আশরাফুল আলম, নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম:
তথ্য প্রযুক্তির এসময়ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় তৈরি সব পুরাতন উপকরন আর তেমন ব্যবহৃত হচ্ছেনা। প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিতে লোহায় তৈরি পুরাতন সব উপকরন বিভিন্ন যন্ত্রাশেংর গ্রহন যোগ্যতা এখন আর নেই বললেই চলে। কৃষি উপকরন সহ বিভিন্ন যন্ত্রাশং তৈরিতে জড়িত কামার শিল্পীদের প্রায় সারা বছর মন্দাভাব নিয়ে সংসারের গ্লানি টানতে হয়। কিন্তু প্রতি বছর ঈদ পূর্ব সময় এক/দেড় মাস মহা ব্যস্ত সময় পার করেন কামার শিল্পীরা। দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামার শিল্পীরা। দম ফেলবারও যেন ফুরসুরত পাচ্ছেন না তারা। দিনরাত টুং টাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় পেশাদারি কামার শিল্পিরা মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, কাইকারটেক, লাঙ্গলবন্দ বাজার, কাঁচপুর, নয়াপুর, দড়িকান্দি, মেঘনা, মঙ্গলেরগাঁও, বারদী, আনন্দবাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, চাকু, ছুরা, কুড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছে কামাররা। এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, চাকু, ছুরা, কুড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছে কামার শিল্পীরা। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প।
স্থানীয় মঙ্গলেরগাঁও বটতলা বাজারের কামার শিল্পী বাসু কর্মকার জানান, একসময় লোহা আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, কোদাল, খন্তা, সাবল, টেটা, কাচি, চাকু, ছুরা, কুড়াল, চাপাতিসহ কৃষি উপকরনের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরিতে কামারদের যথেষ্ট চাহিদা ও কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। যার ফলে কামারদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ দিনদিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, হয়তো বা একসময় এই পেশা আর থাকবেনা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। সারা বছরের তুলনায় কোরবানির ঈদের সময় রোজী রোজগার অনেক বেশি হয়।
বাসু কর্মকার আরো বলেন, বাপ, দাদার কালের এই পেশা আমি শিখেছি লেখাপড়া জানা নেই। সেই জন্য অন্য কোন কাজে যেতে পারিনা। সারা বছরই সংসার অভাবে চলে। তবে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা এই কাজ করে আসছে আমিও এই কাজেই আছি অন্য কোন কাজ জানা নেই। সেই জন্য সারাবছর তেমন কোন কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা অনেক গুন বেড়ে যায়। এসময় আমার স্ত্রী রানীবালা আমাকে এই কাজে সাহায্য করে। দুজন মিলে কাজ করলে কোরবানির ঈদের সময়টুকুতে সংসার নিয়ে একটু ভাল থাকি।
এব্যাপারে বিভিন্ন হাটের কামার শিল্পীরা বলেন, এই পেশায় আমরা যারা আছি তারা খুবই অবহেলিত। বর্তমান বাজার মূল্যের যে উর্ধগতি সব জিনিসের দাম বেশি হওয়াতে সে অনুযায়ী আমরা আমাদের কাজের ন্যায্য মূল্য পাইনা। এই পেশায় থেকে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। কামার শিল্পীরা মনে করেন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও কোন আর্থিক সহযোগিতা না পেলে হয়তো এ শিল্প অচিরেই একদিন হারিয়ে যাবে।