আশরাফুল আলম, নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম:
সাংবাদিকতা হচ্ছে অন্যতম সম্মানজনক পেশা। সে জন্যই সাংবাদিকদের সমাজের অতন্দ্র প্রহরী বা ‘গেট কিপারস’ বলা হয়। তাছাড়া সাংবাদিক সমাজ জাতির বিবেক হিসেবে চিহ্নিত। তাই সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যারা রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষকে নিরলস ভাবে সেবা দেন। সাংবাদিকতা পেশা সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবাধিকার সংরক্ষণ, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধাচারণ, দূর্বল জনগোষ্ঠীর পক্ষধারণসহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ক্ষেত্র দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সাংবাদিকতা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবেই রয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে স্বাধীন গণমাধ্যমের কিছুটা অবনতি হয়েছে। আর সাংবাদিকতা জড়িয়ে যাচ্ছে ব্যবসা স্বার্থের সঙ্গে। তাই অনেকের প্রশ্ন যে সাংবাদিকতা সত্যানুসন্ধান ও শান্তির পক্ষে এবং জনস্বার্থে কতটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম? দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন সাংবাদিকতা সত্য ও শান্তির পক্ষে এবং জনস্বার্থে ভূমিকা রাখার উপযুক্ত বাহন। যা একটি দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেয় ও অনুপ্রাণীত করে থাকে।
সাংবাদিক ও সংবাদ প্রকাশনাকে গণ মাধ্যমকর্মী এবং গণমাধ্যম বলা হয়ে থাকে। যে মাধ্যমগুলো প্রযুক্তিগত ভাবে গণযোগাযোগ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাকেও গণমাধ্যম বলে। যেমন সম্প্রচার মাধ্যম- ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে তাদের তথ্যাবলি টেলিভিশন, রেডিও বা বেতারে প্রচার করে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মুদ্রিত মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্র, সাময়িকী, নিউজলেটার, বই, লিফলেট এবং পাম্পলেটে বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। মোবাইল, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটকেও গণমাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ কারণে অনেক গণমাধ্যমের পদচারণা ওয়েব সাইটে দেখা যায়। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে গণমাধ্যমকে প্রধান ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো বই, সংবাদপত্র, সাময়িকী, নিউজলেটার, ধারণ যন্ত্র, রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট। একবিংশ শতকের শুরুতে গণমাধ্যমের প্রকারভেদ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, গণমাধ্যমের বিভাজন সুস্পষ্টভাবে আরও বৃদ্ধি পাবে। বিংশ শতাব্দীতে সেভেন মাস মিডিয়া নামে গণমাধ্যম পরিচিত ছিল। সে ধারায় বর্তমান ৭টি গণমাধ্যম হলো মুদ্রিত বই, পাম্পলেট বা ক্ষুদ্র পুস্তক, সংবাদপত্র, সাময়িকী প্রভৃতি মাধ্যম যা পঞ্চদশ শতক থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। ধারণ যন্ত্র বা রেকর্ডিং গ্রামোফোন রেকর্ড, ম্যাগনেটিক ট্যাপ, ক্যাসেট, কার্ট্রিজ, সিডি, ডিভিডি ইত্যাদি মাধ্যম যা উনবিংশ শতকের শেষ দিকে প্রচলিত। রেডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে যা ১৯১০ সাল থেকে প্রচলিত। টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা যা ১৯৫০ সাল থেকে প্রচলিত। ইন্টারনেট ব্যবস্থা যা ১৯৯০ সাল থেকে প্রচলিত। মোবাইল ফোনের মাধ্যম যা ২০০০ সাল থেকে গণমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
গণমাধ্যমের কাজ হল সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তাদের ভুল-ত্রুটিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। মানুষ প্রত্যাশা করে সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যাদের কাজের সঙ্গে জনগণের স্বার্থ জড়িত গণমাধ্যম তাদের কাজের ওপর নজরদারি রাখবে, জনবিরোধী বা কোন অন্যায়-অনিয়ম-দুর্নীতি হলে সেসবের সমালোচনা করবে। সবারই প্রত্যাশা, গণমাধ্যম হবে গণমুখী, এলিটদের স্বার্থের দিকে নজর না দিয়ে সাধারণ জনগণের দিকে নজর দেবে। দেখতে হবে গণমাধ্যমে সাধারণ মানুষের বাস্তব প্রবেশাধিকার আসলে কতটুকু? সব মিলিয়ে গণমাধ্যমের ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ আসলে কতখানি!
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, যে দেশে সংবাদপত্র স্বাধীন, সে দেশে র্দুভিক্ষ হয় না। একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গণমাধ্যম ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। গণমাধ্যমকে দেশের অগ্রগতিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ জরুরি। প্রথমত-গণমাধ্যম হবে স্বাধীন, দ্বিতীয়ত- গণমাধ্যম মানসম্পন্ন তথ্য সরবরাহ করবে এবং তৃতীয়ত- এর পরিসর বড় হতে হবে যার অর্থ জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে গণমাধ্যমের সঙ্গে। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় অবদান সম্ভবত দুর্নীতি বিষয়কে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা। তা ছাড়া বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে সাধারণ ভাবে মিডিয়া সোচ্চার। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশের ভূ-অভ্যন্তরের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি ও এর ভয়ানক প্রভাব সম্পর্কে প্রিন্ট মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ফলে সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত ইউনিসেফ, ডব্লিওএইচও ও বিশ্বব্যাংক এগিয়ে এসেছিল। মার্শাল ম্যাকলুহান ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মিডিয়া’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়েই বলছেন, ‘মিডিয়া ইজ দ্য মেসেজ’। মাধ্যমই সংবাদ।