নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) সিলিন্ডারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বোতলজাত করে অবৈধ অটোরিক্সা শিল্প-কারখানা ও বাসাবাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যেখানে সিএনজি নেই, সেখানে ট্রাকে করে একাধিক সিলিন্ডার স্থাপন করে সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নিয়ে একটি নজেলের মাধ্যমে ছোট ছোট অবৈধ অটোরিক্সা বাসাবাড়ি, কলকারখানার কাজে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিস্ফোরক অধিদপ্তর জানিয়েছে তারা এসব অবৈধ সিএনজি বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছেন তারা কোন চিঠি পায়নি।
জানা গেছে, যানবাহনে সরাসরি গ্যাস বিক্রির চেয়ে কাভার্ড ভ্যানে লুকানো অতিরিক্ত সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস বিক্রিতে লাভ বেশি। তাই কাজটি অবৈধ হলেও কোনো কোনো সিএনজি স্টেশন এভাবে বিপজ্জনক কায়দায় গ্যাস বিক্রি করছে সোনারগাঁয়ে বৈদ্যেরবাজার হাড়িয়া এলাকায় একটি নিচু জমিতে ও জামপুর ইউনিয়নের বস্তল এলাকায় রাস্তার পাশে।
সরেজমিনে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তার পাশে চারপাশে বাড়ীঘরে মাঝখানে একটি নিচু জমিতে একচালা টিনের ঘর নির্মান করা হয়েছে। টিনের ঘরে বিভিন্ন অবৈধ অটোরিক্সা বাসাবাড়ি, কল-কারখানার কাজে ব্যবহার করা সিলিন্ডারে গ্যাস দেয়ার জন্য একটি নজেল স্থাপন করেছেন। সিলিন্ডারে গ্যাস দেয়ার জন্য মাটির নিচে একটি বিশাল আকৃতির সিলিন্ডার বসানো হয়েছে। সে সিলিন্ডারে গজারিয়ার রংধনু সিএনজি ষ্টেশন থেকে ট্রাক ও কভারভ্যানে করে কয়েকটি বিশাল সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস এনে সে সিলিন্ডারে মজুদ রাখা হয়। পরে গ্যাস নজেলের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিবহন, বাসাবাড়ি, কলকারখানার সিলিন্ডারের মাধ্যমে এ গ্যাস বিতরন করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে স্থানীয় এক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে বাসা বাড়ীর মাঝখানে একটি নিচু জমিতে ফিলিং ষ্ট্রেশন নির্মান করেছেন। তিনি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত ৮ মাস ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া উপজেলার রংধনু সিএনজি ফিলিং ষ্ট্রেশন থেকে ট্রাকের ভেতর সিলিন্ডার রেখে এখানে এনে মজুদ করে বেশী দামে গ্যাস বিক্রি করে। সিএনজি ফিলিং ষ্ট্রেশন নির্মানের সময় এলাকার নিরাপত্তার জন্য তাকে নিষেধ করলেও সে কাউকে তোয়াক্তা না করে অবৈধ ভাবে গ্যাস বিতরনের জন্য এ ষ্ট্রেশনটি নির্মান করেন। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রশাসের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি বলেও জানান তারা।
বৈদ্যেরবোজার এলাকার সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নেওয়ার সময় একজন ভ্যানচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ওই এলাকার একটি বিস্কুট কারখানায় জ্বালানোর জন্য দুটি ৯০ লিটার ধারণক্ষমতার সিলিন্ডার দিয়ে মোট পাঁচটি ভ্যান তৈরি করেছেন। পাঁচ দিন পর পর তিনি সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস কিনে আনেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি শুরু হয়েছে। রিক্সাভ্যান, অটোভ্যান, লেগুনা, কাভার্ড ভ্যানে কয়েকটি করে সিলিন্ডার রেখে সেগুলো ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে দেখলে সহজে বোঝা যায় না। এসব যানে করে সিলিন্ডার ভর্তি সিএনজি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সিএনজি স্টেশনের মালিক ডাঃ আব্দুর রব বলেন, ‘দেশের সব সিএনজি স্টেশন থেকে এভাবেই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ঢাকার শিল্প-কারখানাগুলোতেও এভাবে সরবরাহ করা হয়। অবৈধ হলে সব সিএনজি স্টেশন বন্ধ করে দিতে হবে।এছাড়া তিনি প্রতিবেদককে তার সাথে দেখা করার জন্য আমন্ত্রন জানান।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ তিতাস ডিস্ট্রিবিউশন কোং লিং ম্যানেজার মেজবাউল রহমান জানান, এ বিষয়টি আমরা দেখিনা। বিস্ফোরক অধিদপ্তর সরাসরি বিষয়টি নজরদারি করেন।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, এসব অবৈধ সিএনজি ষ্টেশনের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কোন চিঠি আমরা পাইনি।
বাংলাদেশ বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মোঃ সামসুল আলম জানান, এসব অবৈধ সিএনজি পাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রত্যেকটি থানায় একটি করে চিঠি দেয়া হয়েছে। পুলিশ যদি এসব সিএনজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমরা নিজেরা গিয়ে এসব সিএনজি পাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।