দেশে গত ছয় বছরে সিজারিয়ানের (অস্ত্রোপচার) মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০১০ সালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার ছিল মাত্র শতকরা ১২ ভাগ। ছয় বছর পরে তথা ২০১৬ সালে এসে এই হার শতকরা ৩১ ভাগে দাঁড়ায়। এই ছয় বছরে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের অফিসের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ প্রবণতা বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের হার যে ভয়াবহ তা সাম্প্রতিক প্রবণতা থেকেই পরিষ্কার। তারা জানান, প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোয় সিজারিয়ানের হার অত্যন্ত বেশি। সরকারি হাসপাতালে এই হার মাত্র শতকরা ৩৫ ভাগ হলেও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোয় তা শতকরা ৮৩ ভাগ।
আলোচনায় এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সাত দফা সুপারিশ পেশ করেন। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিজারিয়ান সংক্রান্ত বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ, স্বাস্থ্যব্যবস্থার আধুনিকায়ন, স্বাভাবিক প্রসব-সংক্রান্ত বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোএবং জনবল তৈরি।
অংশীজনদের নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি ক্যাম্পেইন গত এক বছর ধরে চলছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো। সিজারিয়ান সংক্রান্ত নতুন বিধি-বিধান তৈরি, জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর চিকিৎসক ইশতিয়াক মান্নানের মতে, পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, ‘সিজারিয়ানের বিষয়টি সেবাগ্রহীতার পছন্দের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না, তাকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে হবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিআরবি) শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শামস আল আরেফীন বলেন, সিজারিয়ানের ভালো ও মন্দ দিকগুলো সেবাগ্রহীতাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের চিকিৎসক সেলিনা আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত দাইয়ের অভাব রয়েছে।
গাইনোকলজি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর লায়লা আর্জুমান বানু জানান, ‘তারা সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান পালন ও তা মনিটরিংয়ের জন্য ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন’।সুত্র: জাগো নিউজ