নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম : রাজধানী থেকে নিখোঁজের প্রায় এক মাস পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া থেকে সুমন মিয়া (২৫) নামে এক তরুণের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ১১ মে তিনি কবুতর ও হাঁস কেনার কথা বলে নয়া পল্টন এলাকার বাসা থেকে বের হন। এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পল্টন থানা পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় সুমনের পরিবারের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে মোগড়াপাড়ার ঝিলে কচুরিপানা দিয়ে চাপা দেওয়া অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থেকে শাহীন শেখ ও আসলাম শেখকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার দিন তারা সুমনকে মোগড়াপাড়ায় ডেকে নেয়। এরপর ঝিলের পাড়ে বেড়ানোর নাম করে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত ও শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে।
পল্টন থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সুমনকে হত্যার পর তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে শাহীন শেখ। এর আগে চুরির মামলায় কারাগারে থাকার সময়ে দুজনের পরিচয় হয়। কারামুক্ত হওয়ার পরও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। সুমন হাঁস কেনার জন্য শাহীনকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন টালবাহানার পর ঘটনার দিন হাঁস দেওয়ার কথা বলে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। শাহীন ও তার সহযোগী আসলামকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আগামী শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হবে। সুমনের মোটরসাইকেলটির ক্রেতা শাহীনের ভগ্নিপতিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সুমন তার স্ত্রী রীতা ও মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে নয়া পল্টনের মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পেছনের এলাকার ৮৮/৩ নম্বর বাসায় থাকতেন। এক সময় তিনি ক্যাসিনোর কর্মচারী ছিলেন। ক্যাসিনো বন্ধ হওয়ার পর তিনি পল্টনের কালভার্ট রোডে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে বার্গার বিক্রি শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি কবুতর ও হাঁস পালন করতেন। আর হত্যায় জড়িত শাহীন ও আসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তারা সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া এলাকায় আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করে। ওই এলাকাতেই ভাড়া বাসায় থাকে তারা।
তারা আরও জানান, শাহীনের দাবি, সে সুমনের কাছে ১৪ হাজার টাকা পেত। টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাকে মোগড়াপাড়ার বাসায় ডেকে নিয়ে কোমল পানীয় খাওয়ানোর পর আড্ডা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় ঝিলের পাড়ে। আগে থেকেই তারা জায়গাটি ঠিক করে রেখেছিল। স্থানটি ছিল নির্জন এবং ঝিলে ছিল বড় বড় কচুরিপানা। সেখানে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয় তারা। সুমনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবার নাম আবদুর রব।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পল্টন থানার এক কর্মকর্তা জানান, তদন্তে নেমে নিহতের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে প্রথমে সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করা হয়। তারপর পুলিশের এক নারী সদস্যকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে তাকে ধরা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকেই জানা যায় বিস্তারিত ঘটনা। তবে সুমনের সঙ্গে শাহীনের কীসের লেনদেন ছিল তা স্পষ্ট হয়নি। পুলিশের ধারণা, মাদক ব্যবসা বা অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
সুমনের বড় ভাই সানাউল্লাহ জানান, ১১ মে বিকেলে কবুতর ও হাঁস কিনতে সুমন মোটরসাইকেল নিয়ে সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়ায় যান। এর আগেও তিনি অনেকবার সেখানে গিয়েছিলেন। তবে সেদিন আর ফিরে আসেননি। অনেক খুঁজেও তার সন্ধান না পেয়ে ২৫ মে তারা পল্টন থানায় জিডি করেন। সুমনের মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন ও সঙ্গে থাকা আট হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেই তাকে হত্যা করা হয় বলে তার ধারণা। ঘটনার দিন সুমন পাঞ্জাবি পরে বেরিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন। সুত্র: দেশ রূপান্তর