নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম:
৪র্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত সোনারগাঁয়ে আওয়ামলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থক ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে নৌকা প্রতীকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের বাহিনীর সদস্য বুইট্টা কালাম ও ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী মাসুম চৌধূরী বাহিনী। ষড়যন্ত্রের শিকার সমাজচ্যুত ভূক্তভোগী পরিবারগুলো হচ্ছে, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি সুরুজ্জামান প্রধান, সিনিয়র সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম, তার ভাই ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ও সোনারগাঁও সরকারি কলেজ এন্ড বিশ্বিবিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব ইসলাম ওরফে সজিব। এর আগে গত ১৭ মার্চ সুরুজ্জামান প্রধানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে বুইট্টা কালাম ও ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী মাসুম চৌধূরী বাহিনীর সদস্যরা। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর বুইট্টা কালাম ও মাসুম চৌধূরী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে জোর পূর্বক অন্যায় ভাবে তাদের সমাজচ্যুত করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। পরাজিত ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুত করেও ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা। সমাজচ্যুত ৩ পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করতে তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপ-প্রচার ও ষড়যন্ত্রের করে আসছে ওই বাহিনী। ষড়যন্ত্রে ফাঁসাতে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জোরপূর্বক গণস্বাক্ষর নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা মোগরাপাড়া ইউনিয়নের খুলিয়াপাড়া দমদমা গ্রামের মৃত আব্দুল বাতেন প্রধানের ছেলে সুরুজ্জামান প্রধান দমদমা গ্রামের, মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে জহিরুল ইসলাম তার ছোট ভাই ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। ৩টি পরিবারসহ আশপাশের লোকজনকে নিয়ে এলাকায় বালু ভরাটসহ ঠিকাদারী ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ব্যবসার পাশাপাশি আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক নেতা হিসাবে তারা উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম সমর্থক। সুরুজ্জামান প্রধান সোনারগাঁও রিপোর্টার্স ক্লাবে সভাপতি ও মানবকন্ঠ পত্রিকার সোনারগাঁও প্রতিনিধি আবদুস ছাত্তার প্রধানের ছোট ভাই রাজনৈতিক হিসাবে সুরুজ্জামান মোগরাপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি, জহিরুল ইসলাম ওই ইউনিয়নের শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, এবং তার ছেলে সজিব ইসলাম ওরফে সজিব সোনারগাঁও সরকারি কলেজ এন্ড বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি। এর ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাহফুজুর রহমান কালাম আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলের হাইকমান্ড দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনকে। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এর মধ্যে একই গ্রামের জয়নাল আবেদীনের বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা মাসুম সরদার ওরফে চৌধুরী মাসুম মৃত হাশেম প্রধানের ছেলে আবুল কালাম ওরফে বুইট্টা কালামের অপরাধ কর্মকান্ড করতো। তাদের অপরাধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল সাংবাদিক আবদুস ছাত্তার প্রধানের ছোট ভাই সুরুজ্জামান প্রধান ও জহিরুল ইসলাম ও তার ভাই নজরুল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোশারফ হোসেনের সমর্থক হয়ে গত ১৭ মার্চ দুপুরে সুরুজ্জামান প্রধানেেক বাড়ি থেকে ডেকে এনে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে মাসুম ও বুইট্টা কালাম ও তার বাহিনীর সদস্যরা। তাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে সুরুজ্জামান প্রধান রক্তাক্ত জখম হন। এ ঘটনায় সাংবাদিক আবদুস ছাত্তার প্রধান বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকা এসে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে মাসুম চৌধুরী ও বুইট্টা কালাম। মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত বাড়ির সামনে দিয়ে অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহলা দিচ্ছে তারা। এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাহফুজুর রহমান কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকে পরাজিত হয়েছেন। তারপর থেকে মাসুম চৌধুরী ও বুইট্টা কালাম নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের লালিত ক্যাডার হিসাবে সাংবাদিক আবদুস ছাত্তার প্রধান ও তার ছোট ভাই সুরুজ্জামান ও জহিরুল ইসলাম ও তার ভাই ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামসহ ৩ টি পরিবারের উপর হামলার প্রস্তুতি নেয় কয়েকবার। কিন্তু সোনারগাঁ থানা পুলিশ তৎপর থাকায় তারা পিছু হটে। পরে মাসুম চৌধুরী ও বুইট্টা কালাম প্রভাব বিস্তার করে একক সিদ্ধান্তে আবদুস ছাত্তার প্রধান ও তার ছোট ভাই সুরুজ্জামান ও জহিরুল ইসলাম ও তার ভাই ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে সামজচ্যুত করে দেয়। এতে মাসুম চৌধুরী ও বুইট্টা কালাম ক্ষ্যান্ত হয়নি। ওই পরিবারকে গ্রামছাড়া করতে নানা ষড়যন্ত্রের পায়তারা করছে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্রের সদস্যরা। ইতিমধ্যে ভূমিদস্যু মাসুম চৌধুরী ও বুইট্টা কালাম সমাজচ্যুত ওই ৩ পরিবারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জোর পূর্বক গণস্বাক্ষর নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গ্রামবাসী জানান, মাসুম চৌধুরী ভুমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতির পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। মাসুমের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় ভূসিদস্যুতা ও চাঁদাবাজিসহ এক ডজন মামলা রয়েছে। বুইট্টা কালাম এলাকার একজন সন্ত্রাসী।
এ ব্যাপারে মাসুম চৌধুরী জানান, তাদেরকে সমাজচ্যুত সমাজের পঞ্চায়েত কমিটি। এখানে আমাদের কোন হাত নেই। এছাড়া তারা আমার ও কালামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে তার কোন ভিত্তি নাই।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনজন কুমার সরকার জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ষড়যন্ত্রের শিকার ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দায়ের করলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, সমাজে এখনো যে এ ধরনের সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে এটা ঠিক না। এ ধরনের জঘন্যতম ঘৃণিত কাজের নিন্দা জানাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করা ভাল মানুষের কাজ নয়।