ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব বাল্যবিয়ের পক্ষে সমর্থন দেওয়ায় পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। এ চরাঞ্চলের মেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বাবা-মা বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। বিশেষ করে বিদেশফেরতরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে মেয়ের অভিভাবকরা তা লুফে নেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদেরই তুলে দেন পাত্রের হাতে। নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, এখানকার মানুষ বাল্যবিয়ে সম্পর্কে এখনো সচেতন নয়। ক্লাস সিক্সে ৭০জন মেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হলে এসএসসি পরীক্ষা দিতে দিতে টিকে থাকে মাত্র ৩৫জন। বাকি ৫০ ভাগেরই বাল্যবিয়ে হয়ে যায়। যারা টিকে থেকে এসএসসিতে অংশ নেয় তাদের অধিকাংশই থাকে বিবাহিত কিংবা সন্তানসম্ভবা। স্কুলের পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতন করছি কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নুনেরটেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ‘সুবর্ণগ্রাম’ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কবি শাহেদ কায়েস বলেন, নুনেরটেকে যেসব মেয়ের বাল্যবিয়ে হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এটা রোধ করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
নুনেরটেক এলাকার সচেতন মহলের দাবি, নুনেরটেকে কোনোভাবেই বাল্যবিয়ে ঠেকানোই যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে এ এলাকায় গড়ে দুই একটি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে থাকে।
গত ৯ জুন নুনেরটেক হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. জাকারিয়া তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ের বাল্যবিয়ের আয়োজন করেন। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়, কিন্তু পরে রাতের আঁধারে গোপনে ঠিকই এ বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর আগেও জাকারিয়া একই পন্থায় তার বড় মেয়ে ও ভাতিজিকে বাল্যবিয়ে দেন। শুধু হাই স্কুল নয় নুনেরটেকের প্রাইমারি স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের একই পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে। প্রাইমারির গ-ি না পেরুতেই অনেক শিশুকে বসতে হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে। এখানকার বেশির ভাগ বিয়েই হচ্ছে রেজিস্ট্রি ছাড়া।
সোনারগাঁ উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমা আক্তার বলেন, নুনেরটেক একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় আমরা বাল্যবিয়ের ব্যাপারে সময় মতো সঠিক তথ্য পাই না। তাই ওখানকার বাল্যবিয়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, নুনেরটেক নদীবেষ্টিত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাল্যবিয়ে রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাল্যবিয়েতে সহায়তা করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২১জুন ২০২০, রবিবার