নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: সোনারগাঁ উপজেলা কমিটি গঠনের প্রায় ১৯ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি নিয়ে শুরু হয় নানান রকম আলোচনা ও সমালোচনা। এ কমিটিকে ঘিরে পূর্বেও কমিটি ও নতুন আহবায়ক কমিটি তারা দু’পক্ষই কমিটিকে বৈধ বলে তাদের নিজ নিজ কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার ঘোষনা দেয়। একের পর এক নানা ঘটনায় সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটি ও আহবায়ক নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে। সবশেষে মাহফুজুর রহমান কালামকে শোকজ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রেরিত চিঠিতেও বিভ্রান্তি আরও জোরালো হয়েছে। সেই চিঠিতে মাহফুজুর রহমানকে কালামকে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ এই চিঠি প্রেরণের প্রায় দেড় মাস আগেই সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল। কিন্তু কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তাদের অনুমোদিত সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি টেকেনি।
সূত্র বলছে, গত ১৫ জুলাই সোনারাগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের চলমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। একই সাথে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামকে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
আহবায়ক কমিটিতে সামসুল ইসলাম ভূইয়া আহবায়ক এবং সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমানকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়। এই আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর পরই জেলা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সেই সাথে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও বিদ্রোহ করে আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে মাঠে নামেন।
জানা যায়, সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে একের পর এক সভা সমাবেশ করে আসছিলেন আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে থাকা নেতারা। যার সূত্র ধরে গত ২ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে সোনারগাঁ জেলা অডিটোরিয়ামে সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতারা অংশ গ্রহণ করেন। সভার শুরুতে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম সকল নেতাকর্মীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কে বা কারা উপজেলা আওয়ামীলীগে আছেন এবং কারা মারা গেছেন ও কারা দল ছেড়ে অন্য দলে চলে গেছেন তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। পরে বর্ধিত সভার সভাপতি মোশারফ হোসেন ঝিমিয়ে পড়া সোনারগাঁ আওয়ামী লীগকে সচল করার লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আর এসকল তৎপরতায় প্রধান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, কে›ন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ- কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ মোল্লা বাদশা সহ হেভিওয়েট নেতারা। তারপরেও সোনারগাঁ আওয়মী লীগের আহবায়ক কমিটি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল তাদের অবস্থান থেকে সড়ে আসছিলেন না।
সবশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামপুর ইউনিয়নের ওটমা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা উপলক্ষে বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভার আয়োজন করেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু। যেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল। সেই কথা অনুযায়ী তারা উপস্থিতও হয়েছিলেন সম্মেলনস্থলে। কিন্তু বিদ্রোহী পক্ষের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে তাদেরকে বিনা সফলতায় ফিরে আসতে হয়। ফলশ্রুতিতে বিদ্রোহী কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই।
এদিকে চলতি বছরের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত চিঠিতে সংগঠনের আদর্শ ও শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে কালামের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার জবাব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর এই চিঠিটি ইস্যু করা হয় গত ৮ সেপ্টম্বর। সেই চিঠিতে মাহফুজুর রহমান কালামকে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিরোধ নিস্পত্তির দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন এবং সংগঠনের আদর্শ ও শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন নওফেল।