নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম:
সোনারগাঁ উপজেলার ব্রাহ্মনবাগা ও বস্তল এলাকায় কৃষকদের ফসলী জমি জোর পূর্বক অবৈধভাবে ভরাট করে সাইনবোর্ড নির্মাণ করে বিক্রি করছে একটি আবাসন কোম্পানীর মালিক। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করা সহ দুইশত একজন কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জেলা প্রশাসকের কাছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়েছে, আমরা নি¤œ স্বাক্ষরকারীগণ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। বর্তমানে আমাদের মালিকানাধীন বস্তল ও ব্রাহ্মনবাগা মৌজায় বিভিন্ন দাগের জমির উপর “সৃজন হাউজিং” নামে একটি আবাসন কোম্পানীর মালিক শামীম তারেক নামে এক ব্যক্তি ও স্থানীয় কিছু অসাধু লোকের যোগসাজশে জোর পূর্বক অবৈধ ও বেআইনী ভাবে আমাদের ফসলী জমি জোর পূর্বক বালু ভরাট করে সাইন বোর্ড নির্মাণ করে ফেলেছেন। স্থানীয় ভাবে অনেক চেষ্টা তদবিরের পরও আমাদের জমিতে বালু ভরাট কাজ, সাইনবোর্ড নির্মাণ বন্ধ করতে পারিনি। অথচ সৃজন হাউজিং এর নামে হাউজিং করার মত কোন মালিকানা জমি তাদের নেই। সৃজন হাউজিং কোম্পানি বেআইনি ভাবে আমাদের জায়গা দখল করে তার উপর সাইনবোর্ড নির্মাণ বিভিন্ন অসহায় লোকদের কাছ থেকে অন্যের জমি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে বস্তল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ কৃষকদের জমি ভরাট করে ইট ও বালু দিয়ে প্লট তৈরি করে তাদের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। এ সকল প্লট বিক্রি করে অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
জামপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট গ্রামের ভুক্তভোগী হোসেনেআরা বলেন, সৃজন কোম্পানীর মালিক শামিম তারেক ও তার কয়েকজন সহযোগী মিলে আমার ফসলী জমি জোর পূর্বক দখল ও বালু ভরাট করে তাদের আসা যাওয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণ করে ফেলেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানালেও কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তারা।
কামরুজ্জামান ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, তাদের কোম্পানীর মালিকানাধীন কয়েক বিঘা জমি দখল করে রাস্তা ও সাইনবোর্ড নির্মাণ করে ফেলেছেন শামিম তারেক।
নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আমজাত হোসেন বলেন, আমাদের প্রায় ২৯ শতাংশ ফসলী জমি জোর পূর্বক বালু ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। প্রশাসনের কাছে ধন্না দিয়েও কোন প্রকার সুরাহা পাচ্ছি না।
দড়িকান্দী গ্রামের মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ত্রি-ফসলী দুই বিঘা জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে। এ জমির ফসল দিয়ে আমাদের পরিবারের সদস্যরা সারা বছর জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।
মহজমপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়া বলেন, তারেক শামিমের নামে মাত্র কয়েক বিঘা জমি থাকলৌ বেশীর ভাগ জমি ক্রয় না করে দখল করে রেখেছে।
কাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান ভূইয়া বলেন, সৃজন হাউজিং এর মালিক অল্প কিছু জায়গা ক্রয় করে অন্যের জমি দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে প্লট দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রকৃত পক্ষে কোন প্লটই দিতে পারবেন না শামিম তারেক।
শেখেরহাট গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন বলেন, আমাদের বাপ দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করে রেখেছেন। গরীব বলে কোথাও কারো কাছে বিচার পাচ্ছি না আমরা। এ বিষয়ে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, সৃজন হাউজিং এর মালিক শামিম তারেক পাঁচ বছর পূর্বে বস্তল এলাকায় কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করেন। গত বছর স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী সাধারণ মানুষের জায়গা জোর পূর্বক বালু ভরাট করে দখল করে নেয়। বালু ভরাটের সময় সাধারণ কৃষকরা বাধা দিলেও তারা তা মানেনি। শামিম তারেক প্লট দেওয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও কার জায়গা সে গ্রাহকদের দিবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে প্রতিকার চায়।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বলেন, আমাদের যুবলীগ কর্মীরা যদি অবৈধ বালু ভরাটের সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৃজন হাউজিং এর মালিক শামিম তারেক বলেন, আমি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে নিয়ে প্লট বিক্রি করছি। কারো জমি জোর পূর্বক দখল করে বিক্রি করার সঙ্গে আমি জড়িত নই।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বি.এম রুহুল আমিন রিমন বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খুব শিঘ্রই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, সাধারণ কৃষকদের জমি দখল করে বিক্রি করার সঙ্গে জড়িতদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, সাধারণ কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা করে সে সকল লোক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।