“আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে” কবি গুরুর এই অপূর্ব গীতিময়তার মতোই আজ সবখানে নব আনন্দে বইছে বসন্তের দখিনা হাওয়া। ‘ফুল ফুটুক আর নাইবা ফুটুক আজ বসন্ত’ এ গান যেন বেজে উঠেছে সবার প্রানে প্রানে। তবে ফুল যে ফোটেনি তা কিন্তু নয়। ফাল্গুনকে স্বাগত জানাতে গাছে গাছে পলাশ শিমুল নিজেদেরকে রাঙ্গিয়েছে রক্তিম রংয়ে। পাশাপাশি ফুটেছে বাহারি ফুল। প্রকৃতি যেন তার অপার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে এতদিন প্রতিক্ষায় ছিল। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বসন্তের ফাল্গুধারা কড়া নাড়ছে আমাদের দুয়ারে। বাধাঁহীন উচাটন মন নিজের অজান্তেই বার বার গেয়ে উঠছে সেই গান “বসন্ত ছুয়েঁছে আমাকে, ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, আজ প্রয়োজন তোমাকে নিসঙ্গ এ হৃদয়ে” আসলে কবি সাহিত্যিকরা বসন্তকে প্রেমের ঋতু হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বসন্তে মানব মনে বৈচিত্র্যময় আবেগের প্রকাশ ঘটে নানা ভাবে। হয়তো প্রকৃতিই রহস্য ঘেরা মনকে এভাবে নিয়ন্ত্রন করে থাকে। শুধু প্রেম ভালবাসা নয় বসন্ত আমাদের উপর নানা ভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বসন্তে ফুল পাখিদের সরব উপস্থিতি, আম্র মুকুলের নৈসর্গিকতা। প্রশান্তিমাখা দখিনা সমিরন সবকিছুতেই বসন্ত যেন এক স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয় আমাদের মাঝে। আমাদের বাংলা সাহিত্যে বসন্ত এক বিরাট স্থান দখল করে আছে। গল্প, কবিতা, নাটক, গান কিংবা চলচ্চিত্র সবখানেই রয়েছে বসন্তের নিজস্ব প্রকাশ। এ দেশের তরুন তরুনীরা বসন্তের প্রথম দিনটিকেই ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করে। যদিও হাল আমলে বিশ্ব ভালবাসা দিবস রূপে একটি দিবসের আবির্ভাব ঘটেছে কিন্তু পহেলা ফাল্গুনের আবেদন কোন অংশেই ম্লান হয়নি। বাঙ্গালী প্রেমিক যুগলরা এ দিনটিকে পালন করে একটু ভিন্ন ভাবে। তরুনীরা বাসন্তী রং শাড়ী পড়ে খোপায় রঙ্গিন ফুল গুজে শতভাগ বাঙ্গালী ললনা হয়ে ঘুরে বেড়ায় প্রিয়জনের হাত ধরে। ফাল্গুনের মাতাল হাওয়ায় দোল খায় তাদের এলো চুল। মন যেন উদাস হয়ে হারিয়ে যায় দূর আকাশের পানে। রঙ্গিন স্বপ্নরা এসে দোলা দেয় মনের ঘরে। প্রেমিক মন তখন তার প্রিয়ার উদ্দেশ্যে গেয়ে ওঠে “ যেখানে সীমান্ত তোমার সেখানেই বসন্ত আমার….” ঋতু বৈচিত্রের বাংলাদেশে ঋতুরাজ বসন্ত বাঙ্গালীর মনে সৃষ্টি করে এক অন্য রকম শিহরন। বাঙ্গালী জাতিস্বত্তার সাথে বসন্ত মিশে আছে তার আপন মহীমায়। যতদিন আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি টিকে থাকবে বসন্তও স্বমহীমায় জাগ্রত থাকবে আমাদের মাঝে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তের বর্ননা করতে গিয়ে লিখেছেন “ আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফুটে কতপাখি গায় ………”। রবীন্দ্রনাথের গানের মতোই এ বসন্তে সবার জীবনে ফুটুক হাজার রঙ্গিন ফুল আর সেই ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ ছড়িয়ে যাক সকলের মনে। জীবন হোক সুন্দর ও স্বপ্নময়।