নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের মূর্তিমান আতংকের নাম মোমেন। হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী এ মোমেনের অত্যাচারে অতিষ্ট কাঁচপুরবাসী। তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কাঁচপুর এলাকায় মোমেনের এতই প্রভাব তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে গেলে তাকে হত্যা নয়তো সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, ডাকতি, সন্ত্রাস, অস্ত্র ও মাদকসহ ৮/১০টি মামলা থাকলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে পুলিশও তাকে গ্রেফতার করতে পারছেনা। সম্প্রতি কাঁচপুর সোনাপুর এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ তিন বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে মোমেন ও তার বাহিনী।
এ ঘটনায় বৃদ্ধাসহ ৩জনকে পিটিয়ে আহত করে মোমেন বাহিনী। এছাড়াও একটি রড সিমেন্টের দোকানে হামলা চালিয়ে ম্যানেজারকে পিটিয়ে আহত করে হত্যার হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে সোনারগাঁ থানায় মোমেন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলা কাঁচপুর ইউনিয়নের কাঁচপুর সোনাপুর এলাকার হাজী আমির হোসেনের ছেলে মোমেন এক সময় সোনারগাঁ থানা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। পরে সে সাউথ আফিকায় চলে যান। সাউথ অফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে কাঁচপুর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগ দিয়ে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় বদলে হয়ে যান নব্য আওয়ামীলীগার। এরপর থেকে বেপোরোয়া হয়ে যান মোমেন। কাঁচপুর এলাকায় গড়ে তোলেন মোমেন নামের বিশাল এক বাহিনী। এ বাহিনীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করে পুরো কাঁচপুর ইউনিয়ন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রন ও মাদক থেকে শুরু করে সকল অপকর্মের হোতা এ মোমেন। এছাড়া কাঁচপুর বাজার ও মহাসড়কের পাশে বসা হকারদের কাছ থেকে তার বাহিনী প্রতিদিন লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। পাশাপাশি সিনহা গার্মেন্ট এর সামনে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন থেকে দিনদুপুরে জ্বালানী তৈল ছিনতাই ও নিদিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করেন এ মোমেন বাহনী। পুলিশের নাকের ডগায় এ ঘটনা ঘটলেও তারা অজ্ঞাত কারনে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। সে আদালতের কয়েকটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, মোমেন ও তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট কাঁচপুরবাসী। সে তার বাহিনীর মাধ্যমে পুরো কাঁচপুর নিয়ন্ত্রন করেন। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারে না। কেউ সাহস করে মুখ খুললে তাকে হত্যা নয় চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেন এ মোমেন বাহিনী।এছাড়া কাঁচপুর বাজার এলাকায় হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় ও বিভিন্ন পরিবহনে চাঁদাবাজি ও তৈল ছিনতাইয়ের টাকা উর্ধ্বতন মহল পর্যন্ত পৌচ্ছে দেন মোমেন। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে রয়েছে মোমেন ও তার বাহিনী। সে নিজেকে কাঁচপুরের স্বঘোষিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। পুলিশ প্রশাসন নাকি কথাই চলে সেজন্য সে যে কোন অপকর্ম করে পার পেয়ে যায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোমেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ ওমরের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মোমেন বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত। এ ব্যাপারে আমি সোনারগাঁ থানার ওসিকে অবগত করেছি। মোমেন এতটাই বেপোরোয়া যে আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া সত্তেও সে আমার নিয়ন্ত্রনের বাহিরে রয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, মোমেনের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ছিনতাইসহ ৮/১০টি মামলা রয়েছে। তিনি আরো জানান, সন্ত্রাসীরা যতই ক্ষমতাশীলই হোক না কেন পুলিশের চেয়ে ক্ষমতাশালী নয়। গতকালও তার বিরুদ্ধে হামলা ও ভাংচুরের একটি মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছি।