নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: গত ২৮ মার্চ তারিখে সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশ গ্রহন করে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট গননাকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যালট পেপার ছিনতাই চেষ্টাকালে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় মারামারি। দুই পক্ষের মারামারিতে প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়রা জানান, সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে গত ২৮ মার্চ নতুন ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সাবেক সভাপতি আলী হোসেন একটি প্যানেলে নির্বাচন করেন। অপরদিকে, আবুবক্করে নেতৃত্বে আরেকটি প্যানেল দেন। আবুবক্করের প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা ও জামায়েত নেতা আবু জাফর। প্রতিটি প্যানেলে একজন মহিলাসহ ৫ জন প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়া শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একজন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন শিক্ষকরা। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে প্রথম থেকেই দুই প্যানেলের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল যা নির্বাচনের দিন দুই পক্ষের সংর্ষষে রূপ নেয়।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনকে ঘিরে আলী হোসেনের পক্ষে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন সাদেক, মোহাম্মদ এসহাক, তািইজুল ইসলাম মেম্বার, আমির হোসেন, আবুল কালাম আজাদ ও মহিলা প্রতিনিধি হামিদা কবির মুক্তা।
আবুবক্করের প্যানেলে নির্বাচন করেন ইকবাল প্রধান বাচ্চু, মনির হোসেন মেম্বার, ফাইজুল হাসান, আব্দুর হক ও মহিলা প্রতিনিধি রাজিয়া সুলতানা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে মুলত বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে নিয়ে দ্বন্ধ দেখা দেয়। তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের চাকরী মেয়াদ শেষ হবে ৩মাস পর। তার অবসরে যাওয়ার পর তার সহকারী শিক্ষক তোবারক হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বানানোর জন্য তিনি আলী হোসনের কাছে প্রস্তাব রাখেন। তখন আলী হোসেন জানান তিনি নতুন করে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিবেন। কিন্তু এতে নারাজ ছিলেন প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রধান। যদিও আলী হোসেন নির্বাচনের স্বার্থে প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে প্রধান শিক্ষককে রফিকুল ইসলামসহ সহকারী শিক্ষক কবির হোসেন, ফজলুল হক, তয়ন বাবু, লাবলী আক্তার তার পক্ষে নিয়ে আসেন। অপরদিকে আবুক্করের পক্ষে ছিলেন, সামসুন্নাহার, কামরুন্নাহার, আজিজ মাষ্টার, জাকির মাষ্টার, শাহজালাল মাষ্টার থাকেন আবু বক্করের পক্ষে।
এদিকে নির্বাচন ক্ষনিয়ে আসার পর প্রধান শিক্ষক আলী হোসেনের কথায় আস্থা রাখতে পারেননি। সেজন্য তিনি গোপনে তোবারক হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বানানোর জন্য গোপনে আবুবক্করের পক্ষে চলে যান। সে জন্য প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম আবুবক্কর প্যানেলকে জেতানোর জন্য অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে গোপনে কাজ করেন।
সুত্র জানান, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক জেলা পরিষদের সদস্য নুরে আলম খাঁন ও সাত খুন মামলার আসামী নুর হোসেনের ভাই জজ মিয়াসহ ৫জন ব্যক্তি স্কুলে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা স্কুলের শিক্ষক আজিজ, জাকির, শাহাজালাল, সামসুন্নাহার ও কামরুন্নাহারকে সাথে নিয়ে ভোট কক্ষে নিয়ে জোড় পুর্বক প্রকাশ্যে ভোট প্রদানে বাধ্য করেন। এসময় তারা দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে ব্যালট পেপার চান তখন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ব্যালট পেপার দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুলের বাহিরে থাকা দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্থক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। পরে নুরে আলম খাঁন ও জজ মিয়া দীর্ঘ সময় বাহিরে অবস্থান নেন।
ভোট শেষে ভোট গননার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে আবুবক্কর প্যানেলের মনির মেম্বার ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় দুপক্ষের মারামারি। দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের পরের দিন উভয় পক্ষ দুটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষের পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং সাইফুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন বাতিল ঘোষনা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।