নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: যথাযথ তদারকি ও নিরাপত্তাব্যবস্থার অভাবে উদ্বোধনের এক বছর না পেরোতেই চুরি হয়ে গেছে সোনারগাঁয়ের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর এবং বিজয় পার্কের অধিকাংশ সরঞ্জাম। গত বছর অক্টোবর মাসে এই স্মৃতি জাদুঘর ও বিজয় পার্কটি উদ্বোধন করা হয়। ১৯৭১ সালে সোনারগাঁ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা সনমান্দী প্রাইমারি স্কুলমাঠে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি উপ-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। সেটির স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ স্মৃতি জাদুঘর ও পার্কটি নির্মাণ করা হয়। তবে এ স্থাপনাটির কোথাও লিপিবদ্ধ নেই কী কারণে এটি নির্মিত হয়েছে।
সরেজমিনে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও বিজয় পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, এ স্থাপনাটির প্রবেশ মুখের কলাপসিবল গেট খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রবেশ মুখের দুপাশে নির্মিত দুটি টয়লেট ও ওয়াশরুমের দরজা, থাই গ্লাসের পার্টিশন, তিনটি সিরামিকের বেসিন, ছয়টি পানির কল, চারটি লুকিং গ্লাস, দুটি সিলিং ফ্যান, দুটি ফোকাস লাইট, ১২টি রঙিন লাইট চুরি হয়ে গেছে। স্থাপনাটির দেয়াল কেটে নিয়ে গেছে মূল্যবান বৈদ্যুতিক তার, বৈদ্যুতিক সুইচ, শিশুদের জন্য স্থাপিত এসএসের তৈরি দোলনার বিভিন্ন অংশ ও স্লিপারের বিভিন্ন অংশ চুরি হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিজয় পার্কে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওয়াশরুমগুলোয় স্থানীয়রা জ্বালানির জন্য ব্যবহৃত গাছের পাতা মজুদ রেখেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও বিজয় পার্কের উদ্বোধনী ফলক থাকলেও কোথাও উপ-প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কোনো ইতিহাস লিপিবদ্ধ নেই। কী কারণে এ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, আগত দর্শনার্থীদের এ বিষয়ে কোনো কিছু জানার সুযোগ নেই।
এলাকাবাসী জানান, রাত হলেই এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডা বসে। মূলত তারাই এসব চুরি করে নিয়ে গেছে। এটি নামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও বিজয় পার্ক হলেও এখানে দুটি টয়লেট, একটি স্মৃতিস্তম্ভ, শিশুদের জন্য একটি দোলনা ও একটি সিøপার ছাড়া জাদুঘর বলতে আর কিছুই নেই।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কবি শাহেদ কায়েস জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে একটি উপ-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর, অথচ এখানে কোনো জাদুঘরই নেই। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের ছবি ও পরিচিতি দিয়ে একটি কক্ষে জাদুঘর নির্মাণ করা যেত। কিন্তু এটা না করে করা হয়েছে বিজয় পার্ক। বিষয়টি দুঃখজনক।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা ভারতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি, তাদের জন্য ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এটিএম হায়দারের অনুমতিক্রমে সনমান্দী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি উপ-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। আমরা সেই স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি করেছিলাম। এটি নির্মাণের পর পাহারাদার নিয়োগের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলাম। নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে।’
এলজিইডি সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল হক বলেন, প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বিজয় পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বিজয় পার্ক সারা দেশে একই ডিজাইনে করা হয়েছে, তাই এখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইতিহাস আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বিজয় পার্ক সম্পর্কে আমি অবগত নই। এটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’