নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: সোনারগাঁ উপজেলার সোনারগাঁ জি.আর ইনিষ্টিউশন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান আহাম্মেদ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে অভিভাবক ও ম্যানিজিং কমিটির সদস্যরা। তারা বিগত দিনে বিদ্যালয়ের খরচ বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ তুলেছে। এ ঘটনায় গত সোমবার সকালে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ওই দুর্ণীতিবাজ শিক্ষকের অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণস্বাক্ষর দিয়েছেন।
স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, গত সোমবার সকাল ১০ ঘটিকায় দশম শ্রেণীর নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের কক্ষে প্রবেশ করেন।এ সময় বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফি না দেওয়ায় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে ক্লাস থেকে বের করে দেয় ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সুলতান আহাম্মেদ। পরে সকল শিক্ষার্থীরা ক্লাস রুম ও পরীক্ষার বর্জন করে সুলতানা আহাম্মেদের অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণস্বাক্ষর করে। এ সময় সোনারগাঁও পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য দুলাল মিয়ার হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।
তারা আরোও জানান, দুর্ণীতিবাজ অধ্যক্ষ সুলতান আহম্মেদ বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে অবৈধ ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির কাছে গত দুই বৎসর যাবত হিসাব না দিয়ে উন্নয়ন খাত প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ বিদ্যালয়ে উন্নয়ন তো দুরের কথা একটি ইটও তিনি ক্রয় করেননি। এছাড়া মাকসিট ও নাম্বারপত্র বাবদ রিসিটে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। বছর শেষে সেশন ফি বাদ বাবদ সরকারী নির্ধারিত টাকার চেয়ে কয়েকগুন বেশী আদায় করে থাকেন বলেও অভিযোগ করেছেন খোদ ম্যানিজিং কমিটির সদস্যরা। নামে মাত্র একটি ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও কমিটির বিদ্যালয়ের সভাপতি ও দাতা সদস্যকে ম্যানেজ করে বাকি সদস্যদের সাথে কোন মিটিং বা খরচের কোন হিসেব দেন না। তার মন মতো হিসেবে তৈরী করে সেটাতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন অন্য সদস্যদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কোন শিক্ষার্থী স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি দিতে না পারলে তাদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে অসাদাচরণ সহ বিভিন্ন রকম খারাপ আচরণ করে থাকে। তার এ রকম ব্যবহারে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
তার অসৌজন্যমুলক ব্যবহারের কারণে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার অকৃতকার্য হওয়ার কারণে অধ্যক্ষ সুলতান আহাম্মেদের ধারস্থ হয়েও ফরম পূরন করতে না পেরে ক্ষোভে ও লোকলজ্জায় রাতে ঘরের আড়ার সঙ্গে দড়ি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে আমেনা আক্তার (১৭) নামে এক স্কুল ছাত্রী। অতপর সোনারগাঁ জি আর ইনিষ্টিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা প্রিন্সিপাল সুলতান মিয়ার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে মানববন্ধন করেছিল। তখন সুলতান মিয়ার মা মারা যাওয়ার কারণে এলাকাবাসী ও একজন দাতা সদস্যের কারণে সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।
স্থানীয় অভিভাবক নুরুজ্জামান বলেন, অধ্যক্ষ সুলতান আহাম্মেদ দীর্ঘদিন যাবত এই পদে থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছেন। তার কুকর্মের প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি হতে হয় আমাদের। আমরা এই দূর্ণীতিবাজ শিক্ষক সুলতান মিয়ার অবিলম্বে অপসারণ দাবী করছি।
সোনারগাঁও পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য দুলাল মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নামে বেনামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অধ্যক্ষ সুলতান আহাম্মেদ। গত দুই বৎসর যাবত বিদ্যালয়ের হিসাব চাইতে গেলে তিনি তালবাহানা শুরু করেন। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার সকালে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার সংবাদ শুনে আমি বিদ্যালয়ের উপস্থিত হয়ে ওই সকল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার দেওয়া ব্যবস্থা করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁও জি আর ইনিষ্টিউশন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান আহাম্মেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা। বিদ্যালয়ের সকল খরচের ভাউচারে ম্যানিজিং কমিটির সই রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের সকল খরচ দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা করেন আমি এর কিছুই জানিনা।