রূপচর্চা যে শুধু নারীদের জন্যই, তা নয়। পুরুষদের জন্যও রূপচর্চা সমান দরকারি। একজন পুরুষকে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশতে হয়, চলতে হয়। তাই তার সৌন্দর্যের দিকে খেয়াল রাখাটা জরুরি। তাকে যেমন পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, তেমনি ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে হবে। ত্বকের মসৃণতা, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চুলের স্টাইল, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী হলে একজন পুরুষ অন্যদের কাছে সহজেই আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেন।
অনেকে শুধু সাবান কিংবা শ্যাম্পু ব্যবহার করে নিজের যত্ন নিয়ে থাকেন। কিন্তু শুধু সাবান কিংবা শ্যাম্পুর ব্যবহার সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য যথেষ্ট নয়। চাই কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা। এসকল অভ্যাস মেনে চললে দ্রুত সুন্দর ত্বক পাওয়া সম্ভব।
সুন্দর ও মসৃণ ত্বক পেতে হলে প্রতিদিন কোনো ভালো কোম্পানির ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে । একটি ভালো ক্লিনজার আপনার ত্বকের গভীরে গিয়ে ময়লা পরিষ্কার করবে এবং আপনার মুখকে সতেজ ও সুন্দর রাখবে। এছাড়া আপনার ত্বকের ক্ষত, দাগ ও ব্রণের সমস্যাও দূর করবে। শুধুমাত্র সাবানের ওপর নির্ভর করবেন না। অনেক পুরুষের ধারণা, পুরুষ মানুষের এত কিছুর প্রয়োজন নেই। তা ঠিক নয়। পুরুষের ত্বকের সুস্থতায় প্রয়োজন আরো কিছু পণ্যের ব্যবহার। শুধু সাবানের ব্যবহার ত্বককে শুষ্ক করে তোলে।
যেকোনো ক্লিনজার কেনার সময় প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে, তা ত্বকের সাথে মানানসই কিনা। নয়ত উক্ত ক্লিনজার ব্যবহারে আপনি সুফল পাবেন না। ত্বকের ধরন বুঝে পণ্য কিনতে হবে। টিস্যুর সাহায্যে ত্বক শুষ্ক, তৈলাক্ত নাকি স্বাভাবিক, তা পরখ করে দেখতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বক যাদের, তাদের কপাল, থুতনি ও নাকে তেল চিটচিটে ভাব থাকে।
সুন্দর ত্বক পেতে হলে প্রতিদিন একবার মুখ ধুয়ে নিন।আবার একাধিকবার মুখ ধুলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখবেন, সকালে অথবা রাতে ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুতে হবে।
যদি মনে করেন, হালকা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোবেন, তাহলে ধুতে পারেন। তবে অনেক গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুবেন, তারপর তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুখ মুছবেন।
আপনি যদি দিনের বেলা সানস্ক্রিন ব্যবহার করে বাইরে যান তাহলে বাসায় ফিরে ধুয়ে নিন বা গোসল করে নিন। তবে রাতে সানস্ক্রিন মেখে কখনো ঘুমাতে যাবেন না। এতে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। কারণ সানস্ক্রিনে থাকা উপাদানসমূহ রাতের বেলা আপনার ত্বকের জন্য উপকার বয়ে আনবে না।
সুন্দর ত্বক পেতে হলে কিছুদিন পর পর এক্সফোলিয়েট করুন। যেকোনো স্ক্রাব ক্রিম দিয়ে ত্বকের মৃত কোষ উঠিয়ে ফেলুন। এক্সফোলিয়েট করলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হবে। যখন আপনি স্ক্রাব করবেন, তখন আলতোভাবে ম্যাসাজ করবেন। কিছুক্ষণ পর তা ধুয়ে ফেলবেন।
এক্সফোলিয়েটের জন্য শুষ্ক ফেসিয়াল ব্রাশ উপকারী। তাই একটি ফেসিয়াল ব্রাশ কিনে নিতে পারেন।
সুস্থ, সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে হলে প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। কারণ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে আপনার ত্বক হবে সতেজ ও সুন্দর। ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়, তাহলে এমন ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন যাতে অলিভ অয়েল, বাদাম ও ল্যানোনিনের মিশ্রণ আছে।
ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি চোখের যত্ন নিতে হবে। আপনি যদি সারা শরীরের যত্ন নেন, তাহলে চোখের যত্ন নেওয়াও জরুরী। সঠিকভাবে চোখের যত্ন না নিলে বয়সের সাথে সাথে চোখের নিচের ত্বক ঝুলে পড়বে। তাই চোখের নিচের অংশের যত্ন নিন।
ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ম্যাসাজ করার সময় খুব আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। এভাবে চোখের নিচের ত্বক ভালো থাকবে এবং রক্ত সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে।
মুখের ত্বক, চোখের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে। অনেকে ভাবতে পারেন, পুরুষের ঠোঁটের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ঠোঁট যদি শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়, তাহলে দেখতে ভালো লাগবে না। তাই নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে।
ঠোঁটের যত্নে ব্যবহার করুন লিপ বাম, লিপ জেল, মেরিল, ভ্যাসলিন ইত্যাদি। তাছাড়া নারকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন। গ্রীষ্মকালে তেমন ঠোঁটের যত্ন নেয়ার দরকার না পড়লেও শীতকালে যত্ন নিতে হয়। নয়তো ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়তে পারে।
ছেলেদের প্রতিনিয়ত কিংবা নির্দিষ্ট সময় পর পর শেভ করতে হয়। নয়তো ত্বকে ময়লা জমে এবং দেখতে ভালো লাগে না। চেহারার ধরন অনুযায়ী একেক পুরুষকে একেক রকম দাড়িতে ভালো লাগে। অনেকে দাড়ি রাখতে পছন্দ করে, আবার অনেকে করে না। যারা দাড়ি রাখতে পছন্দ করে না, তাদের জন্য সপ্তাহে দুই তিনবার শেভ করা জরুরি। আর শেভিংয়ের সময় অবশ্যই ভালো রেজার ব্যবহার করতে হবে। একটু উন্নতমানের রেজার ব্যবহার করুন, যেন ধারালো থাকে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির রেজার পাওয়া যায়। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি কিনতে পারেন।
শেভিংয়ের জন্য কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর ভেজা অবস্থায় শেভিং ক্রিম লাগান। শেভিং ক্রিম কেনার সময় কেমিক্যালবিহীন ক্রিম কিনুন। শেভিং করার সময় ধীরে ধীরে করুন, যেন ধারালো ব্লেড থেকে কোথাও চোট না লাগে। শেভিং শেষে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে, তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুখ মুছে নিন। এতে আপনার ত্বকের ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া চলে যাবে।
শেভিং এর পর অবশ্যই একটি ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করবেন। এতে আপনার ত্বক হবে সুন্দর ও সতেজ। ময়েশ্চারাইজারটি যেন ভালো ব্রান্ড কিংবা ভালো কোম্পানির হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।