• রাত ১২:১১ মিনিট শুক্রবার
  • ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ঋতু : শরৎকাল
  • ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
এই মাত্র পাওয়া খবর :
থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সনাতন ধর্ম্বালমীদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ সোনারগাঁয়ে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা দুর্গাপুজা উপলক্ষে মান্নানের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরন পুজা মন্ডপের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা প্রদান সোনারগাঁয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্র ও গাঁজাসহ আটক ১ মাহমুদুর রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন চাঁদাবাজদের কড়া হুসেয়ারী দিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বর্ষীয়ান আওয়ামীলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ মোল্লা বাদশার বিদাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পিরোজপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, আহত ৫০  সোনারগাঁয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার দূর্ণীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সংবর্ধনা বর্জনের ঘোষনা শিক্ষকদের সোনারগাঁয়ে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার সামাজিক সংগঠন “সোনারগাঁ নাগরিক সমাজ” এর পথচলা শুরু সংস্কারপন্থী ও লুটেরাদের জায়গা সোনারগাঁয়ে হবে না : মান্নান জামিনে মুক্ত হলেন সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক রূপগঞ্জ থেকে ছিনতাই হওয়া সুতা ভর্তি কন্টেইনাল সোনারগাঁয়ে উদ্ধার সোনারগাঁয়ে ইউপিতে যারা প্যানেল চেয়ারম্যান হলেন চেয়ারম্যানদের নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন সোনারগাঁয়ে ধর্ষণের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক সেনা বাহিনীর হাতে থানা বিএনপি যুগ্ন-সম্পাদক আটক ছাত্র সমন্বয়কদের গনিত অলিম্পিয়াড সেজন-১ পুরস্কার বিতরন
অভিনেতা ও চিত্রনির্মাতা রবীন্দ্রনাথ

অভিনেতা ও চিত্রনির্মাতা রবীন্দ্রনাথ

Logo


হুসাইন রবিউল:
বহুমুখী সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী সব্যসাচী লেখক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজও সবার কাছে অমর হয়ে আছেন তার সাহিত্য গুণে। সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেটিতে হাত দেননি তিনি। তার বিচিত্র সাহিত্য সম্ভার আলোড়িত করেছে বিশ্ববাসীকে। উপমহাদেশে সাহিত্যে প্রথম নোবেল জয়ের নায়কও তিনি।এক কথায় সাহিত্যসৃজনে সিদ্ধহস্ত রবীঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্য জগতের এক মহীরুহ। শুধু সাহিত্য সৃজনই নয় তিনি তার সৃষ্টিকর্মকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে লেখক কিংবা কবি’র বৃত্ত থেকে বের হয়ে নাট্যকার, চিত্রনির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছেন আমাদের মাঝে।

কবি ও লেখক পরিচয় বাদেও রবীঠাকুর যে একজন সু অভিনেতা সেটা অনেকেরই অজানা। নাটক লেখা এবং অভিনয় এ দুটি বিষয়ের প্রতি রবীঠাকুরের যে অনুরাগ ছিল তা তাঁর লিখিত নাটকের সংখ্যা দেখেই অনুমান করা যায়। সংখ্যার দিক দিয়ে নাটক রচনায় তিনি সর্বকালের সেরা নাট্যকার শেক্সপিয়াকেও ছাপিয়ে গেছেন। যেখানে শেক্সপিয়ারের নাটক রচনার সংখ্যা ৩৭টি সেখানে রবীন্দ্রনাথের নাট্য রচনার সংখ্যা শেক্সপিয়ারের প্রায় দ্বিগুণ। শুধু নাটক রচনা করেই তিনি ক্ষন্ত হননি ক্রমাগতভাবে অভিনয়ও করে গেছেন নাটকে। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ীর পারিবারিক নাট্য মঞ্চে প্রথম অভিনয় করে তিনি বেশ সুনামও অর্জন করেছিলেন। রবীঠাকুরের প্রথম অভিনিত নাটক ছিল তাঁর বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রচিত ‘হঠাৎ নবাব’।

এর পর একে একে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ। ‘অলীকবাবু’ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ১৮৮১ সালে ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’ নাটকে ঋষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮২ সালে নিজের রচিত ‘কালমৃগয়া’ গীতিনাট্যে অন্ধমুনির চরিত্রে অভিনয় করেন। শুধু নাটক কিংবা গীতিনাট্যই নয় রবীন্দ্রনাথ কাব্যনাট্য রচনা ও এতে অভিনয়ের ক্ষেত্রেও ছিলেন সমান পারদর্শী। ১৮৮৯ সালে নিজের রচিত ‘রাজা ও রানী’ এবং ১৮৯০ সালে রচিত ‘বিসর্জন’ কাব্যনাট্যেও অভিনয় করেছেন। নাটক, গীতিনাট্য ও কাব্যনাট্য ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ বেশকিছু প্রহসন রচনা করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে ‘গোড়ায় গলদ, বৈকুণ্ঠের খাতা, হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক উল্লেখযোগ্য। বৈকুণ্ঠের খাতা প্রহসনে রবীন্দ্রনাথ কেদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

