ভারতে এক নারী সাপের কামড়ের শিকার হওয়ার পর ওই নারীসহ তার তিন বছর বয়সী কন্যাসন্তানও মারা যান।
সাপের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বুঝতে না পেরে ওই নারী তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করেন। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে মারা যান দুইজনই।
এই খবরটি এমন একটি দিনে পাওয়া যায় যেদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাপের দংশনের ঘটনাকে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য অগ্রাধিকার’ হিসেবে বিবেচনা করার ঘোষণা করে।
প্রতিবছর ৮১ হাজার থেকে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, যার প্রায় অর্ধেক মৃত্যুর ঘটনাই ঘটে ভারতে।
কতটা গুরুতর এই সমস্যা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়, যদিও সেসব ঘটনার অর্ধেকের কিছু বেশি ক্ষেত্রে আক্রমণ হওয়া ব্যক্তির শরীরে বিষ প্রবেশ করে।
সাপের আক্রমণের শিকার হওয়ার পর সারাবিশ্বে লক্ষাধিক মানুষ অন্ধত্ব বা চিরস্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব ঘটনাকে গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার সবচেয়ে উপেক্ষিত ব্যধি বলে আখ্যা দিয়েছে।
সাব-সাহারান আফ্রিকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে।
দরিদ্র গ্রামবাসীরা সাধারণত সাপের কামড়ের ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন। অনেক সময় প্রতিষেধক ও আধুনিক চিকিৎসার সুব্যবস্থা না থাকায় সনাতন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার কারণে দরিদ্র গ্রামবাসীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকে।
সাপের আক্রমণের হার প্রবল- এমন অনেক দেশেরই নিজেদের প্রতিষেধক তৈরির ব্যবস্থা নেই। বিষক্রিয়ার প্রভাব দূর করতে বা কমাতে সাধারণত দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সাপের আক্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে সব দেশে একই পদ্ধতিতে চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে কি হয়?
বিষাক্ত সাপকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
স্থায়ী দাঁতসহ সাপের বিষে সাধারণত নিউরোটক্সিক বিষ থাকে যা স্নায়ুতে আঘাত করে ও শ্বাস-প্রশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অন্যান্য প্রজাতির সাপের দাঁত লুকানো থাকে যা সাধারণত শিকার করার সময় বা শত্রুকে আক্রমণ করার সময় ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের সাপের আক্রমণে চামড়ার টিস্যু ক্ষিতগ্রস্ত হয় ও শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয় থাকে।
কোন সাপের বিষ সবচেয়ে বিষাক্ত?
কোন সাপের বিষ সবচেয়ে বিষাক্ত ও কোন ধরনের সাপ মানুষের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর তা নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
মাটিতে বসবাস করা যে কোনো সাপের মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ তাইপানের বসবাস অস্ট্রেলিয়ায়।
বলা হয়, এই সাপের এক ছোবলে যে পরিমাণ বিষ উদগীরণ হয় তা দিয়ে ১০০ জন মানুষ মারা যেতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রজাতির সাপের দংশনে কোনো মানুষ মারা গিয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি।
এই প্রজাতির সাপ সাধারণত লাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং দুর্গম জায়গায় বাস করে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় এর প্রতিষেধকও সহজলভ্য।
সামুদ্রিক সাপও অত্যন্ত বিষাক্ত হয়। তবে মানুষের সংস্পর্শে কম আসার কারণে এই সাপের কামড়ের ঘটনা বিরল।
অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত কিন্তু অত্যন্ত বিদজনক ব্ল্যাক মাম্বা ও উপকূলীয় তাইপান (অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়) মানুষের জন্য বেশি ঝুঁকির কারণ।
এই দুই ধরনের সাপই একই প্রজাতির এবং তাদের বিষ খুবই দ্রুত কাজ করে। সঠিক চিকিৎসা করা না হলে এই ধরনের সাপের কামড়ের শিকার ব্যক্তি আধা ঘণ্টার কম সময়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে।
কোন সাপের কামড়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়?
সাপের আক্রমণের সংখ্যা ও মৃত্যুহারের হিসেবে, অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ভাইপার (বোরা সাপ) সবচেয়ে বেশি বিপদজনক। পশ্চিম আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশে এই ধরনের সাপ পাওয়া যায়। এরা সাধারণত অন্ধকারে আক্রমণ করে।
সাপের কামড়ে বিশ্বে প্রতিবছর মৃত্যুর ঘটনার অর্ধেকই ভারতে হয় বলে মনে করা হয়। ভারতে যে চার ধরনের সাপের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় তাদের মধ্যে এই ভাইপার বা বোরা সাপ অন্যতম।
শীর্ষ চার প্রজাতির বাকিগুলো হলো:
সাপ কামড়ালে কি করা উচিৎ?
সাপের দংশনের শিকার হলে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের পরামর্শ অনুযায়ী যা করণীয় তা হলো:
নিম্নবর্তী কোনো পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করবেন না:
বিষধর সাপ ধরা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এমনকি মৃত সাপও সাবধানতার সাথে ধরা উচিৎ, কারণ সদ্যমৃত সাপের স্নায়ু মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সতেজ থাকতে পারে এবং তখন তা দংশন পারে।