নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় অর্ধশত মুসলিম হত্যার ঘটনা বিশ্বজুড়ে ঘৃণা, ভয়, নিন্দা ও ক্ষোভ উসকে দিয়েছে।
ইসলামভীতি, মুসলিমবিদ্বেষ ও অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণা থেকে জন্ম এ হামলায় ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম বিশ্ব। শুক্রবার ওই হামলার আগে টুইটারে ইসলামফোবিয়া ও মুসলিমবিদ্বেষী নানা বক্তব্যে ইশতেহার প্রকাশ করে ভয়ংকর সন্ত্রাসী ব্রেনটন টেরেন্ট।
বিভিন্ন দেশের মুসলিম নেতাদের বক্তব্য ও বিবৃতিতে ফুটে উঠেছে সেই ক্ষোভ। শুক্রবারের ওই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই এর কড়া নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান।
বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে গণহত্যার শিকার হচ্ছে মুসলিমরা। কিন্তু মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা গুরুত্বহীনভাবে বিবেচনা করছে বিশ্ব। মুসলমানদের যে ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি করার ঘটনা ঘটত, সেটা ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সীমান্ত ছাড়িয়ে গণহত্যায় রূপ নিয়েছে।’
এরদোগান আরও বলেন, ‘এখনই যদি পদক্ষেপ নেয়া না হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের আরেকটি বিপর্যয়ের খবর শুনতে হবে। আল্লাহ নিশ্চয়ই নিহতদের ক্ষমা করবেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য সহায়তা প্রয়োজন। এ হামলার ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের পক্ষ থেকে নিউজিল্যান্ডের হতাহত নাগরিকদের প্রতি আমি শোক প্রকাশ করছি।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, তিনি আশা করছেন নিউজিল্যান্ড শিগগিরই এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করবে এবং আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মালয়েশিয়ার বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দল ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারাপানের নেতা খ্যাতনামা নেতা আনোয়ার ইবরাহিম আলজাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ক্রাইস্টচার্চ সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে মালয়েশীয়দের হƒদয়। বিশ্ব মানবতা ও শান্তির জন্য এটাকে এক ট্র্যাজেডি হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে ইবরাহিম বলেন, ‘এ অসভ্য-বর্বর আক্রমণে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এটা মানবতার মূল্যবোধপরিপন্থী কর্মকাণ্ড। হত্যার শিকার ও তাদের পরিবারগুলোর প্রতি এবং নিউজিল্যান্ডের মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
গুলি করে নিরীহ মানুষকে হত্যার ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, ‘আমরা এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’ এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেছেন, ‘ইন্দোনেশিয়া সরকার হত্যার শিকার ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।’ এ হামলার সময় আল নূর মসজিদের ভেতরে ছয় ইন্দোনেশীয় মুসল্লি ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে তিন পালাতে সক্ষম হন।
হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এটাকে ইসলামফোবিয়ার ফল অভিহিত করে ইমরান খান বলেন, সন্ত্রাসবাদ কখনও ধর্ম হতে পারে না। নিহত ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আল আজহার মসজিদের প্রধান ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব লোমহর্ষক এই গণহত্যার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘লোমহর্ষক এই সন্ত্রাসী হামলা দেশে দেশে ক্রমবর্ধিষ্ণু ইসলামফোবিয়া, মুসলিম বিদ্বেষের কথা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।