নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: সোনারগাঁ উপজেলা আনন্দবাজার মেঘনা নদীর তলদেশ থেকে ইজারা ছাড়া প্রকাশে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে নিচ্ছে ওরা ক’জন। দিনের আলোতে ইজারা ছাড়া অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীরা। এদিকে, স্থানীয়রা তাদের বাধা দিতে গেলে শক্তিশালী এ বালু চক্রটি উল্টো স্থাণীয়দের বিরদ্ধে ঠুকে দিচ্ছে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন হয়রানারীর মতো মামলা।
জানাগেছে, সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীতে ৭টি বালু মহাল থাকলেও নদী ও নদীর আশপাশের গ্রামগুলোকে বিলিনের হাত থেকে রক্ষা পেতে জেলা প্রশাসক ৬টি বালু মহাল বাদ দিয়ে উপজেলার বারদী ইউনিয়নের আনন্দবাজার বালু মহালটি ইজারা দেয়। কিন্তু সরকার থেকে এখনো বালু মহালটি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি বিধায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। উপজেলার মেঘনা নদীর আনন্দবাজার বালু মহালটি কয়েক মাস বন্ধ থাকায় সে সুযোগে স্থানীয় বালু চোরেরা পুরোদমে অবৈধভাবে শুরু করেছে বালু উত্তোলন। মেঘনা নদীর চান্দেরপাড়া এলাকায় বালু উত্তোলনের জন্য সরকারিভাবে কোনো ইজারা দেয়া না হলেও স্থানীয় বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নবী হোসেন ছোট ভাই নজরুল ইসলাম নবীজির দোয়া ও মায়ের স্মৃতি নামের দুটি ড্রেজার দিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা আল-আমিন মক্কা মদিনা নামের একটি ড্রেজার দিয়ে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইসমাইল মেম্বারের ছেলে রকি প্রত্যাশা, বয়জিত ও মাতাব্বর নামের ৩টি ড্রেজার দিয়ে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য রোবায়েত হোসেন শান্ত চালাচ্ছেন বিশ্বনবী ও শাপলা নামের ২টি ড্রেজার দিয়ে ও আওলাদ হোসেন শাপলা নামের একটি ড্রেজার দিয়ে বালূ কেটে নিচ্ছে। এ চক্রটি শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিন রাতে মেঘনা তলদেশ থেকে বালু লুট করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু কেটে নেওয়ার কারণে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার, মামরকপুর, হারিয়া, সোনাময়ী, সাতভাইয়াপাড়াসহ সাত গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে। যে কোনো সময় ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা মৌখিক ও লিখিত ভাবে উপজেলা প্রশাশনকে অবহিত করেলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, সোনারগাঁ উপজেলা থেকে আনন্দবাজার বালু মহাল মাত্র ১০মিনিটের রাস্তা। তারপরও দিনের পর দিন প্রকাশে বালু সন্ত্রাসীরা বালু উত্তোলন করছে তারা কোন প্রদক্ষেপই গ্রহন করছেনা। নামে মাত্র একদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫ শ্রমিককে ধরে নিয়ে কারাদন্ড দিলেও মূলহোতারা রয়ে গেছে ধরাছোয়ার বাহিরে। তারা আরো অভিযোগ করেন মোবাইল কোর্ট ড্রেজারের শ্রমিক ধরে নিয়ে মোবাইল কোর্ট করলেও ড্রেজারগুলো জব্দ করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসন যদি ইচ্ছে করে তাহলে একটা ড্রেজারও বালু কাটতে পারবেনা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈদ্যেরবাজার ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের ছেলে রকি জানান, আমরা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত নই। ফ্রেস কোম্পানী নদীর বালু কাটিংয়ের জন্য আমার কাছ থেকে একটা ড্রেজার ভাড়া নিয়েছে। তারা কিভাবে সরকার থেকে পারমিশান আনছে আমি জানি না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, নদী রক্ষা করা সবার দায়িত্ব রয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তি থেকে জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আর যারা বালু উত্তোলন করছে তারা কেউ জনপ্রতিনিধি কেউবা রাজনীতিবিদ। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি বালু উত্তোলন বন্ধ করতে। সেজন্য আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১২জনকে সাজা দিয়েছি, কয়েকটি ড্রেজার নষ্ট করছি। তবে, আগামীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বালু কাটার সাথে জড়িত সকল ড্রেজারকে জব্দ করে সরকারীভাবে অকশনের ব্যবস্থা করার চিন্তা করছি। এসময় তিনি অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমাদের সাথে যদি স্থানীয় প্রশাসনে অন্য সেকটরগুলো চেষ্টা করতো তাহলে বালু উত্তোলন সম্ভব হতো না।