নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য হেমন্তকালের কাঁশবন অনেক প্রিয়। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর মানুষ শান্তির শিঃশ্বাস ফেলতে ছুটে যাচ্ছেন কাঁশবনে। বন্দু-বান্ধব ও পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন কাঁশবন। কাঁশফুলের সাদা ধবধবে ফুলে মন কেড়ে নেয় সকলের। তাইতো কাঁশবনের ফুলকে জড়িয়ে ধরে নানা অঙ্গিভঙ্গিতে ছবি না তুললেই যেন নয়। সে জন্য উপজেলার আশপাশের এলাকাসহ লোকজন ছুটে যাচ্ছেন ভাটিবন্দর সোনারগাঁ ইকোনোমি জোনে জেগে উঠা কাঁশবনে। আর এ সুযোগে গহীন কাঁশবনগুলোতে ঘটছে ইভটিজিং, শীলতাহানী, ধর্ষণ, মারামারি, ছিনতাই ও হত্যা চেষ্টার মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে মেঘনা নদী ঘেঁষে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সোনারগাঁ রির্সোট সিটি নামে একটি আবাসন প্রকল্প তৈরী করার জন্য পিরোজপুর উপজেলার ভাটিবন্দর এলাকায় কয়েকশত বিঘা জমি কিনে সেখানে বালু ভরাট শুরু করে। বর্তমানে সেটি কয়েক হাজার বিঘা জমিতে পরিনত হয়েছে। বালু ভরাট করে পতিত জমি হিসেবে ফেলে রাখায় সেখানে কাঁশ জম্মে বিশাল কাঁশবনে পরিনত হয়েছে। প্রথম দিকে মানুষ শখের বসে দুই একটা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট করার পর আস্তে আস্তে সেখানে মানুষ ঘুরতে যেতে শুরু করেন। একদিকে মেঘনা নদীর সুশীতল বাতাস অপরদিকে কাঁশবনের হেলানো দোলানো মনমাতানো ফুলে হৃদয় কেড়ে নেন সকলের। ফলে বর্তমানে ভাটিবন্দর কাঁশবনে প্রতিদিনই পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব ও প্রেমিক প্রেমিকার মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ের আনাগোনা কারণে কাঁশবনে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীর প্রবনতা বেড়ে গেছে। ফলে প্রতিদিনই কাঁশবনকে ঘিরে ইভটিজিং, মারামারি, শীলতাহানী, ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার মতো মারাত্মক অপরাধ প্রবনতা দিনে দিনে বেড়ে চলছে বলে জানিয়েছেন স্থাণীয়রা।
গত ২ দিন ধরে স্থানীয়দের বিভিন্ন অভিযোগেরর ভিত্তিতে সরেজমিনে ভাটিবন্দর এলাকায় নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদকরা ঘুরে ও স্থাণীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, ভাটিবন্দর কাঁশবনকে ঘিরে সম্প্রতিকালে অনেক লোকের সমাগম ঘটেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে লোকজনের সংখ্যা এতো বেড়ে যায় যে ভাটিবন্দর গ্রামের ভেতর দিয়ে হাটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া যুবকরা দলে দলে মোটর সাইকেল নিয়ে প্রবেশ করার কারণে স্থানীয়দের চলাচলে বিলম্বনার বেশী সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত লোকের কারণে কাঁশবনে বেড়ে যাচ্ছে অপরাধ প্রবনতা। তারা জানান, গত ১ মাসে এ কাঁশবনে ধর্ষণ, শীলতাহানী, মারামারি ও হত্যার চেষ্টাসহ অনেক অঘটনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তারা। কাঁশবনকে ঘিরে প্রতিদিনই এক শ্রেনীর কিশোর গ্যাং ও বখাটে ও ছিনতাইকারী আড্ডা দেন কাঁশ বনের ভেতরে। সুযোগ বুঝে তারা এসব অপরাধে জড়িয়ে যান। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা পড়েন বেশী সমস্যায়। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা নির্জন কাঁশবন পেয়ে ডুকে পড়েন গহীন জঙ্গলে। বনের ভেতর লোকজন না থাকার কারণে অনেক ছেলে-মেয়ে গহীন কাঁশবনের ভেতর অসামাজিক কাছেও জড়িয়ে পড়েন। আর সে সুযোগে বখাটে তাকে আটক করে লুটে নেন সর্বস্ব। সাথে ঘটান শীলতাহানী ও ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধ। এসব অঘটনের শিকার কিশোর ও কিশোরীরা লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে জানানোর সাহস করেন না। তবে স্থানীয়দের চোখ এড়াতে গিয়ে তারা তাদের কাছে ধরা পড়ে যান। অনেকে আবার স্থানীয় লোকজনকে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা শেয়ার করে প্রতিকারের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিশাল নির্জন কাঁশবনে অপরাধীদের ধরা স্থাণীয়দের সম্ভব হয় না। আবার অনেকে নিজেকে এসব অপরাধীদের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান। তারা চান না অন্যের জন্য নিজের শত্রুতা বাড়াতে। সেজন্য তারা এগিয়ে আসেন না ভুক্তভোগীদের সাহায্যার্থে। স্থাণীয়রা আরো জানান, কাঁশবনে কয়েকটি কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী গ্রুপ আধিপত্য বিস্তার নিয়েও করেন মারামারি। চলে একে অপরকে ঘায়েরের চেষ্টা। চলে হত্যা চেষ্টাও। স্থাণীয়রা জানান, অনেক সময় তারা ভালো ও ভদ্র পরিবার ও ছেলে মেয়ে দেখলে কাঁশবনে প্রবেশ করতে নিরউৎসাহিত করা চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকেই তাদের নিরউৎসাহের বিষয়টি ভালো চোখে দেখেন না। আর এ কারণে দিনে দিনে বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ প্রবনতা।
এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন জানান, কাঁশবনে অনাকাক্ষিত ঘটনার কোন অভিযোগ পাননি। তবে, অনেক সময় লোক মুখে শুনে থাকেন। অভিযোগ পেলে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।