নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকমঃ
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের শেষ দিনে ফাউন্ডেশনে চত্বরে দশনার্থীদের মুখচারনায় গণমানুষের ঢল নামে। শুক্রবার সপ্তাহিক ছুড়ির দিনে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনাথীরা ভীড় জমাতে থাকে ফাউন্ডেশনের মুল ফটকে। দর্শনাথীরা সকাল থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে দল বেধে বনভোজেনের আয়োজন করে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানও ভীড় করে ফাউন্ডেশন চত্বরে। অতিরিক্ত দর্শনাথীদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতেও হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। এছাড়া জাদুঘরের প্রবেশ পথের দুটো পথই সরু থাকায় সকাল থেকে অকল্পনীয় যানজট পোহাতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। যানজটের কারণে বিলম্ভনায় পোহাতে হচ্ছে এখানে আসা দর্শনার্থীদের। এদিকে মেলার শেষ দিন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ উপলক্ষে সোনারতরী লোকজ মঞ্চে শিল্পী ছোট খালেক দেওয়ান, আনিসা, রুমা গোপ, স্বর্ণা মজুমদার, সীমা মজুমদার, শিল্পী এস এ আকাশ, তন্নী, ইমু, বৃষ্টি এবং জয়নুল পাঠশালার ছোট্ট সোনামণিগণ লোকসংগীত পরিবেশন করেন। সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মন্দিরা শিল্পীগোষ্ঠী এবং জেনিসাস থিয়েটারের প্রযোজনায় নাটক ‘একজন আমেনা’ উপস্থাপিত হয়।
দেশীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে লোকজ উৎসব উপলক্ষে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে বাংলাদেশ, নৌকা বাঙালির বাহন, সোনারগাঁওয়ের লোকাচার, বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্প শীর্ষক ৪টি সেমিনার উপস্থাপিত হয়।
লোকজ উৎসব উপলক্ষে গ্রাম-বাংলার কারুশিল্পজাত পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে ১৭০টি স্টল ছিল।
মেলার বিশেষ আকর্ষণে বাংলাদেশের ৬০ জন কারুশিল্পীর কর্মপরিবেশ ৩০টি স্টলে পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের সৃজনশীল প্রদর্শনী পর্যটকগণের কাছে উপস্থাপন করা হয়।
ফাউন্ডেশনের অন্যতম কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপী সমারোহপূর্ণ আয়োজন লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব পরিদর্শনে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি দর্শকের সমাগম ঘটে। তাঁরা মেলা ও জাদুঘরের প্রাচীন ঐতিহ্যম-িত নিদর্শন, ব্যবহারিক নিদর্শন, প্রাচীন আসবাব, তৈজসপত্র এবং ‘ভালোবাসার তামা-কাঁসা-পিতল’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনী অবলোকনে বাঙালি জাতিসত্তাকে উপলব্দি করার প্রয়াস পান।
আগত দর্শনার্থীগণ মেলা ও লোকজ উৎসবে প্রবহমান শৈশব-কৈশর ও গ্রাম-বাংলার মায়াময় রূপ খুঁজে পান। মাসব্যাপী দীর্ঘ আয়োজনে ছিল আবহমান বাংলার লোকজীবনের লুপ্তপ্রায় দৃশ্যাবলীর প্রদর্শনী। সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায়-বৌছি, এলাডিং বেলাডিং, রুমাল চুরি, ওপেনটি বায়স্কোপ শিরোনামে গ্রামীণ খেলাধুলা পরিবেশিত হয়।
লোকজ উৎসবের উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় অবহেলিত লোকসঙ্গীত শিল্পীদের প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যাশায় বাউল গান, কবি রবীন্দ্র গোপ রচিত গান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি, জারি-সারিগান, হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, শাহ আব্দুল করিমের গান, মাইজভা-ারী, মুর্শিদী গান, লোকনাটক, যাত্রাপালা, এবং হাজার বছরের ঐতিহ্য চর্যাগীতি পরিবেশন করা হয়।
লোকজ উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে আনিসা, সমীর বাউল, ¯িœগ্ধা রীতা, রুমা গোপ, অনিমা মুক্তি গমেজ, এস.এ.আকাশ, স্বর্ণা, সীমা, তন্নী, আঁখি, ছোট খালেক দেওয়ান, সাগর দেওয়ান, মধু, জাহিন, জাহিদ রিপন, আরিফ রহমান প্রমুখ শিল্পীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এছাড়া মাসব্যাপী মেলায় আনুমানিক ৩ কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী বিকিকিনি হয়েছে বলে জানা যায়।