নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: গত দুই দিন ধরে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের বাকবিতন্ডায় সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। গতকাল আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এক নারী নেত্রী মরনোত্তর কেষ্ট প্রদানকে কেন্দ্র করে এ বাকবিতন্ডা শুরু হয় যা এখনও পর্যন্ত চলছে। এদিকে নেতাদের বাকবিতন্ডাকে কেন্দ্র করে তাদের সমর্থকরা তার নেতাকে স্বচ্ছ ও ভালো বলে পোষ্ট প্রদান করছেন অপরদিকে তাদের প্রতিপক্ষ নেতাকে হেয় করে পোষ্ট কমেন্স দিচ্ছে। এতে করে গত দুদিন ধরে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
জানাগেছে, গতকাল আওয়ামীলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়ার সভাপতিত্বে সেই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অংশ গ্রহন করে আহবায়ক কমিটির যুগ্ন আয়বায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, আহবায়ক কমিটির সদস্য ডাক্তার আবু জাফর চৌধুরী বিরু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী, বারদি ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন বাবুল, সনমান্দি ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, বৈদ্যেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আলামিন সরকার, পৌর মেয়র প্রার্থী গাজী মুজিবুর রহমান, এডভোকেট ফাজলে রাব্বি, নাসরিন সুলতানা ঝরা, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার ও ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান রাসেদসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সবকিছু ঠিকঠাক মতো পালন করা হলেও বাদসাধে ডাক্তার আবু জাফর বিরু’র মা মনোয়ারা চৌধুরী নামে উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা পদে এক নারীকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া নিয়ে। মাহফুজুর রহমান কালামের দাবি মনোয়ারা বেগম কখনই আওয়ামীলীগের মহিলা সম্পাদিকা ছিলেন না। সেজন্য তিনি সভাস্থল ত্যাগ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের ক্ষোভের সাথে জানান বর্তমান সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ রাজাকারদের স্বীকৃতি দিচ্ছে। এছাড়া তিনি বর্তমান আহবায়ক কমিটিকে সাংগঠনিকভাকে দূর্বল দাবি করেন। মাহাফুজুর রহমান কালামের এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিকেল ৬টার দিকে আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ফেসবুক লাইভে এসে কালামের বক্তব্য মিথ্যা বলে দাবি করে বলেন, কালাম আওয়ামীলীগের কেউ না তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগ তাকে কোন অনুষ্ঠানে না ডাকলেও সে আসে। দলের কোন পদে নাই বিধায় সে হিংসায় দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এসব করছে। সামসুল ইসলামের এ বক্তব্যের পর আজ (২৪ জুন) বিকেলে মাহফুজুর রহমান কালাম ফের সাংবাদিকদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, দল তাকে বহিস্কার করছিল সত্য কিন্তু পরে দল তাকে ক্ষমা করে দলে অর্ন্তভৃক্ত করে জেলা আওয়ামীলীগে সদস্য পদে বহাল করে। তিনি আরো বলেন, এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া মনোয়ারা চৌধুরীকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে। সে সারাদিন শেষে গতকাল সন্ধ্যায় মনোয়ারা চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় তিনি সামসুল ইসলাম ভুইয়াকে বলেন আপনি বলেন আমি আওয়ামীলীগের কেউ না তাহলে মরনোত্তরের লিস্ট আমাকে দিয়ে চেক করিয়েছেন কেন? আমি যদি কেউ না হই তাহলে আপনি আমার কাছে কেন দলীয় কাগজটি তুলে দিয়েছেন তাহলে বুঝা যায় আপনি দলের গোপনীয়তা নষ্ট করেছেন। এসময় তিনি বলেন, আমি আওয়ামীলীগের কর্মী ছিলাম সারা জীবন আওয়ামীলীগে থেকে দলের সকল কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করবেন জানান।
এদিকে তাদের দুজনে ফেসবুকে বক্তব্য প্রদানের পর তাদের পন্থী নেতাকর্মীরা ফেসবুকে যার যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে একে অপরকে হেয় করে পোষ্ট প্রদান করছেন। যা দুইদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে অস্তিরতা বিরাজ করছে।
এদিকে মাহফুজুর রহমান কালাম ও আহবায়ক সামসুল ইসলাম ভুইয়ার বক্তব্যের রেস কাটতে না কাটতে সদ্য অনুষ্ঠিতব্য মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন নৌকার মনোনীত পরিজিত প্রার্থী হাজী শাহ মো. সোহাগ রনি।
আজ (২৪ জুন) শুক্রবার সকালে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে তার পরাজিত হওয়ার পিছনে সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, আহবায়ক কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও জামানকে দায়ী করে নৌকার বিরুদ্ধে তারা কাজ করেছছেন বলে অভিযোগ তুলে বক্তব্য প্রদান করেন। সোহাগ রনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, মোগরাপাড়ার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে এই পাঁচ নেতা সরাসরি অবস্থান নেয়ার কারনে নৌকা পরাজিত হয়েছে। তারা আওয়ামীলীগ পরিচয় দিলেও তারা মুলত ব্যক্তিলীগ করেন। তিনি আরো বলেন তারা স্বার্থের জন্য রাজনীতি করে দলের জন্য নয়। তারা নৌকা পেলে দল ভাল নৌকা না পেলে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী হয়ে যান যা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। আগামী সংসদ নির্বাচনে মোগরাপাড়া থেকে কোন নেতা নৌকা প্রতিক দাবি করলেও ইউপি নির্বাচনে নৌকা ডুবানোর কারণে নৌকার মনোনয়ন থেকে তারা বঞ্চিত হবেন সাথে তিনি আল্লাহর কাছে বিচার দাবি করেন এই নেতাদের বিরুদ্ধে।