সড়ক দূর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বুধবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানান।
তবে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক নোটিশে সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমান বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার নোটিশ দেয়া হলেও পরবর্তীতে শিক্ষাসচিব মহোদয় আমাকে টেলিফোনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
জাবালে নূর পরিবহনের বাস চাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো বুধবার (১ আগস্ট) শিক্ষার্থীরা দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবস্থান করে। রোববার বাস চাপায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জের ধরে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধের ফলে কার্যত যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীতে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানিয়ে আসছিল। রোববারের দুর্ঘটনার পরও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। সোমবার ও মঙ্গলবারও তারা দাবিতে অনড় থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় এবং দুইটি বাসে আগুন দেয়।
বুধবার সকাল থেকে ফের ব্যাপক আকারে অবরোধ শুরু হলে বেলা একটার দিকে জরুরি বৈঠক হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নেতা নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান এবং বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ থেকে তুলে ধরা সব দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শিক্ষার্থীদের বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে দাবি জানিয়েছে, সবগুলোই যৌক্তিক, আমরা এগুলো আমলে নিয়েছি এবং সবগুলো ইমপ্লিমেন্ট করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা কোনোক্রমেই লাইসেন্সবিহীন, রুট পারমিট এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি শহরে চলতে দেব না।’
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আজ তিন দিন ধরে ছাত্ররা লাগাতারভাবে বসে আছে। তাদের সঙ্গে আমরাও দুঃখিত। তাদের যেরকম সহপাঠী নিহত হয়েছে, আমাদেরও ছেলে-মেয়ে নিহত হয়েছে।’
‘বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সহপাঠীর মৃত্যুর ঘটনায় তারা যে দাবি জানিয়েছে, আমরা যেগুলো পেয়েছি, আমরা মনে করি সবই তাদের যৌক্তিক দাবি। আমরা সবই আমলে নিয়েছি। সবগুলো দাবি বাস্তবায়নের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’