জিতলে বাঁচার আশ্বাস। না পারলে অপেক্ষায় অতল খাদ।
আজ রাতের নাইজিরিয়া ম্যাচ এমনই রক্তচাপ বাড়ানো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে আর্জেন্টিনাকে। প্রশ্নের মুখে ফেলছে লিওনেল মেসির শ্রেষ্ঠত্বকে। পারবেন কি এল এম টেন এই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে?
এটা ঘটনা যে মেসির পায়েই লুকিয়ে রয়েছে বাঁচার মন্ত্র। তাঁরই দায়িত্ব দুর্বল একটা দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার। আর এখানেই সমস্যা। আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরাই যে মেজাজে নেই। পেনাল্টি নষ্ট করছেন। এক ডজন গোলমুখি শটেও হাতড়ে বেড়াচ্ছেন জাল। নাগাল পাচ্ছেন না তেকাঠির। হারিয়ে যাচ্ছেন ম্যাচ থেকে। তিনি যেন মাঠেই নেই। অন্তত, ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে তাঁকে উধাও দেখিয়েছে মাঠে। বলের জোগান নেই, সতীর্থদের সহযোগিতা নেই। টান পড়েছে যেন মেসির তাগিদেও।
আর্জেন্টনা শিবিরেও অশান্তির ঘনঘটা। কোচ হর্হে সাম্পাওলির বিরুদ্ধে অসন্তোষ চরমে। শিবির থেকে নিত্য বেরিয়ে আসছে বিদ্রোহের খবর। একজোট হওয়া ফুটবলাররা নাকি অপসারণ চেয়েছেন কোচের। যা আবার মেনে নেয়নি ফুটবল ফেডারেশন। শেষ পর্যন্ত নাকি কোচের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে ক্ষমতা। দল নাকি বেছে নেবেন ফুটবলাররা নিজেরাই। যদিও সরকারি ভাবে এমন কোনও খবর মেলেনি। ফলে, ফিসফাস বাড়ছে। যাতে শিবিরের আবহ নিয়ে জল্পনা আরও জোরালো হচ্ছে।
কোচ সাম্পাওলি যদিও বাইরে বাইরে আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠতে চাইছেন। ঘোষণা করছেন জেতার। কিন্তু, তার জন্য মেসিই ভরসা। সমালোচনা চলছে, তাঁর নাকি তেমন কোনও স্ট্র্যাটেজিই নেই। যার অভাবে দিশেহারা দেখাচ্ছে ফুটবলারদের। বারবার প্রথম এগারোয় বদলের মধ্যেও অস্থিরতার ইঙ্গিত দেখা হচ্ছে। দিয়েগা মারাদোনার মতো কিংবদন্তি যেভাবে বারবার কোচের দিকে তোপ দাগছেন, সেটাও স্নায়ুচাপ বাড়াতে বাধ্য।
রাশিয়া বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠার লড়াইয়ে একসময় ধূসর দেখাচ্ছিল আর্জেন্টিনার সম্ভাবনা। সেই সময় পরিত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন মেসি। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে তাঁর হ্যাটট্রিক দলকে তুলেছিল মূলপর্বে। এবারও গ্রুপ পর্বে রয়েছে ছিটকে যাওয়ার ভ্রুকুটি। জিততেই হবে আর্জেন্টিনাকে। একই সময়ে শুরু হওয়া অন্য ম্যাচে আইসল্যান্ড যদি হারিয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়াকে, তখন দেখা হবে গোলপার্থক্য। সেটা সমান-সমান হলে দেখা হবে ফেয়ার প্লে। দেখা হবে কোন দল বেশি কার্ড দেখেছে।
সিকে আবার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন নাইজিরিয়ার মুসা। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য দু’গোল করেছেন তিনি। মেসির লড়াই অবশ্য শুধু মুসা বা নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে নয়। মেসির লড়াই নিজের সঙ্গেও। দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে পিঠ। শপথও নিয়েছেন ঘুরে দাঁড়ানোর। বিশ্বকাপ না জিতে অবসর নয়, জন্মদিনের সঙ্কল্প তাঁর।
সেন্ট পিটার্সবার্গে অনন্ত চাপের মুখে আর্জেন্টিনার দশ নম্বর আসলে মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামেই নামছেন।