নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকমঃ তৃণমূল আওয়ামী লীগের কোনো স্তরের কমিটিতে অনৈতিক ও বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িত কাউকে আর নেতা না বানানোর কড়া নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকে গণভবনে ডেকে তিনি এ নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানিয়ে বলেন, তৃণমূলের কোথায় কাকে নেতা বানাতে হবে সে ধরনের একটি দিক-নির্দেশনাও শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর সভা ডাকা হয়।
সেখানে শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনার কথা নেতাদের অবহিত করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্পাদকম-লীর একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে জানান, সারা দেশে অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে যেসব নেতা বিতর্কিত হয়েছেন তাদের তালিকা করেছেন শেখ হাসিনা। সারা দেশে এ ধরনের অন্তত চার হাজার নেতার তালিকা তার হাতে রয়েছে। তালিকায় দুর্নীতিবাজ, মাদকসেবী এবং যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন নেতা আছেন। আছেন জামায়াত-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরাও। তারা যাতে দলের নেতা হওয়ার সুযোগ না পান সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্ক থাকতে সম্পাদকম-লীর সভায় বলা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ওবায়দুল কাদের।
বৈঠকে উপস্থিত সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, আজকের সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা অবহিত করা হয়েছে। সারা দেশে তৃণমূলের সম্মেলনে নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে শেখ হাসিনার চাওয়া কী তা বলা হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দল থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার এবারই উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাই যারা যারা তৃণমূলে সফরে যাচ্ছেন এবং সম্মেলন করছেন তারা যেন এ নির্দেশ মেনে চলেন। কেন্দ্রীয় কোনো নেতার ব্যক্তিগত পছন্দ কোনোভাবেই যেন নেতা বানানোর মানদ- না হয়Ñ সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখার কথাও বলা হয়েছে সম্পাদকম-লীর সভায়। তৃণমূলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকা-ের অভিযোগ আছে, মাদকের অভিযোগ আছে, অন্য দল থেকে এসে নেতা হয়েছেÑ তাদের দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেখানে ‘ক্লিন ইমেজের’ রাজনীতিকদের নেতা বানানোর কথা বলা হয়েছে। সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে চান শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্যে তিনি বিতর্কিতদের বাদ দিতে চান তৃণমূল থেকেই। সম্পাদকম-লীর ওই সদস্য আরও বলেন, দলের সংসদ সদস্যের প্রভাবেও কাউকে যাতে নেতা বানানো না হয় সে নির্দেশনাও দিয়েছেন নেত্রী। বলেছেন, নেতা বানাতে হবে রাজনীতির কথা, দলের কথা বিবেচনায় নিয়ে। সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য বলেন, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে যত দ্রুত সম্ভব সব জেলা, উপজেলা সম্মেলন শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে সভায়।
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় তাদের বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য। সূচনা বক্তব্যে নিয়মিত দলের সম্মেলন করে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ‘শুদ্ধি অভিযানে’ আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর বেশকিছু নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দও হয়েছে। এ অভিযান শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই চলবে এমনটাই বলে আসছেন ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ নেতারা।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর ২০তম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে টানা অষ্টমবারের মতো পুনরায় নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদ পান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যে পদে ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।