নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকমঃ
আগামী জাতীয় নির্বাচকে সামনে রেখে অন্য সময়ের চেয়ে এবারের ঈদ নেতা ও কর্মীদের কাছে অনেকটাই হতাশা আর নিরানন্দে কেটেছে বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁয়ে বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টিও নেতারা।
কারণ মাত্র কয়েক মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। বিশেষ করে তাই বড় দলগুলোর নেতা ও কর্মীদের এবারের ঈদ আনন্দ সবার মধ্যে ভাগাভাগি করে একে অপরকে কাছে টানতে নিজেদের ভ্রাতৃত্বের অবস্থান সুদৃঢ় করবে। ফলে এবারের ঈদ হবে নির্বাচনী ঈদ। কিন্তু খালেদা জিয়া জেল খানায় অসুস্থ থাকায় বিএনপি নেতারা এবার হতাশার ঈদ উদযাপন করেছেন। অপরদিকে, ক্ষমতাশীন দলের একাধিক নেতা মনোনয়নের জন্য মাঠে কাজ করলেও এবার ঈদে অনেকের দেখা মিলেনি। জাতীয়পার্টির ক্ষেত্রে একই অবস্থা। একমাত্র এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ছাড়া বাকি নেতাদের দেখা মেলেনি।
গত শনিবার মুসলমানদের সবচে বড় উৎসব ঈদ উল ফেতর উদযাপিত হয়ে গেল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল নেতাকর্মীরা আশা করে ছিলো নেতারা এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যে যার যার এলাকায় ঈদ উদযাপন করবে। এতে তৃনমুল নেতাকর্মীরা ছিল উৎফুল্ল। কিন্তু বেশীর ভাগ নেতারা এবার ঈদ উৎযাদন করতে দেখা যায়নি সোনারগাঁয়ে। ফলে নিজ দলের কর্মী ও নেতাদের মাঝে ঈদ আনন্দ হয়েছে হতাশার ঈদ।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সোনারগাঁয়ে বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির একাধিক নেতা মনোনয়নের জন্য মাঠে কাজ করছেন। এর মধ্যে বিএনপির থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান, থানা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, যুব উন্নয়ণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ওয়ালিউর রহমান আপেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল। অপরদিকে, আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল, লন্ডন প্রবাসী ইঞ্চিনিয়ার সফিকুর ইসলাম। এছাড়া জাতীয়পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, অন্যান্য হোসাইন মৌসুমী ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদুত গোলাম মসীহ।
তিনটি বড় দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাপ করলেও এবার ঈদ ও ঈদের পর তাদের অনেকেই দেখা যায়নি সোনারগাঁয়ে। এতে চরম হতাশায় কাটিয়েছেন তাদের সমর্থিত কর্মীরা। অনেকে আবার তাদের নেতাকর্মীদের না পেয়ে ফোনে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য কল করলেও তাদের মোবাইল অটো বিজি করে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ফলে অনেক কর্মী তাদের নেতাকে ব্যঙ্গ করে বলেছে বিজিম্যান।
দলীয় নেতা কর্মীরা জানান, এবার ঈদের জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা প্রতিবারের ন্যায় তাদের নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ করতে ঈদের আগ থেকে সোনারগাঁয়ে অবস্থান করেছেন। তিনি এবার ঈদুর ফেতরের নামায আদায় করেছেন নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াব্ধা ঈদগাহ মাঠে। সেখানে ঈদের জামাত আদায় করে নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করে জামাতে আশা ছোট শিশুদের ঈদের সালামি দেন। জাতীয়পার্টির অপর দুই নেতা অনন্যা হোসাইন মৌসুমী ঈদে বাড়িতে আসার সময় সড়ক দূঘর্টনার শিকার হয়ে বাড়িতে ঈদ করতে পারেননি। তিনি এবার ঈদ করেছেন হাসপাতালে। অপরদিকে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ তার কর্মে ব্যস্ত থাকায় তিনি দেশে আসেননি।
এদিকে, ক্ষমতাশীন দলের হাফ ডজনের বেশী নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তাদের অধিকাংশ নেতাকে দেখা যায়নি ঈদ ও ঈদের পরের দিনগুলোতে। এদের মধ্যে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত আগের ঈদগুলো সোনারগাঁয়ে এসে করলেও এবার তাকে ঈদের আগ থেকে ঈদের পর পর্যন্ত সোনরগাঁয়ে দেখা যায়নি। ফলে ঈদ আনন্দ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হয়েছেন তার কর্মী সমর্থরা। অনেক নেতাকর্মীরা তাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঈদ দিন রাত থেকে ঈদের সারা দিন পর্যন্ত চেষ্টা করেও পাননি। তার ফোনটি অটো বিজি করে রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ঈদের জামাত আদায় করেন তার এলাকার মোগরাপাড়া সাহেব বাড়ি মসজিদে। উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ঈদের জামাত আদায় করেন উপজেলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। সেখানে জামাত আদায় করে স্থানীয় মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করে। বিকাল বেলা তার বাড়িতে নেতাকর্মীদের দাওয়াত করেন। এছাড়া তিনি ঈদের পর দিন থেকে টানা কয়েকদিন উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে মাদক বিরোধী গণসংযোগ করেছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল ঈদের জামাত আদায় করেন তার বাড়ীর সাহেব বাড়ী মসজিদে। পরে বিকাল বেলা তিনি তার বাড়িতে নেতাকর্মীদের দাওয়াত করে ঈদ উদযাপন করেন। আরেক মনোনয়ন প্রার্থী ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু ঈদের জামাত আদায় করেছেন ঢাকার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা ইঞ্চিনিয়ার সফিকুল ইসলাম ঈদ করেছেন দেশের বাহিরে।
অপরদিকে, বিএনপিরও একাধিক নেতা মনোনয়নের জন্য ঘোষনা দিলেও এবার ঈদের তাদের অনেক নেতাকে চোখে দেখেনি তার কর্মীরা। মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম অসুস্থ থাকায় ঈদের জামাত সোনারগাঁয়ে আদায় করলেও তিনি কারো সাথে যোগাযোগ করেনি। যারা তাকে খুঁজেছেন তারা কেউ কেউ তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করার সুযোগ পেয়েছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান ঈদের জামাত আদায় করেছেন তার বাড়ী প্রতাবেরচর এলাকায়। জামাত শেষে তিনি সারাদিন সোনারগাঁয়ে কাটিয়েছেন। এছাড়া ঈদের পরের দিন বিএনপি নেতা বিদ্যুতের জানাযার নামায আদায় করে সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন। পরের দিন সোমবারও তিনি সোনারগাঁয়েই সময় কাটিয়েছেন। অপরদিকে, ওয়ালিউর রহমান আপেল ও ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল ঈদের জামাত সোনারগাঁয়ে আদায় করেলেও নেতাকর্মীদের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ করেনি। এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলা খানায় অসুস্থ থাকায় কারণে নেতাকর্মীরা অনেকটাই নিরানন্দ ঈদ উদযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।
jo