নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম:
সোনারগাঁ উপজেলার চরহোগরা এলাকায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশসহ অন্যান্য সদস্যদের যাতায়াতের জন্য প্রত্যেকটি নির্বাচনে ১২টি স্পীরিট বোট দেন উপজেলা নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে চরহোগরা এলাকায় কর্মকর্তা অন্যান্যদের যাতায়াত ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি আনা নেওয়ার জন্য একটি ট্রলার দেন উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কর্মকর্তারা। ফলে একটি ট্রলারে ২২ জনের অধিক লোক ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিয়ে আসার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় ট্রলারটি। এতে ১৯জন কোন মনে প্রাণ বাঁচিয়ে তীরে ফিরতে পড়লেও নিখোঁজ হন এক মহিলাসহ তিনজন। এরমধ্যে নির্বাচনী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ইউনাইটেড কমাশিয়ার ব্যাংকের মেঘনা শাখার ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দিন ও টিএসআই সেলিম মিয়া। নিখোঁজ তিন জনের মধ্যে এক নারী আনসার সদস্য রিতা আক্তারের লাশ সোমবার সকালে ও প্রিজাইডিং অফিসার ও ব্যাংক কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের লাশ আজ মঙ্গলবার বিকালে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ইসির সচিব হেলার উদ্দিন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় আহত ১২ জনকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে আসেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্পীরিট বোডের বদলে কেন সেখানে ১টি ট্রলার দেওয়া হলো এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন এবং নিহত প্রত্যেক পরিবারকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপুরন দেওয়া হবে এবং এ ঘটনায় আহতের ২০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা বাবদ দেওয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন কমিশন কেন ১২টি স্পীরিট বোটের পরিবর্তে একটি ট্রলার দিলো এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। তারা জানান, গত বিগত যতগুলি নির্বাচন হয়েছে প্রত্যেকটি নির্বাচনে নির্বাচন কর্মকর্তারা সেখানে নির্বাচন পরিচালানকারী দল আসা যাওয়ার জন্য স্পিরিট বোড দিয়েছিলেন। এবার নির্বাচন কর্মকর্তারা ২২ জন লোক ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি আনা দেওয়ার জন্য একটি ট্রলার দেন। তবে, কি তারা খরচ বাঁচানোর জন্য এ কাজ করেছে? যার জন্য তিনজন লোকের প্রাণ হারাতে হল।
প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান, নির্বাচন শেষ করে কর্মকর্তারা ফেরার সময় প্রায় ২৬/২৭জন লোক মালামাল নিয়ে তারহুরো ট্রলারটিতে উঠে। উঠার সময়ই ট্রলারটি ডুবো ডুবো ভাব হয়। অবশেষে তাই হলো। ঝড় আসার সাথে সাথে ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারটি ডুবার সময় ট্রলারটির কাছাকাছি একটি বালুবাহী বাল্কহেড থাকায় অনেকেই প্রাণে বেঁচে যায়। নয়তো সবাই মারা যেত।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী মিজানুর রহমান জানান, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরহোগরা এলাকায় নির্বাচন পরিচালনাকারীদের আসা যাওয়ার জন্য ১২টি স্পীরিট বোট দিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা মো. শাহীনুর ইসলাম।
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্চন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা জানান, আমি নির্বাচন পরিচালনার জন্য যাতায়াতের দায়িত্বটি উপজেলার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সা্ইদুর ইসলাম ও পুলিশের সেকেন্ড অফিসার মাসুদ সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম এবং চরাঞ্চল নুনেরটেক, চরকিশোরগঞ্জ ও চরহোগরার জন্য ৫১ হাজার টাকা বরাদ্ধ দিয়েছি। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোন লিখিত কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
তবে উপজেলা দূর্যোগ কর্মকর্তা সাইদুর ইসলাম ও সোনারগাঁ থানার সেকেন্ড অফিসার মাসুদ রানা ৫১ হাজার টাকা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলে আমরা ওই এলাকায় স্পীরিট বোড দেয়ার কথা সহকারী নির্বাচন রিটানিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শুনেনি।
উল্লেখ, গত রবিবার সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে গননা শেষে নির্বাচন পরিচালনাকারী ২২জন ফেরার পথে উপজেলার চরহোগরা এলাকায় মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবরে পড়ে ডুবে যায়। এতে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ইউনাইটেড কমাশিয়ার ব্যাংক মেঘনা শাখার ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দিন ও টিএসআই সেলিম মিয়া ও নারী আনসার সদস্য রিতা নিখোঁজ হন। এসময় নদীতে পড়ে আরো ১২জন আহত হয়।