১৮৯০ সালে বিসর্জনে যুবক রবীন্দ্রনাথ বৃদ্ধ রঘুপতির ভূমিকায় অভিনয় করেন ৩৩ বছরের ব্যবধানে ১৯২৩ সালে ওই একই নাটকে বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ যুবক জয়সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। বয়সের বিপরীতে তার এ অভিনয় দক্ষতাই প্রমান করে রবীঠাকুর অভিনয়ে কতটা পারঙ্গম ছিলেন। ১৯১১ সালে ‘শারদোৎসব’ নাটকে সন্ন্যাসী এবং ‘রাজা’ নাটকে রাজা ও ঠাকুরদাদা এ দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৪ সালে ‘অচলায়তন’ নাটকে অদীনপুণ্যের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯১৫ সালে ‘ফাল্গুনী’ নাটকে অন্ধ বাউলের ভূমিকায় এবং ১৯১৭ সালে ‘ডাকঘর’ নাটকে ঠাকুরদা, প্রহরী ও বাউলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।

শুধু নাটকেই নয় চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তার নাটক ‘তপতী’ বৃটিশ ডমিনিয়ন ফিল্মস লিমিটেড ১৯২৯ সালে চলচ্চিত্রে রূপদান করেছিলেন। শান্তি নিকেতনে শুটিং হওয়া সে চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। ৮ রিলের এ চলচ্চিত্রের হাতধরেই রূপালি পর্দায় কবিগুরুর প্রথম আবির্ভাব ঘটে। ১৯৩০ সালের ২৬ জুলাই রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে প্রথম বাংলা নির্বাক চলচ্চিত্র ‘দালিয়া’ মুক্তি পায়। রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে ১৯৩২ সালে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘চিরকুমার সভা’ মুক্তি পেয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথের গল্প, কবিতা ও উপন্যাস নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তবে এত এত চলচ্চিত্রের ভিড়ে তিনি নিজেও পরিচালনা করেছেন নটীর পূজা নামে একটি চলচ্চিত্র। নটীর পূজা নামের ওই চলচ্চিত্রটি মূলত রবীঠাকুরের লেখা একটি নাটক। পরবর্তীতে তিনি এটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করেন।
১৯২৭ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে প্রথম নটীর পূজা নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। এরপর ১৯৩১ সালের শেষদিকে রবীন্দ্রনাথ আবার নাটকটি মঞ্চস্থ করার উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় আসেন। সেই সময় ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক নিউ থিয়েটার্স ক্যালকাটার প্রতিষ্ঠাতা বীরেন্দ্রনাথ সরকার রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানান নিউ থিয়েটার্সের ব্যানারে নাটকটিকে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত করার জন্য। রবীন্দ্রনাথ তার কথায় রাজী হয়ে যান। হাত দেন নটীর পূজা চলচ্চিত্র নির্মানে।

এ চলচ্চিত্রের লেখক ও পরিচালক দুটিই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে চলচ্চিত্র নির্মানের আগে প্রযোজক বীরেন্দ্রনাথ এর সাথে রবীন্দ্রনাথের চুক্তি হয়েছিল এ চলচ্চিত্রের লভ্যাংশের অর্ধেক রবীঠাকুরের শান্তি নিকেতনের জন্য দান করতে হবে। এ প্রস্তাব মেনেই নটীর পূজা চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হয়। নিউ থিয়েটার্স স্টুডিও’র ১ নম্বর ফ্লোরে মাত্র ৪ দিন শুটিং করে এ চলচ্চিত্রের নির্মান কাজ শেষ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ এ চলচ্চিত্রটি পরিচালনার পাশাপাশি একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ও করেন। মঞ্চ নাটকের আদলে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি সেন্সর সার্টিফিকেট লাভ করে ১৯৩২ সালের ১৪ মার্চ। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ হাজার ৫৭৭ ফুট। নটীর পূজা ১৯৩২ সালের ২২ মার্চ কলকাতার ‘চিত্রা’ সিনেমা হলে মুক্তি পায়। নিউ থিয়েটার্স কর্তৃপক্ষ মনে করেছিলেন, যেহেতু রবীন্দ্রনাথ নিজে এই ছবিতে অভিনয় করেছেন তাই ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। কিন্তু ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীকালে ছবিটির ব্যর্থতার জন্য মঞ্চায়নের ভঙ্গিতে চলচ্চিত্রায়ণের পদ্ধতিটিকেই দায়ী করা হয়। প্রযোজক বীরেন্দ্রনাথ অল্পদিনের শুটিং করাকেই এই ছবির বাণিজ্যিক ব্যর্থতার কারণ হিসেবে মনে করেছিলেন। তবে সেসময় অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকই ছবিটির “নান্দনিক মূল্যে’র প্রশংসা করেছেন। ছবিটি বানিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় আর কোন চলচ্চিত্র পরিচালনা কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি তিনি।
১৯৪০ সালে নিউ থিয়েটার্সে আগুন লেগে অন্য অনেক ছবির প্রিন্টের সাথে রবীন্দ্রনাথ পরিচালিত একমাত্র চলচ্চিত্র নটীর পূজার নেগেটিভও পুড়ে যায়।


লেখকঃ সম্পাদক,চারদিক


Logo