রবিউল হুসাইন, সোনারগাঁ: সোনারগাঁয়ে অযত্ম আর অবহেলায় ধ্বংসের পথে মোঘল আমলে নির্মিত কোম্পানিগঞ্জের সেতু। স্থানীয়ভাবে এ সেতুটি পিঠাওয়ালীর সেতু হিসেবে পরিচিত। সোনারগাঁ উপজেলায় প্রবেশের প্রধান সড়কে অবস্থিত এ সেতুটির এখন জড়াজীর্ন অবস্থা।
সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড-ট্র্যাঙ্ক রোডের সোনারগাঁ উইমেন্স কলেজ এর সামনে বলেশ্বর খালের উপর নির্মিত এ সেতুটির নির্মান শৈলী সোনারগাঁয়ের পানাম সেতুর অনুরূপ। যথাযথ রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সেতুটির ইট সুরকি এখন খসে পড়ছে।
ঐতিহ্যবাহী এ সেতুটি সংরক্ষণের বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলায় প্রত্মতত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা প্রত্মতত্ব অধিদপ্তরের ভান্ডার রক্ষক মো. জাহাঙ্গির আলম জানান, ঐতিহ্যবাহী এ সেতুটি প্রত্মতত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন নয়। এটি প্রত্মতত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সরেজমিন সেতুটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সেতুটির নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া বলেশ্বর খাল অনেক আগেই স্থানীয়রা ভরাট করে ফেলেছেন। খালের উপর নির্মান করা হয়েছে মাকের্ট। সেই ভরাট জয়গার মধ্য দিয়ে প্রায় ৭/৮ বছর আগে সেতুটির দুই পাশে বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। পানাম নগরে অবস্থিত পানাম সেতুর সমসাময়িক সময়ে এ সেতুটি নির্মিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেতুটি নির্মানে জাফরি ইট ও চুন সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বছরের পর বছর এ সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে সংস্কার করার কারণে এ সেতুতে বর্তমান সময়ের ইট ও সিমেন্ট ব্যবহার করে প্রাচীন অবয়ব অনেকটাই বদলে ফেলা হয়েছে। ইংরেজ শাসন আমলে এ সেতুটি সংস্কার করে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ সেতুটির নাম দিয়েছিলেন কোম্পানিগঞ্জকা পুল। তবে স্থানীয়ভাবে এ সেতুটি পিঠাওয়ালীর সেতু হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। লোক মুখে প্রচলিত আছে স্থানীয় এক নিঃসন্তান পিঠা বিক্রেতা মহিলা নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে এ সেতুটি নির্মান করেছিলেন বলে এর নাম হয়েছে পিঠাওয়ালীর সেতু। তবে তথ্যের কোন ভিত্তি কিংবা সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সোনারগাঁয়ের ইতিহাস বোদ্ধা বাবুল মোশাররফ জানান, এ সেতুটিকে পিঠাওয়ালীর সেতু বলা একটি মুখরোচক গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। সোনারগাঁয়ের এ সেতুটি একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সেতু। সম্রাট শের শাহের আমলে এ সেতুটি নির্মান করা হয়েছে বলে ধারনা করা যায়। এ সেতুটি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সেতুটি সংরক্ষনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, এ সেতুটি একটি ঐতিহ্যবাহী সেতু। এটি প্রত্মতত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আনার জন্য লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া এ সড়কটি বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় রয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম আহমেদ প্রধান জানান, ছোট বেলা থেকে আমরা এ সেতুটি দেখে আসছি। ইদানিং শুনতে পাচ্ছি একটি মহল এ সেতুটিকে ভেঙ্গে ফেলে সড়কটি প্রশস্ত করার পায়তারা করছে। অথচ এ ঐতিহ্যবাহী সেতুটি রক্ষা করেও সড়ক প্রশস্ত করার সুযোগ রয়েছে।