• দুপুর ১:৩৩ মিনিট বৃহস্পতিবার
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ঋতু : গ্রীষ্মকাল
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
এই মাত্র পাওয়া খবর :
বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বউয়ের মামলা সোনারগাঁয়ে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ, ৪ জন বাতিল সোনারগাঁয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যুবককে অপহরন করে নির্যাতনের অভিযোগ সানাউল্লাহকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যা চেষ্টা ও ১৫ মামলার আসামী গ্রেপ্তার বন্দরে ইউএনও অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের আত্মহত্যা সোনারগাঁয়ে ২দিন ধরে মাদ্রাসা ছাত্র নিখোঁজ সোনারগাঁয়ে দুই ব্যাক্তি আটক, ৪৯ লাখ জাল টাকা উদ্ধার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আজিজুল ইসলাম মুকুল সোনারগাঁয়ে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৪ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল তাপদাহের প্রভাব পড়েছে সোনারগাঁয়ের বাজার ও মার্কেটগুলোতে মাহফুজুর রহমান কালামের নির্বাচনী প্রচারনায় নেতাকর্মীর ঢল সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুল চিকিৎসায় নারীর মৃত্যুর অভিযোগ সোনারগাঁ থেকে বাড়ি ফেরার পথে লাশ হলেন পিতা-পুত্র তীব্র গরমের কারনে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা খুলবে ২৮ এপ্রিল! অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মাহফুজুর রহমান কালাম সোনারগাঁয়ে প্রাথমিকে অনলাইন বদলী আবেদনে অনিয়মের অভিযোগ জামপুরে ৪টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মী নিয়ে বাবুল ওমরের নির্বাচনী প্রচারনা সভা সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মী বেচা-কেনার হিড়িক সোনারগাঁয়ে নেতাকর্মী বেচা-কেনার হিড়িক সোনারগাঁয়ে করোনা যোদ্ধাকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা
১৮ বছর পর পাগল ছেলেকে খুঁজে পেয়ে যা করছেন মা

১৮ বছর পর পাগল ছেলেকে খুঁজে পেয়ে যা করছেন মা

Logo


সেলিম আহমেদ প্রধান
সপ্তাহ খানেক আগে বন্ধুবর সাংবাদিক রবিউল হুসাইন ও সাংবাদিক ফরিদ ভাইয়ের এর সাথে বিকেলে হাটতে বের হয়েছিলাম। এক সময় সন্ধ্যা নেমে এলো আধো আলোতে পানাম দুলালপুরের রাস্তার পাশে একটি দৃশ্য দেখে আমার চোখ আটকে গেল। এক বৃদ্ধা মহিলা পরম যতেœ একজনকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছেন। যাকে ভাত খাওয়াচ্ছেন সে কিন্তু ছোট কোন শিশু নয় প্রাপ্ত বয়স্ক। তবে আচরন একবারে শিশু সুলভ। ওই লোকটি খাবার খেতে চাইছে না কিন্তু বৃদ্ধা নানা ভাবে খাওয়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খাইয়ে দিচ্ছেন। ওই লোকের মুখ বৃদ্ধার আচল দিয়ে মুছে দিচ্ছেন।

এসব দেখে আমার বেশ কৌতুহল জাগে। কাছে গিয়ে বিষয়টি ভাল ভাবে জানার চেষ্টা করি। কাছে গিয়ে তো আমি হতবাক একি এ লোকটি তো আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। সেই শৈশব থেকেই তাকে দেখে আসছি। পথই যার ঠিকানা। তবে এলাকাবাসী তাকে একজন পাগল হিসেবেই চিনেন।

গায়ে ময়লা জামা জটপাকানো চুল আর মুখে জটলা দাড়ি। এই লোকটি সোনারগাঁও পৌরবাসীর কাছে পরিচিত মুখ। প্রায় ১৮/২০ বছর যাবত লোকটি পৌরসভার প্রধান সড়ক মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে আদমপুর বাজার, পানাম মুন্সিরাইল বাজার থেকে উদ্ধবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তায় এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেড়ায়। আবার কখনো রাস্তার ধারে শুয়ে বসে থাকেন। কখনো কারো সাথে কথা বলেন না। এক মনে শুধু হেটে চলেন। কেউ তার পরিচয় জানেন না, কোথা থেকে এসেছেন তাও জানেন না। ক্ষুধা লাগলে কারো বাড়িতে গিয়ে দাড়িয়ে থাকেন খাবার দিলে খান না দিলে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে যান। আবার সব বাড়িতে যানও না। একা একা হাটেন মাঝে মাঝে নিজ মনে বিরবির করে কি যেন বলেন আবার ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের চুল ধরে নিজেই টানাটানি করেন। কখনো নিজের গালে নিজেই চর মারেন। এভাবেই কাটে তার দিন। তাকে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে পৌরবাসী। শীত, গ্রীস্ম বর্ষা কিংবা রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে রাস্তা ঘাটেই থাকেন তিনে। এভাবে প্রায় ১৮-২০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এ এলাকায় । চিলারবাগ, দিঘিরপাড়, ইছাপাড়া, আদমপুর, দুলালপুর, পানামসিটি, আমিনপুর, নোয়াইল, লাহাপাড়াসহ এই গ্রামগুলোতেই তার বিচরন বেশী। তবে আদমপুর বাজার ও তার আশ-পাশেই তাকে বেশী দেখা যায়।

