নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: প্রাপ্ত বিলের উপর ৮% কমিশন দেয়ার পরও বিল পরিশোধ না করায় সোনারগাঁ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর জব্বারকে লাঞ্ছিত করে তার অফিস ঘেরাও তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রুমের দরজা তাকে রক্ষা করেন আরো কয়েকজন ঠিকাদার। গতকাল রবিবার সোনারগাঁ উপজেলা কমপ্লেক্সে ভবনের পিআইও’র কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার আশ্বাস দিলে ঠিকাদাররা কার্যালয় ছেড়ে চলে আসেন।
ঠিকাদাররা জানান, সোনারগাঁ উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জব্বার মিয়া যোগদানের পর থেকে ঠিকাদারদের বিল নিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। কাজ শেষ হওয়ার পরও হেড অফিসকে বিভিন্ন হারে কমিশন না দিলে এ বিল সহজে পাওয়া যাবে নাসহ বিভিন্ন তালবাহানা করে কাজ শেষ হওয়ার পরও ঠিকাদারদের ২ বছর পার করেন। ঠিকাদাররা বাধ্য হয়ে সর্ম্পূণ বিলের উপর ৮% হারে তাকে কমিশন দেন। কিন্তু তারপর ২ বছর আগে সমাপ্ত হওয়া অনেক কাজের বিল এখনও বাকি রয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, টিআর ও কাবিখা’র নামে বরাদ্ধকৃত অর্থ তিনি নিজে স্থানীয় মেম্বারদের মাধ্যমে করে তাদের কিছু টাকা প্রদান করে বাকি টাকা তিনি হাতিয়ে নেন। তারা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মসজিদ এমনকি কবরস্থানের বিল পেতে তাকে শতকরা ২০% হারে কমিশন আগে নগদ দিতে হয়। তা না হলে চেক প্রদান করেন না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ঠিকাদার জানান, গত দুই বছর আগে দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধিনে নোয়াগাঁও, সনমান্দি, জামপুর সাদিপুর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি ছোট ছোট ব্রিজের কাজ হয়। সেই সব ব্রিজের কাজ ঠিকাদারা গত এক বছর আগে শেষ করে বিল জমা দেন। কিন্তু পিআইও কর্মকর্তা জব্বার মিয়া ঠিকাদারদের জানান, এসব ব্রিজের বিল পেতে হলে হেড অফিসে পুরো বিলের ১০% কমিশন টাকা আগে পরিশোধ করতে হবে না হলে বিল পাওয়া যাবে না। অনেকে বাধ্য হয়ে অবশেষে ৮% কমিশন দিয়ে বিল তুলেন অনেকে আবার টাকা দিয়েও পুরো বিল এখনও পাননি।
ব্রিজের কাজ করা এক ঠিকাদার নিউজ সোনারগাঁকে জানান, আমি গত ২ বছর আগে একটি ব্রিজের কাজ করেছিলাম। কাজ শেষে বিল জমা দেয়ার পর পিআইও জব্বার মিয়া বিল দিতে তালবাহানা শুরু করেন। পরে তিনি জানান তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ১০% কমিশন দিলে বিলটি পাওয়া যাবে। তখন ঠিকাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করলে নির্বাহী কর্মকর্তা ঠিকাদারকে তার রেফারেন্স দিয়ে বিলটি দিয়ে দেয়ার বলে দেন পিআইও কে। তখন ঠিকাদার নির্বাহী কর্মকর্তার কথা পিআইওকে বললে পিআইও জব্বার মিয়া বলেন, ইউএনও স্যার সবই জানেন। পারলে ওনাকে বলেন আমাকে ফোন দিতে। পরে ঠিকাদার বাধ্য হয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে তার বিলটি ছাড়িয়ে নেন।
এদিকে, গতকাল রবিবার একই বিষয় নিয়ে এক ঠিকাদার পিআইও কর্মকর্তা জব্বার মিয়ার কাছে বিল চাইতে গেলে তিনি তার কাছ থেকেও কমিশন নিয়ে বিল পরিশোধ করতে তালবাহানা করেন। পরে সকল ঠিকাদার একত্রিত হয়ে পিআইও’র রুমের দরজা লাগিয়ে তাকে উত্তম মাধ্যম দেন বলে প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান। এ ঘটনা নির্বাহী কর্মকর্তার কানে গেলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি সমাধানে জন্য পিআইওকে নির্দেশ দেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন পিআইও। এছাড়া তাকে লাঞ্চিত করার বিষয়টি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম নান্নু, আমি কলতাপাড়া ব্রিজের একটি কাজ করেছি গত দুই বছর আগে। সেই বিল এখনো পাইনি। উল্টো তাকে বিল পেতে ২ লাখ টাকা দিয়েছি। আমার মতো অনেক ঠিকাদার পিআইও অফিসের তত্বাবধানে কাজ করে দু বছর ধরে ঘুরছে। টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভে পিআইও অফিস ঘেরাও করে জব্বার মিয়াকে গালমন্দ করে মারতে গেলে আমি রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ইউএনও সাহেবকে খবর দেই।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ক কর্মকর্তা আব্দুর জব্বার জানান, ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম নান্নু কাজ শেষ না করে আমার কাছে বিল দাবি করে। আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়ায় তিনি ক্ষেপে যান। বিভিন্ন বিলের উপর কমিশনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে তার অফিসে সরাসরি দেখা করার জন্য বলেন।
পিআইও’কে লাঞ্চিত করার ঘটনায় সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।