগীকে সেলাই করাসহ অন্যান্য চিকিৎসা দেন তার সহযোগিরা। এতে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে মারা যান অথবা বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখিন হন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পর মোগরাপাড়া চৌরাস্তার রয়েল হাসপাতলের আলট্টা সোনোগ্রাস করা স্বঘোষিত ডাক্তার শাহানাজ বেগম ও আরো কয়েকজন দালালের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে রোগী এনে নুরজাহানের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে আকৃষ্ট করেন। এজন্য তারা এসব হাসপাতাল ও ডাঃ নুরজাহানের কাছ থেকে কমিশন গ্রহন করেন।
গত ২০১৫ সালের প্রথম দিকে মোগরাপাড়া চৌরাস্তার সোনারগাঁ শপিং কমপ্লেক্সের ৩ তলায় সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে এক দালালের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে আসেন সোনারগাঁ সরকারী ডিগ্রী কলেজের পিওন পিয়ার আলীর ভাড়াটিয়া বাক প্রতিবন্ধি ও দিনমজুর ডালিমের স্ত্রী এক সন্তানের জননী শাহানাজ বেগম (২২)। সেখানে আলট্টা সোনোগ্রাম শেষে ৮ মাসের পেটের বাচ্চাকে সিজার করতে হবে বলে জানান নুরজাহান। নয়তো পেটের বাচ্চা ও মায়ের ক্ষতি হবে। এ ভয় দেখিয়ে তাৎক্ষনিক দিন মজুর ডালিম ধারদেনা করে টাকা এনে স্ত্রীকে সিজার করান ডাঃ নুরজাহানের কাছে। সিজারের পর ডাঃ নুরজাহান পেটের শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষনা করেন এবং তারাহুড়ো করে পেটের মধ্যে গজ রেখেই সেলাই করে দ্রুত চলে যান। পরে সেই প্রসূতি মৃত্যুর কোলে ঠলে পড়েন। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের মালিক জয়মিয়া, বিশেষ পেশার মোক্তার হোসেন মুক্ত ও সুরুজ জামান প্রধান নামের এক ব্যক্তি দেড় লাখ টাকার মাধ্যমে বিষয়টি রফাদফা করেন। এরমধ্যে ১লাখ টাকা মৃত প্রসূতির স্বামী বাক প্রতিবন্ধি ডালিমকে দেন বাকি ৫০ হাজার টাকা নিজের পকেটে রেখে দেন।
এ ঘটনার পর গত শুক্রবার একই হাসপাতালে একই কায়দায় অমান্তিকা নামের এক প্রসূতিকে ভুল চিকিৎসা করেন ডাঃ নুরজাহান। অমান্তিকাকে সিজার করে তারাহুড়ো করে চলে যান আরেকটি সিজার করতে। পরে নার্সরা অমান্তিকার পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেয়।
এদিকে, সেলাইয়ের পর রাত যত বাড়তে থাকে অমান্তিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তার পেট ব্যাথাসহ কয়েকবার বমি করেন। পরে হাসপাতালের নার্সরা অমান্তিকা শারীরিক অবস্থার কথা ডাঃ নুরজাহানকে জানালে তিনি শনিবার সকালে অমান্তিকাকে নারায়ণগঞ্জ কেয়ার হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে অমান্তিকাকে ২ দফা অপারেশন করেন নুরজাহান। অপারেশন শেষে অমান্তিকার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে রোগীর স্বজদের জানানো হয় রোগীর কিডনিতে সমস্যা আছে তাকে দ্রুত ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। শনিবার রাতেই স্বজনরা রোগীকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সেখানে রোগীর স্বজনরা ১লাখ ২৭ হাজার টাকা হাসপাতাল বিল দিয়ে মৃত অমান্তিকাকে বাসায় এনে কবর দেন।
ডাঃ নুরজাহানের হাতে একের পর এক প্রসূতির মৃত্যুর তার বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছেন স্থানীয়রা। তার ও হাসপাতাল মালিকদের বিচার চেয়ে গতকাল সোমবার সকালে হাসপাতাল ভাংচুর করে। ডাঃ নুরজাহানের মত ডাক্তার যেন সোনারগাঁয়ে না আসতে পারে সেজন্য তার প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হালিমা সুলতানা জানান, ঘটনাটি আমি শুনার সাথে সাথে একটি পরিদর্শনকারী টিম পাঠিয়েছি হাসপাতাল পরিদর্শন করতে। আগামীকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কাছে আসতে বলা হয়েছে। ভুল চিকিৎসা রোগীর মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে সেটা পুলিশ প্রশাসন ও আমাদের জেলা সিভিল সার্জেন দেখবেন। তবে আমি আমার মত করে সকল রির্পোট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছি এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।