আমি তাদের কাছে গিয়ে বৃদ্ধার কাছে জানতে চাই আপনি এভাবে ওনাকে পরম মমতায় ভাত খাওয়াচ্ছেন এর কারণ কি? বৃদ্ধা প্রথমে কিছু না বলে আমাদের পাশ কেটে চলে যেতে চাইছিলেন। পরে বিশেষ অনুরোধে আমাদের সাথে অশ্রুসিক্ত নয়নে দীর্ঘক্ষন কথা বলেন। ওনার কাছে জানতে পারলাম এই পাগল লোকটির নাম মোঃ মাসুদ ওনি তার মা নাম ফজিলাতুন নেছা। তার বাবার নাম ফটিকচাঁন, দাদার নাম মোঃ আলেকচাঁন । বাড়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজিমিজি গ্রামে। আট ভাইবোনের মধ্যে মাসুদ সবার ছোট। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরে ইলেকট্রিক্যাল কাজ শিখে সেই কাজ করতো। শৈশবটা বেশ দুরন্তপনায় কেটেছে। তবে কর্মে ক্ষেত্রে তার পারদর্শীতা ছিল বেশ। তাই মাসুদের কাজের চাহিদা ছিল প্রচুর। প্রতিদিন কাজ শেষ করে সন্ধ্যা থেকে রাত্র অবধি চিটাগাং রোড মুক্তি স্মরনীর আহসানউল্লাহ সুপার মার্কেটে আড্ডা দিত। বেশ আড্ডা প্রিয় লোক ছিল মাসুদ। আহসানউল্লাহ সুপার মার্কেটের মালিক আহসানউল্লাহ হাজী মাসুদের সর্ম্পকের চাচাতো মামা। মাসুদের বয়স যখন আড়াই বছর তখনই তার বাবা ফটিকচাঁন মারা যান। তার বড় ভাই, মা ও মামাদের তত্ত্বাবধানেই সে বড় হয়েছে। এ ভাবে বেশ ভালো ভাবেই জীবন কাটছেল মাসুদের। প্রায় বিশ বছর আগে প্রতিদিনের মতো সকালে বাড়ী থেকে কাজে বের হয়। কিন্ত কাজ শেষে তার বাড়ী ফিরেনি। সেই থেকে মাসুদ নিখোঁজ হয়। বহু খোঁজাখুজির পর তাকে আর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের প্রায় বেশীর ভাগ জয়গায় এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কিছু জায়গায় তাকে খোঁজা হয়েছে। কিন্তু তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। মাসুদের হারানোর বেদনায় এবং দীর্ঘ খোঁজাখুজিতে মাসুদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

২০১৯ সালের মার্চের কোন একদিন মাসুদের মা হঠাৎ এক মহিলার মাধ্যমে জানতে পারেন সোনারগাঁয়ের পানাম এলাকায় একটি পাগল দেখেছি দেখতে হুবহু মাসুদের মতো। যেদিন শুনতে পান ঠিক তারপর দিনই পানাম এসে পাগল লোকটিকে খুঁজেতে থাকেন তিনি। ভাগ্যক্রমে তাকে পেয়ে যান। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে মাসুদ অনেক বদলে গেছে তবে মায়ের মন বলে কথা। মাসুদের পিঠে ডানপাশে একটি চিহ্ন ছিল, বাম কানটি বাঁকা ছিল এবং তার বুকে কোন পশম ছিল না। এইসব চিহ্ন সবই মিলে যায় এবং চেহারার আকৃতি দেখে বৃদ্ধা ফজিলাতুন নেছা বুঝতে পারেন এটি আর কেউ নয় এ পাগলটিই হচ্ছে তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে মাসুদ।

দীর্ঘ সময় পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে বৃদ্ধা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে কোন ভাবেই সেখানে যেতে চায়নি তাই সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে এসে এসে ছেলেকে কিছুদিন দেখাশোনা করতেন। মাসুদ রাস্তায় থাকতে থাকতে এখন বাড়িতে থাকা ভুলে গেছে। বৃদ্ধা জানান বর্তমানে চার মাস যাবৎ পানাম এলাকায় সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিউশন স্কুল এন্ড কলেজের পশ্চিম পাশে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আছেন তিনি শুধুমাত্র ছেলেকে দেখাশুনা করার জন্য। বৃদ্ধা নিজ হাতে রেঁেধ টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ছেলেকে খুঁজে বেড়ান। যেখানে পান সেখানেই বসে খাবার খাওয়ান। মা যেমন তার শিশুকে খাওয়ান ঠিক সেভাবে। মাছ মাংস ডিম দুধ সবই থাকে খাবারে। বৃদ্ধা দু চোখের জল ফেলে বলেন এখনও ছেলে তাকে চিনতে পারেনি। তবে ভালবাসা দিয়ে তাকে চেনানোর চেষ্টা করছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন তার ছেলেকে একটি মানসিক স্বাস্থ্য পূনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে ভাল করবেন। আবার হাসি মুখে মাকে ডেকে বলবে মা আমি তোমার মাসুদ। আসলেই এ পৃথিবীতে মায়ের মতো আপন কেহ নাই।


Logo

Website Design & Developed By MD Fahim Haque - Web Solution