নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকমঃ হুসাইন রবিউল,
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন নতুন কিছু নয়। তবে আমাদের দেশের মানুষ থার্টি ফার্স্ট নাইটের সাথে এখনো সেভাবে পরিচিত নয়। কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ও সংস্কৃতির সাথে থার্টি ফার্স্ট নাইট কোন ভাবেই খাপ খায় না। তার পরও কিছু অতি উৎসাহী মানুষ থার্টি ফার্স্ট পালনের জন্য বিভোর। তারা বাঙ্গালী সংস্কৃতি ভুলে ভীন দেশের সংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামেন। এ কথা সত্য যে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত তাই বলে এ বর্ষপঞ্জির নববর্ষ পালনের জন্য আমাদেরকে ভীন দেশী রীতি পালন করতে হবে এমনটা নয়। সোজা কথা যে রীতিনীতি আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে যায় না তা পালন করা আর কাকের পাখনায় ময়ুরের পাখনা লাগানো একই কথা।
বেশ কয়েক বছর যাবত দেখা যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের তরুণ তরুণীরা থার্টি ফার্স্ট পালনের নামে মধ্য রাতে উন্মাদ হয়ে নাচানাচি করছে, আতশবাজি ফোটাচ্ছে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মাদকের আসর বসাচ্ছে। মধ্যরাতের এ অশালীন রীতিনীতি ও বেহায়াপনা আমাদের সমাজ কোন ভাবেই সমর্থন করে না। নিজেদেরকে অতি মাত্রায় স্মার্ট হিসেবে জাহির করতে গিয়ে এ তরুণ তরুনীরা অনেকটা হাসির পাত্রে পরিনত হচ্ছেন।
বাঙ্গালী হিসেবে আমাদেরও একটি সমৃদ্ধ নববর্ষ আছে যা পহেলা বৈশাখ হিসেবে পরিচিত। আমরা কখনো কি পহেলা বৈশাখ মধ্যরাতে পালন করি? আমাদের পহেলা বৈশাখে কি অশালীন উন্মাদ নৃত্যের প্রর্দশনী হয়? পহেলা বৈশাখ পালনের জন্য কি মাদকের আসর বসে? যে মাটিতে আমাদের জন্ম , যে আলো বাতাসে আমাদের বেড়ে ওঠা সে সুস্থ সংস্কৃতির বাংলাদেশে তো এমন অশালীনতার ঠাঁই হতে পারে না। তবে কেন মিথ্যা মরিচিকার পেছনে অহেতুক ছুটে চলা। হয়তো অনেকেই বলবেন এখন বিশ্বায়নের যুগ শুধু বাঙ্গালী সংস্কৃতি ধরে বসে থাকলে চলবে না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তাই সবই পালন করতে হবে। আবার কেউ কেউ হয়তো বলবেন ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী সবকিছু করছেন থার্টি ফার্স্ট পালন করলে দোষ কোথায়? তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনাদের কথা ঠিক, বিশ্বের যেকোন ইতিবাচক বিষয় গ্রহন করা আপনার অধিকার। কিন্তু নেতিবাচকটা নয়। তবে বিশ্বায়নের নামে নিজের সংস্কৃতিকে গলা টিপে হত্যা করে সংস্কৃতির হত্যাকারী হিসেবে নাম লেখাবেন না। বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করার নামে নেতিবাচক বিষয়গুলো ধীরে ধীরে যদি সমাজে প্রচলিত হয়ে যায় তাহলে পুরো সমাজটাই একদিন পঁচে যাবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম হবে নিজস্ব সংস্কৃতিহীন ও মূল্যবোধহীন একটি প্রজন্ম। অপসংস্কৃতির ঝড়ে আক্রান্ত হবো আপনি আমি সবাই। সুতরাং আসুন আমরা নিজের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করি। এভাবে পরের সংস্কৃতিকে ধার করে যতই উৎসব উদযাপন করেন না কেন দিন শেষে আপনি কিন্তু বাঙ্গালিই থাকবেন। একটি ছুটো উদাহরণ দেই ছাগল যদি গায়ে রং মেখে হরিণ সাজে সেক্ষেত্রে হয়তো ক্ষণিকের জন্য তাকে হরিণের মতো দেখাবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাগল কিন্তু ভ্যা ভ্যা করেই ডাকবে।
লেখকঃ সম্পাদক, চারদিক