ত্বকের নানান সমস্যা, জ্বলুনি, কাটা-ছেঁড়া ইত্যাদি সমাধানে অ্যালো ভেরার নির্যাস ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। রূপবিশেষজ্ঞরা ব্রণের দাগ দূর করতে অ্যালো ভেরার সাহায্য নিয়ে থাকেন। আর এই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে বাজারে পাওয়া যায় অ্যালো ভেরার দিয়ে তৈরি হরেক রকম প্রসাধনী।
তবে প্রশ্ন জাগতে পারে আসলেই কি এই ঘৃতকুমারীর পাতার নির্যাস ব্রণের দাগ দূর করে?
‘হেল্থলাইন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।
ত্বকের দাগ কমাতে অ্যালো ভেরা
বিভিন্ন পন্থায় অ্যালো ভেরা ত্বকে দাগের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধের সক্রিয়তা বাড়ায়: ২০০৯ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ন্যাচারাল থেরাপি’তে প্রকাশিত এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, অ্যালো ভেরা প্রদাহের ক্ষেত্রে প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে ধীরে ধীরে ব্রণের দাগ কমে।
‘কোলাজেন’ ও স্থিতিস্থাপক আঁশ তৈরিতে সহায়ক: অ্যালো ভেরার নির্যাসে থাকা আঁশ দাগাক্রান্ত ত্বক সুস্থ করতে সহায়তা করে। ত্বক ভালো রাখতে বিশেষত, কোলাজেনের যৌগ বাড়াতে সহায়ক বলে জানায় ‘ইরানিয়ান জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্স ট্রাস্টেড সোর্স’ থেকে। এই আঁশের বৃদ্ধি বয়সের ছাপ কমাতেও সক্ষম।
প্রদাহ কমায়: ‘ফার্মাকগনোসি রিভিউ’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, অ্যালো ভেরার ব্যবহার প্রদাহ কমাতে পারে। ফলে ব্রণ থেকে হওয়া দাগ হ্রাস পায়।
‘হেল্থলাইন ডটকম’য়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দাগ কমানোর সঙ্গে অ্যালো ভেরার সম্পর্ক বিষয়ে নানান গবেষণায় দেখা গেছে এটা পোড়া ও অস্ত্রচিকিৎসা থেকে হওয়া দাগ কমাতে সক্ষম। আর ব্রণের দাগ দূর করতেও খুব ভালো কাজ করে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, দাগ কতটা পুরানো
সাধারণত, দাগ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর চিকিৎসা বা যত্ন নেওয়া শুরু করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
‘ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় দাবি করা হয়, পুরাতন দাগ দূর করতে নিয়মিত অ্যালো ভেরা ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া গেছে।
২০১৮ সালে ‘দি জার্নাল অফ ক্লিনিকাল অ্যান্ড অ্যাসথেটিক ডার্মাটলজি’তে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, অ্যালো ভেরায় থাকা ‘অ্যালোসিন’ নামক যৌগ ব্রণের দাগ ও ‘হাইপারপিগ্মেন্টেইশন’ কমাতে সাহায্য করে।
‘অ্যালোসিন’ ত্বকে অতিরিক্ত মেলেনিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। এই কালচে রঞ্জক ব্রণের দাগকে আরও বেশি সুস্পষ্ট করে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের করা এই পর্যবেক্ষণে অংশ নেওয়া অংশগ্রহণকারীরা ১৫ দিন চারবার করে অ্যালো ভেরা ও ‘আরবিউটিন’ নামক উপাদান ব্যবহার করেন। দেখা গেছে, এই দুইটি যৌগ এক সঙ্গে দাগ কমানোর ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।
দাগ দূর করতে অ্যালো ভেরা যতটা সময় নেয়
ব্রণের দাগ সাধারণত তিনটি ধাপে বাড়ে। এগুলো হল-
প্রদাহ: ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের অংশে প্রথমত, রক্তনালী শক্ত হয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহ বাঁধা প্রাপ্ত হয়। ফলে মেলানিনের উৎপাদন বেড়ে যায় ও ত্বকে কালো দাগ দেখা দেয়। দাগাক্রান্ত স্থানে প্রদাহের যৌগগুলো আসে।
ক্ষত স্থানে কোষের গঠন: ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে দূর করে এবং নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নতুন ‘কোলাজেন’ উৎপন্ন হয়। সাধারণত স্বাস্থ্যকর ত্বকে থাকে ২০ শতাংশ কোলাজেন সেখানে ব্রণের দাগাক্রান্ত ত্বকে ৮০ শতাংশ ‘টাইপ-আই কোলাজেন’ থাকতে পারে।
পুনর্গঠন: ত্বকে প্রোটিনের ভারসাম্যহীনতা অতিরিক্ত কোষের সৃষ্টি করে। ফলে দাগগুলো গাঢ় বা নতুন দাগের কারণ হতে পারে। যা ‘হাইপারট্রফিক স্কার্স’ হিসেবে পরিচিত।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, দাগ পড়ার চেয়ে তা দূর হতে বেশি সময় নেয়। তবে, এক্ষেত্রে দিনে দুতিনবার বা তার বেশি উপকারী যৌগ যেমন- অ্যালো ভেরা কয়েক সপ্তাহ বা মাস ব্যবহারের দাগ দূর হতে দেখা যায়।
ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে ২৮ দিন বা তার বেশি সময় (বয়সের তারতম্য প্রভাব রাখে) নিতে পারে। তাই নিয়মিত অ্যালো ভেরা ব্যবহারে এর ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।