নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ বিশ্বমানের। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, কাইল জেমিসন ও নিল ওয়াগনার- চার পেসার নিয়ে কিউইদের বোলিং আক্রমণ। তার মধ্যে আবার নিজেদের কন্ডিশনে খেলা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য ছিল কঠিন পরীক্ষা। যদিও ব্যাটিংয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গত দুই দিন কিউইদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন সফরকারী ব্যাটাররা। তাতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ফুটে উঠেছে অন্য বাংলাদেশের ছবি।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৪০১ রান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে করা ৩২৮ রান টপকে ৭৩ রানের লিড পেয়েছে মুমিনুল হকরা। যে দল ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতায় লজ্জায় মুখ লুকিয়েছিল, সেই তারাই নিউজিল্যান্ডে গিয়ে রাজত্ব করছে। এই সাফল্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। রান না দেখে বল খেলার দিকে মনোযোগ দেওয়াতেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
এই পথে এগিয়ে যেতে সাদমান-জয় ও শান্ত-জয়ের জুটি ভূমিকা রেখেছে সবচেয়ে বেশি। নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নামে। প্রথম উইকেটে ৪৩ রান পায় বাংলাদেশ। সাদমান আউট হওয়ার পর শান্তকে সঙ্গে নিয়ে জয় ১০৪ রানের জুটি গড়েন। মূলত এই জুটিতেই ভীত পেয়ে যান দলের বাকি ব্যাটাররা। আগের দিন পুরো দুই সেশন ক্রিজে থাকা জয় তৃতীয় দিন (সোমবার) সকালে আর ৮ রান যোগ করে সাজঘরে ফেরেন। ২২৮ বলে ৭ চারে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার।
মাত্রই দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামা জয় নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিসিবির পাঠানো এক ভিডিও বার্তায়। যেখানে এই ব্যাটার বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড দলের পেস বোলিং আক্রমণ বিশ্বসেরা। ওরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দল। আমি এক্ষেত্রে আমার স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করেছি। ওদের বোলারদের নাম না দেখে, বল দেখে খেলার চেষ্টা করেছি।’
পাঁচ সেশনে বাংলাদেশ দল খেলেছে ১৫৬ ওভার। দলের সবারই মনোযোগ ছিল কীভাবে ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকা যায়। স্কোরবোর্ডেও সেটির ছাপ। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেট হারিয়ে ৪০১ রান। গড় ২.৫৭। জয়ও সাবধানী ব্যাটিং করেছেন, তার স্ট্রাইটরেট ছিল ৩৪.২১। নিজের পরিকল্পনা নিয়ে বলেছেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল রানের দিকে না গিয়ে বেশি বেশি বল খেলার। আমি বেশি বল খেলতে পারলে রান এমনিতেই আসবে। আমার সঙ্গী যারা ছিল- সাদমান ভাই, শান্ত ভাই, মুমিনুল ভাই সবাই একই কথা বলেছে। এটাই ছিল উইকেটে শান্ত থাকার কারণ।’
দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামা জয় সবার সমর্থন পেয়েছেন, ‘দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দারুণ সমর্থন পেয়েছি। আমি যে নতুন দলে এসেছি সেই চাপটা অনুভব করিনি। টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই আমাকে সাহায্য করেছে।’
নতুন বলে কিউই কন্ডিশনে টিকে থাকাটা বেশ কঠিন ছিল। দুই ওপেনার সাদমান ও জয় মিলে ১৮ ওভার টিকে ছিলেন। নিজেদের মধ্যে কী পরিকিল্পনা ছিল সেটাও জানিয়েছেন তরুণ ওপেনার, ‘ব্যাটিংয়ের শুরুর দিকে আমার আর সাদমান ভাইয়ের পরিকল্পনা ছিল যে নতুন বলটা কীভাবে পুরনো করা যায় আর বল বাই বল খেলবো। আমরা যদি বেশি লম্বা চিন্তা করি তাহলে হয়তো সাকসেস নাও হতে পারি, কিন্তু বল বাই বল খেললে ওটাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি থাকে। সো, আমাদের পার্টনারশিপটা ভালোই হয়েছে। শান্ত ভাই আমাকে অনেক সময় শান্ত থাকতে বলেছেন। তারপর মুমিনুল ভাইয়ের সঙ্গেও আমার জুটি হয়, মুমিনুল ভাইও আমাকে একই কথাটাই বলেছেন।’
/আরআই/কেআর/