নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকমঃ মায়ের কোলে শুয়ে শুনতাম, “আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা”। মায়ের পবিত্র মুখ হতেই মা ডাক শিখেছি আর চাঁদকে জেনেছি মামা হিসেবে। মাধ্যমিকে পড়ার সময় জেনেছি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”। যৌবনে প্রেমিকার মুখে শুনেছি ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা’ টাইপের গান।
একই চাঁদের কত রূপ। আহারে… কে জানতো যে করোনা ভাইরাসেরও অনেক রূপ থাকবে। আজ পর্যন্ত (১৭ এপ্রিল ২০২০ ইং তারিখ) টিভি মিডিয়ার রিপোর্ট (৭১ টিভি) অনুযায়ী এই অদৃশ্য মরণ ঘাতক এগারো (১১) বার রূপ পাল্টেছে।
যে ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকি, সেই বিল্ডিং এর ছাদে গিয়েছিলাম আজ। গরমে একটু আরাম পাবার জন্য। আহা, আজ দারুন পূর্ণিমা। আর সুন্দর দক্ষিণা বাতাস। সবকিছু লকডাউন। সেজন্য কিনা জানি না। আকাশটা আজ অনেক পরিষ্কার। ঢাকা শহরে এমন পরিষ্কার আকাশ আমি প্রথম দেখলাম। ঘর হতে বের হতে পারি না। কিন্তু মনের পৃথিবী তো খোলা, সেখানে ঘুরে বেড়াতে তো কোনো সমস্যা নেই। তাই বেরিয়ে পড়লাম আর স্বপ্নে উড়তে থাকলাম পূর্ণিমার আলোয়। অনেকদিন পর কোলাহল মুক্ত পরিবেশে চাঁদ দেখে নিজেকে মেলে দিলাম পৃথিবীর বুকে। আজ অনেকের স্মৃতি মনে পড়ছে। মায়ের কাছে আমি ছিলাম চাঁদ, প্রেমিকার কাছে আমি ছিলাম চাঁদের চেয়ে সুন্দর। কিন্তু করোনার কাছে আমি কি? সে তো আমাকে চাঁদ হিসেবে মানতে চাইছে না। সে তো সবাইকে আক্রমণের জন্য ছুটে আসছে। এর ভয়েইতো আমি আজ স্বেছায় নির্বাসনে (কোয়ারেন্টাইনে)।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তো চাঁদকে ঝলসানো রুটি বানিয়েছেন। মনে পড়ল খেটে খাওয়া মানুষের কথা। রিকশা চালক, দিন মজুর, ফকির, মিসকিন, হত দরিদ্রদের কথা। তাদের কাছে কি এই মূহূর্তে চাঁদটাকে ঝলসানো রুটির মতই মনে হচ্ছে? শুনেছি ক্ষুধার কষ্ট, বড় কষ্ট। আমার কাছেও তাই মনে হয়। নাম না জানা একজন বিখ্যাত মানুষের উক্তি মনে পড়ল, ‘একজন ক্ষুধার্ত মানুষ, একপাল নেকড়ে থেকেও ভয়ংকর’।
লকডাউন ছাড়া তো উপায় নেই। সরকার যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষদের সাহায্য-সহায়তা করছেন ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে। দরিদ্র শেণীর এই লোকগুলোকে এভাবে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর নিয়মটা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে বর্তমান সরকার খুবই আন্তরিক দেশের জনগণের জন্য।
চাঁদের দিকে তাকালাম। আবার দেখলাম। কিছুক্ষণ পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকলাম। কোনো এক উপন্যাসের কথা মনে পড়ল। চাঁদেরও নাকি কলঙ্ক আছে! আচ্ছা করোনারও কি কলঙ্ক আছে? চাঁদের কোনো কলঙ্ক নেই। আর কলঙ্ক থাকলেও তাঁর ¯িœগ্ধ আলোতে কেউ কলঙ্কিত হয় না, বরং মানুষ চাঁদকে খুব ভালোবাসে। চাঁদের না থাক কিন্তু করোনার যে কলঙ্ক আছে এর প্রমাণ তার এগারো (১১) বার রূপ পরিবর্তন করা। আমরা বহুরূপীকে অপছন্দ করি। আমরা অপছন্দ করলে কি হবে, করোনা ভাই (ভাইরাস) তো আমাদের ঠিকই ভালোবাসে। তাইতো সে এত কাছে আসে, একদম বুকের ভিতর। এন্ড্রু কিশোরের গান মনে পড়ল। আমার বুকের মধ্যিখানে, মধ্যিখানে হৃদয় যেখানে… । শুনেছি করোনা ভাইরাস নাকি সেখানেই বাস করে। করোনা আমাদের ভালবাসার (আঘাত করার) জন্য এগারো (১১) বার চরিত্র বদল করলেও আমরা কিন্তু একবারও আমাদের চরিত্র বদল করিনি। আমরা আমাদের অভ্যাসগুলো এখনো পরিবর্তন করিনি। আমরা যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলি, রাস্তা ঘাটে জনসম্মুখে নাক পরিস্কার করি, জনসম্মুখে ধূমপান করি (যা আইনত অপরাধ), পাশের বাসার গলিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলি, প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন ড্রেনে ছুড়ে ফেলি, অযথা রাস্তা-ঘাট, পুকুর, নদী-নালাতে ময়লা ফেলে অপরিচ্ছন্ন রাখি যা আমাদের উচিত নয়। নিজেও অপরিচ্ছন্ন থাকি। দেশটাকেও অপরিচ্ছন্ন করি।
আমরা আমাদের চরিত্র বদল করলে চরিত্রহীন করোনা আমাদের সুন্দর জীবনে আঘাত হানতে পারবে না।
চাঁদ কি মেঘের আড়ালে লুকালো। না না ঐতো দেখা যায়। লুকোচুরি করছে। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন সবার জীবন চাঁদের মত সুন্দর হোক। কলঙ্কহীন জীবন।
@সত্ত্বাধিকার সংরক্ষিত
লেখকঃ মো হাবিবুর রহমান
সহাকারী অধ্যাপক ও
বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর
ঢাকা, বাংলাদেশ