নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মধ্যে চলা অভ্যন্তরিন কোন্দল ভুলে আবারও একসাথে রাজনীতি করার ঘোষনা দিয়ে কাল থেকে মাঠে নামছেন সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল। তাদের এ ঐক্যের ফলে তৃনমূল নেতারা পেয়েছেন স্বস্তি।
জানাগেছে, গত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার, কালাম ও মোশারফ হোসেন এক সাথে কাজ করে কায়সার হাসনাতকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করান। সেই নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয় মোশারফ হোসেন ও কালামের দ্বন্ধ। উপজেলা নির্বাচনে কায়সার হাসনাত দলীয় ভাবে সমর্থন দেন মাহফুজুর রহমান কালামকে। অপরদিকে, তার চাচা মোশারফ হোসেন স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। সে নির্বাচেন কায়সার কালামকে প্রথমে সমর্থন দিলেও পরে পরিবারের চাপে নিরব হয়ে যান। সেই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে আজহারুল ইসলাম মান্নান নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলেও পরে তিনি আওয়ামীলীগের চাপে নির্বাচন থেকে দুরে সরে যান। সেই নির্বাচনে মোশারফ হোসেন নির্বাচিত হলে কালাম ও তার সাথে শুরু হয় অভ্যন্তরিন দ্বন্ধ। এরপর কায়সার সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার শেষের দিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কায়সার হাসনাতের সাথে শুরু হয় কালামের দ্ধন্দ। সেই দ্বদ্ধের জের গত ৮ বছর ধরে তাদের নিজেদের মধ্যে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তারা নয় তাদের দ্বন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যেও। এ দ্ধন্ধের জের ধরে একে অপরের অঘোষিত শক্রুতে পরিনত হয়। তাদের নিজেদের অভ্যন্তরিন দ্ধন্ধের কারনে গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাতের পরিবর্তে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় কায়সারের চাচা মোশারফ হোসেনকে। অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় লিয়াকত হোসেন খোকাকে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন না করায় এ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টির জন্য। ফলে বিনা ভোটে জয়লাভ করেন লিয়াকত হোসেন খোকা। সেই নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোশারফ হোসেন আবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। তার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন মাহফুজুর রহমান কালাম ও আজহারুল ইসলাম মান্নান। সেই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ২জন প্রার্থী থাকায় মান্নান সহজেই নির্বাচনে জয় লাভ করে। এছাড়া এবার ২০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে মনোনয়ন দৌড়ে নামেন সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, মোশারফ হোসেন, মাহফুজুর রহমান কালাম ও এএইচএম মাসুদ দুলাল। এবারও তাদের দ্বন্ধের কারণে মহাজোটের মনোনয়ন পান লিয়াকত হোসেন খোকা। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয় কায়সার হাসনাত। কিন্তু উপজেলা আওয়ামীলীগ মহাজোটের সাথে থাকায় অনেক নাটকীয়তার পর কায়সারকে নির্বাচন থেকে দুরে সরে যেতে বাধ্য করেন প্রশাসন। সেই নির্বাচনে লিয়াকত হোসেন খোকা সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করায় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেন মোশারফ হোসেন ও মাহফুজুর রহমান কালাম। সেই নির্বাচনে লিয়াকত হোসেন খোকাসহ ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা কালামের পক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু নির্বাচনের পূর্ব মুর্হুতে তারা কালামের কাছ থেকে দুরে সরে গেলে নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়লাভ করেন মোশারফ হোসেন।
এদিকে নিজেদের মধ্যে চলমান দ্বন্ধ নিরসনে কোন উদ্যোগ না থাকলেও বাঁধ সাধে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি নিয়ে। হঠাৎ করে এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়াকে আহবায়ক ও ইঞ্চিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ন আহবায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটির ঘোষনা দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক। সেই কমিটি ঘোষনা পর নড়েচড়ে বসে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও মাহফুজুর রহমান কালাম। তারা আহবায়ক কমিটির বিপক্ষে গিয়ে অবস্থান নেন। কায়সার পন্থী ও কালাম পন্থীরা এ কমিটিকে প্রত্যাখান করে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে আহবায়ক কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তা প্রতিহতের ঘোষনা দেন। অবশেষে গত কয়েকদিন আগে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দারের মায়ের কুলখানীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীরকে কমিটির ব্যাপারে তিরস্কার করে কথা বলেন। এরপর থেকে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও মাহফুজুর কালাম নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একে অপরের সাথে দ্বন্ধ ভুলে গিয়ে ঐক্যের ডাক দেন। তাদের ৩জনের ডাকে সারা দিয়ে সবাই নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে কয়েক দফা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অতীতে কি হয়েছে সেটা আমাদের আর দেখার দরকার নাই। মোগরাপাড়া পাড়ায় আওয়ামীলীগকে রাখতে হলে নিজেদের ঐক্যের বিকল্প নাই। তাই আজ থেকে আমরা ভেদাভেদ ভুলে আগামী দিনের জন্য একটি সুন্দর আওয়ামীলীগ পরিবার গড়বো।
এ লক্ষ্যে আজ ২১ তারিখে গ্রেনেট হামলা দিবস উপলক্ষে নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেন। সেই মত বিনিময় সভায় কায়সার, মোশারফ হোসেন ও কালামের নেতাকর্মীরা একত্মা ঘোষনা করে আগামীকাল থেকে পুরো উপজেলায় শোডাউন করে বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশ গ্রহন করবেন বলে ঘোষনা দেন।