নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজমান বিরোধের অনেকটা নিরসনের পথে। বিশেষ করে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের রাজনৈতিক দুরত্ব কাটিয়ে ইতিমধ্যে তাদের রাজনৈতিক সর্ম্পকের নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক এ দু নেতার বর্তমান সর্ম্পকে সু-বাতাস হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামীলীগের সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি জামায়েত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে পদার্পন করেন প্রয়াত নেতা আবুল হাসনাতের মেজ ছেলে কায়সার হাসনাত। সে সময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমানের হাত ধরেই সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের হাল ধরেন। সে সময় জাতীয়পার্টি থেকে আসা ২০০১ সালের আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচেন পরাজিত হওয়া সাবেক এমপি আনম বাহাউল হক ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের হর্তাকর্তা।
সেই সময় মাহফুজুর রহমান কালাম ও আবুল হাসনাতের নিজস্ব কর্মীবাহিনীর হাতে রাজনীতির হাতেখড়ি হিসেবে পরিচিত হন কায়সার হাসনাত। সে সময় বিএনপি জামায়াত জোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাজপথে লড়াকু সৈনিক হিসেবে আভির্ভাব হয়েছিলো কায়সার হাসনাতের। সেই সময় নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি এসএম আকরাম, সাবেক এমপি এমদাদুল হকের মতো বড় বড় নেতাদের মাঝ খান থেকে জোট সরকার বিরোধী সোনারগাঁয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে শেখ হাসিনার নজরে আসেন কায়সার হাসনাত।
এক সময় তিনি সোনারগাঁ থেকে মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে জোর লবিং শুরু করেন। সেই সময়কার নেতা বাহাউল হককে পিছনে ফেলে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যান কায়সার হাসনাত। তার পাশাপাশি তার চাচা মোশারফ হোসেনও হাসনাত পরিবারের একজন হিসেবে মনোনয়ন দাবি করে কায়সারের প্রতিদ্ধন্ধি হিসেবে মনোনয়ন প্রার্থী হন। সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে ২০০৯ সালে আবদুল্লাহ আল কায়সার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী চার বারের এমপি রেজাউল করিমকে ৮২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয় লাভ করেন।
সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধিতায় নামেন কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেন ও মাহফুজুর রহমান কালাম। সংসদ নির্বাচনে দিনরাত মাঠে থেকে কায়সার হাসনাতকে বিজয়ী করার পেছনে কালাম পরিশ্রম করেন তা সংসদ নির্বাচনের পর ভুলে যান এমপি কায়সার। সে সময় তিনি তার পরিবারের চাপের কারনে কালামকে সমর্থন না দিয়ে নিরপেক্ষ ভুমিকায় থাকেন।
এদিকে, মোশারফ হোসেন তার ভাতিজার ক্ষমতা ও সদ্য ক্ষমতাচ্যুত বিএনপির নেতাকর্মীদের দাপটে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই থেকে শুরু কালাম কায়সারের রাজনৈতিক দ্বন্ধ। যা প্রকাশ পায় কায়সার এমপি হওয়ার তিন বছর পর। কালাম কায়সার প্রকাশ্যে দ্বন্ধ শুরু হওয়ার পর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও তার অনুসারীরা তখন ভীড়তে শুরু করেন কায়সার হাসনাতের দিকে।
অবশেষে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনে কায়সার হাসনাতকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত করে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয় মোশারফ হোসেনকে। সেই মনোনয়ন তাদের পরিবারের কাছে থাকলেও সেটাকে ভালো চোখে দেখেনি কায়সার। মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পাওয়ার পর তাদের বাড়িতে নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করা হয়। সে সভায় কায়সার হাসনাত তার চাচা মনোনয়ন পাওয়ায় খুশি হন কিন্তু তার নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে তার চাচার জন্য কাজ করার নির্দেশ দেননি। সেই নির্বাচনে অবশেষে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন মোশারফ হোসেন। ফলে বিনা ভোটে নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। সোনারগাঁ আসন থেকে লিয়াকত হোসেন এমপি হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামীগ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৈরী হয় নেতাদের মধ্যে দুরত্ব।
বর্তমানে সোনারগাঁয়ে সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদেও সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু, এইচএম মাসুদ দুলাল ছাড়া আরো তিনজন মনোনয়নের জন্য দৌড় লবিং চালাচ্ছেন।
এ দিকে, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সবাই বিভক্ত হয়ে নৌকার মনোনয়নের জন্য সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। ফলে দিনে দিনে চাচা ভাগিজা, কায়সার কালামসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে বিরাজমান দ্বদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে কায়সার হাসনাত ও মাহফুজুর রহমান কালামের নমনীয়তায় অনেকটা স্বস্তিতে আছেন কালাম ও কায়সার পন্থি নেতাকর্মীরা।
সুত্র জানায়, গত বছর ২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কলাপাতা রেষ্টুরেন্টের সামনে মাহফুজুর রহমান কালামের সমাবেশে প্রয়াত নেতা আবুল হাসনাত ও তার সহধর্মিনী মমতাজ হাসনাতের জন্য দোয়া ও নিরবতা পালন করেন। সে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হসনাত শহীদ মোঃ বাদল।
অপরদিকে, সোহরাওয়াদী উদ্যানে আওয়ামীলীগের জনসভার প্রস্তুতিমুলক সভায় মোগরাপাড়া চৌরাস্তা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে কায়সার হাসনাত মাহফুজুর রহমান কালামের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া উপজেলা যতগুলো সভা সমাবেশ করেছেন কালাম কায়সার পৃথকভাবে তার একটিতেও কেউ কাউকে নাম নিয়ে কিংবা কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেননি।
এদিকে, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যখন দলের নেতাকর্মীরা দলের ঐক্যে গড়ার জন্য নেতাদের তাগিদ দিচ্ছিলেন ঠিক সেই মুর্হুতে সাবেক খাদ্য, মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর হাসান চৌধুরী এসে সোনারগাঁয়ে অডিটোরিয়ামে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মোশারফ হোসেন, ডাঃ আবু জাফর চৌধূরী বিরু, আনোরুল করিমসহ অন্যান্য নেতাদের দাওয়াত না দিলেও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতকে সে অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে দাওয়াত করা হয়। এবং মাহফুজুর রহমান কালামই সদস্য সংগ্রহ ফরম কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে উদ্ধোধন করার জন্য কায়সারকে অনুরোধ জানান।
ফরম সংগ্রহ শেষে ২০ টাকা পরিশোধ না করায় মাহফুজুর কালামই রশিকতা করে বলেন, ‘এ কায়সার তুমি দি ফরমের টাকা দিলে না।’ তখন পাশে থাকা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কায়সারের পক্ষে ২০ টাকা পরিশোধ করেন। পরে কায়সার অবশ্য ফরমের জন্য কালামের হাতে ৫শত টাকার একটি নোট তুলে দেন। সে অনুষ্ঠানে কায়সার ও কালাম দুজনের নমনীয়তা দেখে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা ও তার কর্মীদের কালামের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।